২০২৫ সালে আবারও পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance/DA) নিয়ে চরম পর্যায়ে উঠল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিতর্ক। সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বকেয়া ডিএ-এর ২৫ শতাংশ মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলস্বরূপ, আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে।
কী বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট?
গত ১৬ মে, ২০২৫ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট এক অন্তর্বর্তী নির্দেশে জানায়—পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ (Dearness Allowance/DA)-এর ২৫ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। এই সময়সীমা শেষ হয়েছিল ২৭ জুন, শুক্রবার। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পাঁচ দিন পরেও অর্থ মেটানো হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ‘কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ় ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর পক্ষ থেকে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়।
রাজ্যের প্রতিক্রিয়া: আর্থিক সংকট ও সময়ের আবেদন
একই দিনে, অর্থাৎ ২৭ জুন, রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে একটি নতুন আবেদন দায়ের করে। তাতে বলা হয়, রাজ্য চরম আর্থিক সংকটে রয়েছে এবং এত অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। রাজ্যের দাবি, এই অর্থ মেটাতে হলে কেন্দ্র সরকারের অনুমতি নিয়ে ঋণ নিতে হবে, যা দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ। সেজন্য আরও ছয় মাস সময় চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, বকেয়া ডিএ (Dearness Allowance/DA)-এর ২৫ শতাংশ আদালতের তহবিলে জমা দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
কত টাকা বকেয়া?
সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোট বকেয়া পরিমাণ:
- রাজ্য সরকারি কর্মীদের: ₹১১,৮৯০.১৮ কোটি
- পেনশনভোগীদের: ₹১১,৬১১.৪৫ কোটি
- অন্যান্য স্বশাসিত সংস্থা, পঞ্চায়েত, পুরসভা ইত্যাদি: ₹১৮,৩৬৯.৩২ কোটি
- মোট বকেয়া: ₹৪০,০০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে
কেন্দ্র ও রাজ্যের ডিএ হারে পার্থক্য
বর্তমানে:
- কেন্দ্রীয় কর্মচারীরা পান: ৫৫% হারে ডিএ
- রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা পান: মাত্র ১৮% হারে
এই বিশাল পার্থক্য দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে রাজ্যের কর্মীদের মধ্যে। তারা দাবি করে আসছেন, কেন্দ্রের অনুরূপ হারে ডিএ (Dearness Allowance/DA) দিতে হবে। রাজ্য সরকার অবশ্য এ দাবি খারিজ করে বলেছে, ডিএ বাধ্যতামূলক নয় এবং এটি মৌলিক অধিকার নয়। রাজ্যের নিজস্ব নিয়মাবলি রোপা ২০০৯ অনুসারে ডিএ প্রদান করা হয়।
মামলাকারীদের বক্তব্য
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের পক্ষ থেকে মামলা লড়ছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ফিরদৌস শামিম ও গোপা বিশ্বাস। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ স্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করেছে, যা আদালতের অবমাননার শামিল। এখনও পর্যন্ত কাউকে এক পয়সাও বকেয়া ডিএ দেওয়া হয়নি।
তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় অযোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে বেতন ফেরত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু সেই অর্থ ফেরত না নিয়ে, সরকার এখন আর্থিক সংকটের কথা বলে ডিএ মেটাতে দেরি করছে—এতে দ্বিচারিতা স্পষ্ট।
রাজ্যের যুক্তি: কেন্দ্রীয় হারে ডিএ বাধ্যতামূলক নয়
রাজ্য সরকার দাবি করেছে, কেন্দ্র ও রাজ্যের আর্থিক কাঠামো ভিন্ন হওয়ায় তারা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে বাধ্য নয়। রাজ্য ‘রোপা ২০০৯’ অনুযায়ী মহার্ঘ ভাতা প্রদান করে থাকে। রাজ্যের আরও দাবি, ডিএ কোনওভাবেই কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার নয়। কিন্তু আদালতের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। শীর্ষ আদালত আগেই জানিয়েছিল, ডিএ একটি “সাংবিধানিক দায়িত্ব” এবং সময়মতো এর পরিশোধ কর্মচারীদের অধিকার।
পরবর্তী শুনানি: অগস্টে নতুন মোড়?
ডিএ সংক্রান্ত এই মামলার পরবর্তী শুনানি নির্ধারিত হয়েছে অগস্ট মাসে। সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের সময় চাওয়ার আবেদন গ্রহণ করবে কি না, তা এখন বড় প্রশ্ন। এর উপর নির্ভর করছে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ কর্মচারীর আর্থিক ভবিষ্যৎ।
পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মী ডিএ-র জন্য বছরের পর বছর ধরে আন্দোলন করে চলেছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ তাঁদের নতুন আশার আলো দেখালেও, রাজ্য সরকারের আর্থিক সঙ্কট সেই আশায় জল ঢেলেছে। এখন দেখার বিষয়, অগস্টে আদালত কী রায় দেয়। তবে ডিএ বিতর্ক যে আগামী দিনে রাজনীতির মঞ্চেও বড় ইস্যু হয়ে উঠবে, তা বলাই বাহুল্য।
অবশ্যই দেখবেন: লক্ষ্মীদেবীর কৃপায় ৪ রাশির ঘরে আসবে টাকা-পয়সা, আজকের রাশিফল ৩ জুলাই
📅 বিষয় | 🔗 লিংক/বিবরণ |
---|---|
🌤 আবহাওয়া আপডেট | ✅ প্রতিদিনের আবহাওয়ার খবর জানতে আমাদের ফলো করুন |
🔮 রাশিফল | ✅ দৈনিক রাশিফল ও জ্যোতিষশাস্ত্রভিত্তিক পরামর্শ |
💬 হোয়াটসঅ্যাপ | 👉 WhatsApp গ্রুপে যোগ দিন |
📢 টেলিগ্রাম | 👉 Telegram চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন |
📰 অন্যান্য আপডেট | ✅ View More |