CNG Bus: ২০১৭-১৮ সালে রাজ্য পরিবহণ দফতর পরিবেশবান্ধব যানবাহনের ধারণা নিয়ে কলকাতায় চালু করেছিল ইলেকট্রিক বাস (Electric bus) পরিষেবা। লক্ষ্য ছিল শহরের বায়ু দূষণ কমিয়ে, যাত্রী পরিবহণে এক সবুজ ও টেকসই পথ বেছে নেওয়া। বেশ কয়েকটি সরকারি পরিবহণ সংস্থা—বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম—নতুন প্রজন্মের ৯ মিটার ও ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের ই-বাস নামিয়েছিল রাস্তায়।
বাসের ব্যাটারি ও মাইলেজ সমস্যা
বাস নির্মাতা সংস্থাগুলির দাবি ছিল, সম্পূর্ণ চার্জে এই বাসগুলি ১০০–১১০ কিমি পর্যন্ত চলতে পারে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, কয়েক মাস বা এক বছরের মধ্যেই ব্যাটারির ক্ষমতা কমে গিয়ে মাইলেজ নেমে এসেছে ৭০–৮০ কিমিতে। একটি ইলেকট্রিক বাসে (Electric bus) থাকে তিনটি ব্যাটারি, প্রতিটির দাম প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা। এই ব্যাটারিগুলির কার্যকারিতা কমে গেলে বাস কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ও যন্ত্রাংশ সংকট
রক্ষণাবেক্ষণ খরচ যেমন বেশি, তেমনই সমস্যা হয়েছে যন্ত্রাংশ সংক্রান্ত পরিষেবায়। কারণ, বাজারে হাতেগোনা কিছু সংস্থা এই যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে—ফলে একচেটিয়া মনোপলি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ব্যাটারি পাল্টানো ও যন্ত্রাংশ মেরামতের জন্য দীর্ঘ সময় ও অতিরিক্ত খরচ পড়ছে। ফলে পরিবহণ খাতে অর্থনৈতিক চাপ বাড়ছে।
নীতিগত সিদ্ধান্ত: আর ইলেকট্রিক বাস নয়
এই সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়ে সম্প্রতি নবান্নে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নতুন করে আর কোনো ইলেকট্রিক বাস (Electric bus) কেনা হবে না। বর্তমানে পরিবহণ নিগমের ডিপোগুলিতে থাকা ৮০টি ই-বাস ধাপে ধাপে পরিষেবা থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে বা সীমিত ব্যবহারে রাখা হবে।
সিএনজি বাসের দিকে ঝুঁকছে রাজ্য
পরিবেশবান্ধব বিকল্প খুঁজতে গিয়ে এবার সিএনজি চালিত বাসকেই বেছে নিচ্ছে রাজ্য সরকার। সূত্র অনুযায়ী, ইতিমধ্যে প্রায় ২০০টি সিএনজি (CNG Bus) চালিত এসি বাস কেনার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রতিটি বাসের দাম আনুমানিক ৪২–৪৪ লক্ষ টাকা। ব্যাটারিভিত্তিক জটিলতা না থাকায় এই বাসগুলি তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী ও টেকসই। সিএনজি বাস ১৫ বছর পর্যন্ত পরিষেবা দিতে সক্ষম বলে মনে করছেন পরিবহণ আধিকারিকরা।

আসন্ন দুর্গোৎসবে নামবে সিএনজি বাস
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের দুর্গোৎসবের আগেই কলকাতার রাস্তায় অন্তত ৩০–৪০টি সিএনজি চালিত বাস (CNG Bus) নামিয়ে দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে পরিবহণ ব্যবস্থায় ‘গ্রিন ফুয়েল’ এর ব্যবহার বাড়ানো হবে।
চ্যালেঞ্জ: পর্যাপ্ত সিএনজি স্টেশন নেই
তবে এই নতুন উদ্যোগের সামনে বড় বাধা হলো পরিকাঠামোগত ঘাটতি। এখনও পর্যন্ত কেবল কসবা ডিপোতে একটি সিএনজি পাম্প রয়েছে। টালিগঞ্জ, হাওড়া এবং বারাসতে নতুন স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবায়ন হয়নি। পর্যাপ্ত গ্যাস স্টেশন না থাকলে শহরে সিএনজি বাস (CNG Bus) পরিষেবা পূর্ণমাত্রায় সম্ভব হবে না।
কী হবে ইলেকট্রিক চার্জিং স্টেশনগুলির ভবিষ্যৎ?
কলকাতায় ইতিমধ্যেই ১৪টি ইলেকট্রিক বাস চার্জিং স্টেশন গড়ে উঠেছে, যার পেছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এখন নতুন ই-বাস না আসায় এই পরিকাঠামো গুলি অব্যবহৃত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ সরকারি অর্থ খরচ হলেও পরিকাঠামো থেকে মিলছে না প্রত্যাশিত রিটার্ন।
বিশেষজ্ঞদের মত
পরিবেশবিদদের একাংশ বলছেন, ইলেকট্রিক যানবাহনের ব্যবহার কমে যাওয়া পরিবেশ রক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে হতাশাজনক। তবে বাস্তব প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও ব্যয়বহুল রক্ষণাবেক্ষণ থাকলে নীতি পরিবর্তন যুক্তিসঙ্গত। তবে তাঁরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে টেকনোলজি আরও উন্নত হলে রাজ্য আবার ই-বাস পরিষেবায় ফিরবে।
রাজ্যের এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বোঝা যাচ্ছে, পরিবেশ ও অর্থনীতির মধ্যে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা চলছে। যদিও সিএনজি বাসের চূড়ান্ত সাফল্য নির্ভর করবে গ্যাস স্টেশন পরিকাঠামোর উন্নয়নের উপর। অন্যদিকে, ইলেকট্রিক বাস অধ্যায়ের ইতি টানায় রাজ্যের পরিবহণ পরিকল্পনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এখন দেখার, এই নতুন দিশা কতটা সফল হয় কলকাতার পরিবহণ ব্যবস্থায়।
📅 বিষয় | 🔗 লিংক/বিবরণ |
---|---|
🌤 আবহাওয়া আপডেট | ✅ প্রতিদিনের আবহাওয়ার খবর জানতে আমাদের ফলো করুন |
🔮 রাশিফল | ✅ দৈনিক রাশিফল ও জ্যোতিষশাস্ত্রভিত্তিক পরামর্শ |
💬 হোয়াটসঅ্যাপ | 👉 WhatsApp গ্রুপে যোগ দিন |
📢 টেলিগ্রাম | 👉 Telegram চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন |
📰 অন্যান্য আপডেট | ✅ View More |