ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের শেষ কবে? প্লাবনের মধ্যে মমতার চমকপ্রদ ঘোষণা

Mamata Banerjee On Flood Situation: বর্ষা এখনও পুরোদমে সক্রিয়, কিন্তু ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলা জলমগ্ন। বিশেষ করে ঘাটাল, খানাকুল, জয়রামবাটি, কেশপুর, কামারপুকুর, মেদিনীপুর শহর এবং ঝাড়গ্রামের একাধিক ব্লকে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলবন্দি পরিস্থিতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার একটি উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠকে একাধিক নির্দেশ জারি করেন এবং DVC-র জল ছাড়াকে কেন্দ্র ...

Published on:

Mamata Banerjee On Flood Situation

Mamata Banerjee On Flood Situation: বর্ষা এখনও পুরোদমে সক্রিয়, কিন্তু ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলা জলমগ্ন। বিশেষ করে ঘাটাল, খানাকুল, জয়রামবাটি, কেশপুর, কামারপুকুর, মেদিনীপুর শহর এবং ঝাড়গ্রামের একাধিক ব্লকে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলবন্দি পরিস্থিতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার একটি উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠকে একাধিক নির্দেশ জারি করেন এবং DVC-র জল ছাড়াকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন (Mamata Banerjee On Flood Situation)

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

DVC-র জল ছাড়ার ফলে প্লাবনের আশঙ্কা

দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (DVC) গত ১৮ জুন থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত সময়ে প্রায় ২৭ হাজার লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, এই জল ছাড়া হয়েছে কোনও আগাম আলোচনা বা সমন্বয় ছাড়াই, যার ফলে রাজ্যের নিচু এলাকা ও গ্রামীণ অঞ্চলে হঠাৎ প্লাবন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে Join Now

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়,

গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন Join Now

“DVC নিজেরা বাঁচার জন্য জল ছেড়ে দিচ্ছে, আর বাংলার মানুষ জলবন্দি হয়ে জীবন হাতে করে দিন কাটাচ্ছেন। এর কোনও দায় নিচ্ছে না কেন্দ্র।”

এছাড়া তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্র আসামের বন্যা পরিস্থিতির জন্য সাহায্য পাঠালেও, বাংলার জন্য কোনও সহযোগিতা করছে না। এর মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন (Mamata Banerjee On Flood Situation)

ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে আশ্বাস

ঘাটাল অঞ্চলের মানুষ প্রতি বছরই বর্ষায় ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হন। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বহুদিন প্রতীক্ষিত ‘ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান’ বাস্তবায়নের কাজ চলছে এবং তিনি আশাবাদী যে আগামী দু’বছরের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ হবে

“ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কাজ চলছে। আমি আশা করছি, আগামী দু’বছরের মধ্যে এটি শেষ হবে। তাহলেই ওই অঞ্চলের মানুষ বারবার জলে ডুবে থাকার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন।”

এটি বাস্তবায়িত হলে ঘাটাল সহ পাশ্ববর্তী ব্লকগুলির দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা অনেকটাই কমে যাবে বলে আশা করছেন প্রশাসনিক মহল।

জরুরি নির্দেশ প্রশাসনের প্রতি

✅ প্রতিটি বন্যা কবলিত জেলায় অতিরিক্ত পর্যবেক্ষক

মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের চিফ সেক্রেটারিকে (CS) নির্দেশ দেন যে, প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় তিনজন করে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি বা সচিব পাঠানো হোক, যারা আগামী সাত দিন সেখানে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও পর্যালোচনা করবেন। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দ্রুত ত্রাণ, উদ্ধার এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

✅ জল জমা ঠেকাতে বিশেষ ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান

প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জল জমার প্রবণতা অনুযায়ী অঞ্চলভিত্তিক ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান তৈরির জন্য। উত্তরবঙ্গেও কোন এলাকায় কত দ্রুত জল জমে তা পর্যবেক্ষণ করে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে (Mamata Banerjee On Flood Situation)

কৃষকদের জন্য বিমা ও আর্থিক সহায়তার আশ্বাস

বন্যা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা। মুখ্যমন্ত্রী তাদের উদ্দেশ্যে বলেন,

“জমি জলের তলায় গেলেও বিমার টাকা মিলবে। কেউ চিন্তা করবেন না।”

তিনি ধান উৎপাদনে বাংলার সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন এবং জানান, প্রতি বছর রাজ্য সরকার কৃষকদের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে। ফলে এই দুর্দিনে সরকার তাঁদের পাশে থাকবে।

গ্রামীণ রাস্তা রক্ষায় কড়াকড়ি

গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, যদি কোনও স্থানীয় স্বার্থে রাস্তা ব্যবহার হয়, তাহলে তা পঞ্চায়েত দফতরের কড়া নজরদারির আওতায় আসবে। এই নির্দেশের মাধ্যমে রাজ্য সরকার বন্যার সময় রাস্তার ক্ষয় প্রতিরোধ করতে চায়, কারণ ভারী গাড়ির চাপে জলসিক্ত রাস্তা দ্রুত ভেঙে পড়ে।

গাছ লাগানোর আহ্বান ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টকে

মুখ্যমন্ত্রী বন দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন, জল নামার পরে উপযুক্ত জায়গাগুলিতে গাছ লাগানোর বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হোক। কারণ গাছ লাগানো শুধু পরিবেশ সংরক্ষণ নয়, বর্ষায় জল ধরে রাখার একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতিও।

জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ের বার্তা

মুখ্যমন্ত্রী বলেন,

“কে কত পেল, তা নিয়ে মন কষাকষি না করে সবাইকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।”

তিনি জানান, ২১ জুলাই পর্যন্ত মন্ত্রীরা ব্যস্ত থাকলেও স্থানীয় স্তরে জনপ্রতিনিধিরা যেন ত্রাণ ও সাহায্য পৌঁছানো নিশ্চিত করেন। রাজনৈতিক বিভাজন নয়, এই সময় জনসেবার গুরুত্ব সর্বাধিক

এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে যে জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতি, তা শুধুমাত্র প্রকৃতির খেয়াল নয়—এর পিছনে রয়েছে অব্যবস্থাপনা, DVC-র অসহযোগিতা ও দীর্ঘদিনের পরিকাঠামোগত ঘাটতি। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া প্রশাসনিক পদক্ষেপ, ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি এবং কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। তবে এই পরিকল্পনাগুলি বাস্তবে কতটা কার্যকর হয়, এবং কত দ্রুত মানুষ জলবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পান, তা ভবিষ্যতই বলবে।

অবশ্যই দেখবেন: অবশেষে ফিরলেন মহাকাশচারী শুভাংশু! পৃথিবীতে অবতরণের পর বের হলেন ক্যাপসুল থেকে