‘১ জানুয়ারি থেকেই সপ্তম পে কমিশন চালু করতেই হবে!’ রাজ্য সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি

ডিএ বকেয়ার বিতর্ক এখনও শেষ হয়নি, এরই মাঝে এবার পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের একাংশ সপ্তম পে কমিশনের দাবিতে সরব। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে দাবি উঠেছে, ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে সপ্তম পে কমিশন কার্যকর করতে হবে। এমনকি অন্তর্বর্তী রিপোর্ট দাখিলের জন্য সময়সীমাও নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ডিএ-র ২৫% বকেয়া ...

Published on:

সপ্তম পে কমিশন

ডিএ বকেয়ার বিতর্ক এখনও শেষ হয়নি, এরই মাঝে এবার পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের একাংশ সপ্তম পে কমিশনের দাবিতে সরব। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে দাবি উঠেছে, ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে সপ্তম পে কমিশন কার্যকর করতে হবে। এমনকি অন্তর্বর্তী রিপোর্ট দাখিলের জন্য সময়সীমাও নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ডিএ-র ২৫% বকেয়া এখনও মেটাতে না পারা সরকার এই নতুন দাবি কীভাবে সামলাবে, উঠছে প্রশ্ন।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পশ্চিমবঙ্গে সপ্তম পে কমিশন লাগুর দাবি কেন উঠছে এখনই?

বর্তমানে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা Ropa 2019 (Revised Pay Structure 2019) অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন, যা মূলত ষষ্ঠ পে কমিশনের আওতায় ছিল। এই পে কমিশনের মেয়াদ ১০ বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর-এ তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ঠিক সেই কারণেই এবার থেকেই সপ্তম পে কমিশন গঠনের দাবি তুলেছে কর্মী সংগঠনগুলি। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে, যদি সরকার এখনই নতুন কমিশন গঠন না করে, তাহলে আগের মতোই কয়েক বছরের দেরিতে বেতন সংশোধন হবে, যার ফলে বিপুল সংখ্যক কর্মী আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন।

বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে Join Now

স্মারকলিপিতে কী বলা হয়েছে?

রাজ্য সরকারের মুখ্যসচিব এবং অর্থসচিবকে পাঠানো স্মারকলিপিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে:

গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন Join Now
  • সপ্তম পে কমিশনের সুপারিশ ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করতে হবে।
  • ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বা অন্তর্বর্তী রিপোর্ট দাখিল করতে হবে।
  • যদি কোনও কারণে কমিশনের রিপোর্টে দেরি হয়, তাহলে মূল বেতনের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ হারে ইন্টারিম রিলিফ দিতে হবে।

এই দাবিগুলি স্পষ্টতই রাজ্য সরকারের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে, বিশেষ করে যখন এখনও পঞ্চম পে কমিশনের বকেয়া অর্থই মেটানো হয়নি।

ডিএ বকেয়ার মধ্যেই সপ্তম পে কমিশন?

বর্তমানে রাজ্যের উপর সবথেকে বড় চাপ মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ নিয়ে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, রাজ্য সরকারকে কর্মীদের বকেয়া ডিএ ২৫ শতাংশ দ্রুত মিটিয়ে দিতে হবে। কিন্তু সরকার সময় চেয়ে নিয়েছে।

এমন একটি সময়ে সপ্তম পে কমিশন গঠনের দাবি যে বাজেটগতভাবে সরকারের জন্য আরও চাপ তৈরি করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একদিকে যেখানে বর্তমান খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন, অন্যদিকে নতুন পে কমিশন মানে বাড়তি আর্থিক দায়।

কতটা আর্থিক বোঝা তৈরি হতে পারে?

