২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর ভারতের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও সজাগ হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বড়সড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবার (৭ মে) দেশের ২৪৪টি জেলায় একযোগে মক ড্রিল (Mock Drill) অনুষ্ঠিত হবে। এই মহড়ার মূল লক্ষ্য হলো — নাগরিকদের বিমান হামলা ও যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কীভাবে সুরক্ষিত থাকা যায় তা শেখানো।
কী এই মক ড্রিল? | What is Mock Drill?
মক ড্রিল হল এক ধরনের পূর্বপ্রস্তুতির মহড়া, যেখানে কোনো বিপর্যয় বা যুদ্ধ পরিস্থিতির অনুকরণে সরকার ও প্রশাসন জনগণকে সচেতন ও প্রস্তুত রাখার জন্য নানা সতর্কতা ও নিরাপত্তা অনুশীলন করায়। এই ড্রিলের মূল উদ্দেশ্য হলো —
বিমান হামলার সময় করণীয় বোঝানো
সাইরেন ও ব্ল্যাকআউট ব্যবস্থা অনুশীলন
সরিয়ে নেওয়ার কৌশল (Evacuation Strategy) অনুশীলন
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলির সুরক্ষা নিশ্চিত করা
সাধারণ মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া
বাংলার কোন জেলায় হবে এই মহড়া? | Mock Drill in West Bengal Districts
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তালিকা অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলায় মোট ৩১টি মক ড্রিল পরিচালিত হবে। রাজ্যের এই মহড়া ৩টি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে করা হচ্ছে — সীমান্তবর্তী এলাকা, শিল্পাঞ্চল ও ঘনবসতিপূর্ণ শহর।
ক্রম | জেলা | মক ড্রিলের স্থান/শহর | ক্যাটাগরি |
---|---|---|---|
১ | কোচবিহার | দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ | সীমান্তবর্তী এলাকা |
২ | জলপাইগুড়ি | মাথাভাঙ্গা | সীমান্তবর্তী এলাকা |
৩ | দার্জিলিং | শিলিগুড়ি | শহরাঞ্চল |
৪ | কালিম্পং | কালিম্পং | সীমান্তবর্তী এলাকা |
৫ | আলিপুরদুয়ার | আলিপুরদুয়ার | সীমান্তবর্তী এলাকা |
৬ | মালদা | মালদা | ঘনবসতিপূর্ণ শহর |
৭ | রায়গঞ্জ | ইসলামপুর | সীমান্তবর্তী এলাকা |
৮ | বালুরঘাট | বালুরঘাট | সীমান্তবর্তী এলাকা |
৯ | ফারাক্কা | ফারাক্কা | শিল্প ও জলপ্রকল্প এলাকা |
১০ | খেজুরিঘাট | খেজুরিঘাট | নদী সংলগ্ন এলাকা |
১১ | জলঢাকা | জলঢাকা | সেচ ও জল প্রকল্প এলাকা |
১২ | চিত্তরঞ্জন | চিত্তরঞ্জন | শিল্পাঞ্চল |
১৩ | দুর্গাপুর | দুর্গাপুর | শিল্পাঞ্চল |
১৪ | আসানসোল | বার্নপুর-আসানসোল | শিল্পাঞ্চল |
১৫ | খড়গপুর | খড়গপুর | রেল শহর ও শিল্প এলাকা |
১৬ | কোলাঘাট | কোলাঘাট | বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা |
১৭ | হলদিয়া | হলদিয়া | বন্দর শহর |
১৮ | বর্ধমান | বর্ধমান | শহর ও কৃষি এলাকা |
১৯ | গ্রেটার কলকাতা | কলকাতা ও আশপাশ | মহানগর |
২০ | হাওড়া | হাওড়া | মহানগর |
২১ | হুগলি | হুগলি | শিল্প ও কৃষি এলাকা |
২২ | পূর্ব মেদিনীপুর | তমলুক ও সংলগ্ন | উপকূলীয় জেলা |
২৩ | পশ্চিম মেদিনীপুর | খড়গপুর ও সংলগ্ন | শিক্ষা ও শিল্প এলাকা |
২৪ | মুর্শিদাবাদ | বহরমপুর | সীমান্তবর্তী জেলা |
মক ড্রিলের সময় কী কী হবে?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রতিটি জেলাশাসকের নেতৃত্বে ড্রিল পরিচালিত হবে। নিচে দেওয়া হলো এই মক ড্রিলের সময় যে ব্যবস্থা গুলি নেওয়া হবে তার বিস্তারিত তালিকা:
প্রধান কার্যক্রমসমূহ:
বিমান হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো
→ সাধারণ মানুষকে আগাম সতর্ক করা হবে সাইরেনের মাধ্যমে।ব্ল্যাকআউট ব্যবস্থা
→ আলো নিভিয়ে সম্ভাব্য আক্রমণ রোধের অনুশীলন করা হবে।সরিয়ে নেওয়ার কৌশল (Evacuation Drill)
→ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে কীভাবে দ্রুত সরে যাওয়া যায় তার প্রশিক্ষণ।প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কর্মসূচি
→ স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, NCC ক্যাডেট, হোমগার্ড, সিভিল ডিফেন্স কর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেবেন।গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলির সুরক্ষা অনুশীলন
→ বিদ্যুৎকেন্দ্র, ব্রিজ, বাঁধ, ট্রান্সপোর্ট হাব সহ সমস্ত স্ট্র্যাটেজিক লোকেশন নজরদারির আওতায় আনা হবে।
প্রশাসনিক নির্দেশনা ও প্রস্তুতি
মঙ্গলবার (মক ড্রিলের আগের দিন) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়, যেখানে প্রতিটি জেলার ডিএম, পুলিশ সুপার, সিভিল ডিফেন্স অফিসার ও অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকদের প্রশিক্ষণ ও কৌশল নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।
👉 প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে —
নৌ ও বায়ুসেনা প্রধানদের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় পাল্টা আঘাতের প্রস্তুতি নিয়ে জোর দেওয়া হয়।
কে কে অংশ নিচ্ছে এই মহড়ায়?
এই ড্রিলে শুধুমাত্র প্রশাসনিক দপ্তর নয়, অংশ নিচ্ছেন সাধারণ মানুষও। অংশগ্রহণকারী দলের তালিকায় থাকছেন:
জেলা প্রশাসন ও পুলিশ
হোমগার্ড ও সিভিল ডিফেন্স বাহিনী
এনসিসি (NCC) ক্যাডেটরা
নেহরু যুব কেন্দ্র সদস্যরা
স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী
স্থানীয় ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন
সমস্ত অংশগ্রহণকারীকে সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে অংশ নিতে হবে।
কেন এত বড় মক ড্রিলের আয়োজন?
বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারত চাইছে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে দেশের প্রতিটি নাগরিক ও প্রশাসনিক বিভাগের প্রস্তুতি ও সমন্বয় সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী রাজ্য ও জেলা গুলিকে বিমান হামলা ও সন্ত্রাসী আক্রমণের সম্ভাবনা মাথায় রেখে প্রস্তুত রাখাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
কীভাবে আপনি প্রস্তুত থাকবেন?
নাগরিক হিসেবে আপনার করণীয়:
সাইরেন শুনলে দুশ্চিন্তা না করে আশ্রয় নিন।
প্রশাসনের নির্দেশ অনুসরণ করুন।
অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকুন – স্কুল, কলেজ বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে।
পরিবার ও প্রতিবেশীদেরও সচেতন করুন।
পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার এই সময়ে দেশের প্রতিটি জেলার নাগরিকদের অংশগ্রহণে এমন একাধিক মক ড্রিল দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দৃঢ়তা ও প্রস্তুতির পরিচয় বহন করে। বাংলার ২৩টি জেলার এই মহড়া যে শুধু সচেতনতা বৃদ্ধির একটি পদক্ষেপ নয়, বরং একটি বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও – তা বলাই যায়। দেশের সুরক্ষা এখন আর শুধু সেনার দায়িত্ব নয়, সাধারণ মানুষকেও সচেতন ও প্রস্তুত থাকতে হবে।
নানা ধরনের খবরের লেটেস্ট আপডেট পেতে এখনই ফলো করুন আমাদের Tollywood Online কে।
অবশ্যই দেখবেন: ITR: কবে থেকে শুরু হবে আয়কর রিটার্ন ফাইলিং? জানুন তারিখ ও সময়সীমা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য
📅 বিষয় | 🔗 লিংক/বিবরণ |
---|---|
🌤 আবহাওয়া আপডেট | ✅ প্রতিদিনের আবহাওয়ার খবর জানতে আমাদের ফলো করুন |
🔮 রাশিফল | ✅ দৈনিক রাশিফল ও জ্যোতিষশাস্ত্রভিত্তিক পরামর্শ |
💬 হোয়াটসঅ্যাপ | 👉 WhatsApp গ্রুপে যোগ দিন |
📢 টেলিগ্রাম | 👉 Telegram চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন |
📰 অন্যান্য আপডেট | ✅ View More |