রাম নবমী (Ram Navami) কি বাংলার উৎসব নয়? সোনামুখী থেকে রামরাজাতলা — ইতিহাস যা বলছে শুনলে চমকে যাবেন!

বাংলার আকাশে ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের রঙ। বছরের বিভিন্ন সময়ে মন্দিরে মন্দিরে, পাড়ার মোড়ে মোড়ে নানা ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাতেন বাঙালি। কিন্তু এই উৎসবগুলোর ইতিহাস আমরা কতটুকুই বা জানি? কখনও কখনও রাজনীতি এবং মতাদর্শের লড়াইয়ের মাঝে চাপা পড়ে যায় বহু প্রাচীন ঐতিহ্য। বিশেষ করে একুশ শতকের পশ্চিমবঙ্গে এক নতুন বিতর্কের কেন্দ্রে ...

Updated on:

রাম নবমী (Ram Navami) কি বাংলার উৎসব নয়? সোনামুখী থেকে রামরাজাতলা — ইতিহাস যা বলছে শুনলে চমকে যাবেন!

বাংলার আকাশে ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের রঙ। বছরের বিভিন্ন সময়ে মন্দিরে মন্দিরে, পাড়ার মোড়ে মোড়ে নানা ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাতেন বাঙালি। কিন্তু এই উৎসবগুলোর ইতিহাস আমরা কতটুকুই বা জানি? কখনও কখনও রাজনীতি এবং মতাদর্শের লড়াইয়ের মাঝে চাপা পড়ে যায় বহু প্রাচীন ঐতিহ্য। বিশেষ করে একুশ শতকের পশ্চিমবঙ্গে এক নতুন বিতর্কের কেন্দ্রে এসেছে রাম নবমী (Ram Navami)। কেউ বলছেন এ উৎসব ‘আমদানি’— আবার কেউ খুঁজে পাচ্ছেন বাংলার শিকড়ে এর গভীর সংযোগ।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

রাজনীতি বনাম রাম নবমী সংস্কৃতি (Politics vs Culture):

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাম নবমী (Ram Navami) উৎসবকে ঘিরে একে অপরকে কটাক্ষ করছে। শাসকদলের একাংশের মতে, এই উৎসব বাংলার নয়, বরং উত্তর ভারতের এক সংস্কৃতি যা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ বাংলায় আনা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে— আদৌ কি তাই? যে বাংলার নিজস্ব শক্তি আর শাক্ত চেতনার কথা বলা হয়, সেই বাংলার মাটিতে কি রামচন্দ্র (Lord Ram) কখনও পূজিত হননি? একটু ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলেই সামনে আসে এক ভিন্ন চিত্র।

বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে Join Now

বাংলার প্রাচীন রাম নবমী (Ram Navami) মেলা ও মন্দিরের নিদর্শন

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, বাংলায় বহু শতাব্দী ধরে রাম নবমী (Ram Navami) উদযাপনের নজির রয়েছে। বাঁকুড়ার সোনামুখীতে এই উপলক্ষে আজও বসে বিশাল মেলা। বাউল, কবিগান, লোকগান মিলিয়ে এখানে হয় এক অসাধারণ সাংস্কৃতিক সমাবেশ। এই মেলাটি আদতে বৈষ্ণবধর্ম, শাক্ততন্ত্র ও স্থানীয় সাঁওতালি সংস্কৃতির মেলবন্ধন। একইভাবে হুগলির গুপ্তিপাড়ার ১৮ শতকের রামচন্দ্র মন্দির (Ramchandra Temple) আজও বাংলার রামপূজা (Ram Worship) ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে।

গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন Join Now

বিভিন্ন জেলার রাম মন্দির (Ram Temple) ও ঐতিহ্যবাহী উদযাপন

শুধু গুপ্তিপাড়া বা সোনামুখী নয়, মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণা শহরেও রয়েছে প্রাচীন রঘুনাথ মন্দির (Raghunath Temple)। ওড়িশা ঘরানার দেউল স্টাইলে নির্মিত এই মন্দিরের ইতিহাস সপ্তদশ শতকের। একইভাবে হাওড়ার রামরাজাতলা এলাকায় ২৫০ বছরের পুরনো রাম মন্দির (Ram Temple) রয়ে গেছে। এখানে রাম নবমী (Ram Navami) উপলক্ষে চার মাসব্যাপী বিশাল উৎসব হয়, যেখানে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও অংশ নেন।

Read More: একসঙ্গে ৩ মাসের রেশন! বর্ষার আগে বড় ঘোষণা কেন্দ্রের, কারা কীভাবে পাবেন এই সুবিধা?

বাংলার রাজপরিবারগুলির রামপূজা (Ram Worship) রীতি

পশ্চিম মেদিনীপুরের নাড়াজোল রাজবাড়ীর ইতিহাস আরও চমকপ্রদ। এখানে রাজা মোহনলাল খান অযোধ্যা থেকে পাথর এনে রামচন্দ্র মন্দির (Ramchandra Temple) তৈরি করেছিলেন। সেই সঙ্গে শুরু করেছিলেন রাম রথযাত্রা (Ram Rath Yatra), যার রথ আজও সংরক্ষিত। বাংলার আরও বহু স্থানে — যেমন কলকাতার বিড়লা রাম মন্দির, দুর্গাপুর, পূর্ব বর্ধমান, পুরানো মালদা, মুর্শিদাবাদে — রাম মন্দির (Ram Temple) গড়ে উঠেছে বহু বছর আগে থেকেই।

রাজনীতি নয়, বাংলার নিজের ঐতিহ্যেই রয়েছে রাম নবমী (Ram Navami)

সবশেষে বলা যায়, বাংলার ইতিহাস ঘেঁটে স্পষ্ট বোঝা যায় যে রাম নবমী (Ram Navami) নতুন আমদানি নয়। বরং এটি বাংলার বহু শতাব্দী প্রাচীন হিন্দু সংস্কৃতিরই অংশ। মধ্যযুগীয় রাজা-রাজড়া থেকে স্থানীয় জমিদার — সকলেই এক সময়ে রামচন্দ্র (Lord Ram) কে আরাধ্য দেবতা হিসেবে পূজা করেছেন। অতএব এই উৎসবকে পুরোপুরি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দেওয়া হয়তো সত্যের অপমান। বরং বাংলার মাটি থেকেই উঠে এসেছে রামচন্দ্র বন্দনা (Ramchandra Worship) এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষের আন্তরিকতা ও বিশ্বাস।

Read More: ছুটির দিনেও মিলবে প্রকল্পের টাকা: পঞ্চায়েত দপ্তরের ‘সহজ সরল’ মোবাইল অ্যাপ আনছে নবান্ন