রাজ্যে প্রায় ১০ লক্ষের বেশি কর্মচারী ও পেনশনভোগী রয়েছেন। তাঁদের জন্য সপ্তম পে কমিশনের বেতন বৃদ্ধি মানে সরকারের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার বাড়তি ব্যয়। এর সঙ্গে যদি ডিএ বকেয়া, পেনশন সংশোধন ও অন্যান্য ভাতা যুক্ত হয়, তাহলে আর্থিক বোঝা আরও বাড়বে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চাপ সামাল দিতে গেলে হয় রাজ্যকে কেন্দ্রীয় সাহায্য নিতে হবে, নয়তো রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পথ খুঁজে বের করতে হবে।

কেন্দ্র ও অন্যান্য রাজ্যে সপ্তম পে কমিশনের হাল

  • কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৬ সাল থেকেই সপ্তম পে কমিশনের আওতায় বেতন দিচ্ছে।
  • উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, তামিলনাড়ু-র মতো বড় বড় রাজ্যগুলো ইতিমধ্যেই সপ্তম পে কমিশন চালু করেছে।
  • পশ্চিমবঙ্গে এখনও ষষ্ঠ পে কমিশন চলছে এবং সেটা অনেক দেরিতে কার্যকর হয়েছিল (২০২০ সালে)।

এই দেরি ও তুলনামূলক কম সুবিধার কারণে রাজ্যের কর্মীদের মধ্যে একধরনের অসন্তোষ রয়েছে। এই অসন্তোষ থেকেই নতুন কমিশনের দাবি আরও জোরদার হচ্ছে।

সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের বক্তব্য

সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ একটি শক্তিশালী সংগঠন, যারা দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যের কর্মীদের স্বার্থে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এবার তাদের তরফে স্পষ্ট ভাষায় হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে—

“আরও দেরি হলে সরকারকে দায় নিতে হবে। কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি আর উপেক্ষা করা চলবে না।”

তাদের বক্তব্য, এবার আগেভাগেই সরকারকে উদ্যোগী হয়ে কমিশন গঠন করতে হবে, নয়তো বড় আন্দোলনের পথে হাঁটতে হবে।

কী হতে পারে আগামী দিনে?

পরিস্থিতি বিচার করলে আগামী কিছু মাস এই বিষয়ে বেশ উত্তেজনা ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। বিশেষ করে:

  1. যদি সুপ্রিম কোর্ট ডিএ বিতর্কে চূড়ান্ত রায় দেয় এবং তা সরকারের পক্ষে না যায়, তাহলে আর্থিক চাপ আরও বাড়বে।
  2. ষষ্ঠ পে কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সপ্তম কমিশন গঠনের কোনো প্রক্রিয়া শুরু না হলে কর্মী সংগঠনগুলো আন্দোলনে যেতে পারে।
  3. পঞ্চায়েত ও বিধানসভা ভোটের রাজনীতি এই দাবিকে আরও জোরদার করতে পারে।

কর্মী সংগঠনগুলির যুক্তিসমূহ (মূল পয়েন্ট)

যুক্তিবিশ্লেষণ
ষষ্ঠ পে কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৫ সালেসময়মতো নতুন কমিশন না গড়লে আবার দেরি
আগেভাগে কমিশন গঠন করলে আর্থিক চাপ পড়বে নাধাপে ধাপে আর্থিক পরিকল্পনা করা যাবে
কেন্দ্র ও অন্যান্য রাজ্যে সপ্তম পে কমিশন চালু হয়েছেপশ্চিমবঙ্গে এখনও পিছিয়ে থাকার অভিযোগ
দেরি হলে ইন্টারিম রিলিফ দাবিঅন্তত ৫০% হারে আইআর চাওয়া হচ্ছে

রাজ্য সরকারি কর্মীদের দাবির ঝড়ের মাঝে আবারও সামনে এল সপ্তম পে কমিশনের দাবি। যদিও বাস্তবের মাটিতে আর্থিক পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক, তবে কর্মীদের তরফে এই দাবি একেবারেই অযৌক্তিক নয়। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এই দাবির প্রভাব গভীর হতে পারে।