রাজ্যকে না জানিয়ে জল ছাড়ল DVC! তিন জেলায় বন্যার আশঙ্কা, আতঙ্কে দক্ষিণবঙ্গ

দক্ষিণবঙ্গে ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে চলতে থাকা টানা বৃষ্টির মধ্যেই পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধার থেকে বিপুল পরিমাণ জল ছেড়েছে DVC। এই জলছাড়ের ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে না জানানোয় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সেচ দফতর। ইতিমধ্যেই হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া—সহ একাধিক জেলার নিচু এলাকায় জারি হয়েছে বন্যা ...

Published on:

DVC

দক্ষিণবঙ্গে ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে চলতে থাকা টানা বৃষ্টির মধ্যেই পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধার থেকে বিপুল পরিমাণ জল ছেড়েছে DVC। এই জলছাড়ের ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে না জানানোয় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সেচ দফতর। ইতিমধ্যেই হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া—সহ একাধিক জেলার নিচু এলাকায় জারি হয়েছে বন্যা সতর্কতা। আবহাওয়া দফতরও জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন দক্ষিণবঙ্গে ফের ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

চলতি পরিস্থিতির মূল কারণ: মৌসুমী বায়ু ও DVC-র জলছাড়া

➤ টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড

গত কয়েকদিন ধরে নিম্নচাপ কেটে গেলেও দক্ষিণবঙ্গে সক্রিয় রয়েছে মৌসুমী বায়ু। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুর—সহ একাধিক জেলায় দফায় দফায় বৃষ্টি হচ্ছে। ঝাড়খণ্ডেও একই অবস্থা। ফলে দামোদর নদীর জলস্তর ক্রমেই বাড়ছে।

বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে Join Now

➤ DVC ছেড়েছে বিপুল জল

সূত্র অনুযায়ী, গত শুক্রবার ডিভিসি (DVC) একটানা ৫৫ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে, যা নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে ক্ষোভ চরমে। অভিযোগ, পূর্ব কোনও পূর্বসতর্কতা না দিয়ে এই বিপুল পরিমাণ জল ছাড়ার জেরে দক্ষিণবঙ্গে তৈরি হয়েছে নতুন করে বন্যার আতঙ্ক।

গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন Join Now

রাজ্যের ক্ষোভ: DVC-কে কড়া ই-মেল

➤ সেচ দফতরের তীব্র প্রতিক্রিয়া

DVC-এর জলছাড়া নিয়ে রাজ্যের সেচ দফতর একটি কড়া ই-মেল পাঠিয়ে জানিয়েছে, জল ছাড়ার আগে রাজ্যকে না জানানো অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ। এই ধরণের সিদ্ধান্তের ফলে হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমানের মতো দক্ষিণবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলি বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে।

➤ জলপথ কমিশনের রিপোর্টের উল্লেখ

সেচ দফতরের অভিযোগ, পাঞ্চেত জলাধারের জলস্তর ৪১১ ফুটের কাছাকাছি থাকলেও, সেই অবস্থায় এত পরিমাণ জল ছাড়ার যৌক্তিকতা নেই। কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে DVC-এর কাছ থেকে।

সম্ভাব্য প্রভাব: বন্যার ঝুঁকি কোন কোন জেলায়

➤ নিচু এলাকাগুলিতে প্লাবনের আশঙ্কা

আবহাওয়া এবং DVC-এর জলছাড় মিলিয়ে দক্ষিণবঙ্গে নিম্নাঞ্চলগুলিতে ফের ২০১৭ ও ২০২১ সালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি ফিরে আসার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে নিচু এলাকার কৃষিজমি, ঘরবাড়ি, রাস্তা সবই জলের তলায় চলে যেতে পারে।

➤ ক্ষতির মুখে কোন কোন জেলা

নিম্নবিত্ত ও চাষবাস নির্ভর অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে। এই মুহূর্তে যে জেলাগুলিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, সেগুলি হল:

  • হাওড়া: বাগনান, আমতা, ডোমজুড় অংশে জল জমার আশঙ্কা।
  • হুগলি: আরামবাগ, ধনেখালি, খানাকুল এলাকার নিচু গ্রামগুলিতে প্লাবনের সম্ভাবনা।
  • বাঁকুড়া: সোনামুখী, ওন্দা, বিষ্ণুপুর অংশে দামোদরের জল প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা।
  • পূর্ব বর্ধমান: কাটোয়া, কালনা, মেমারি অংশে নদী বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা।

অতীতের অভিজ্ঞতা: ২০১৭ ও ২০২১ সালের বন্যা

➤ ফিরে আসছে ভয়াবহ স্মৃতি

২০১৭ ও ২০২১ সালে ঠিক একইভাবে ডিভিসির জলছাড়া ও টানা বৃষ্টির জেরে একাধিক জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে গিয়েছিল। তখন হাজার হাজার মানুষকে ত্রাণ শিবিরে সরাতে হয়েছিল। বহু জমির ফসল নষ্ট হয়েছিল। এবারও একই ধরনের আশঙ্কা করছে রাজ্য প্রশাসন।

আবহাওয়া দফতরের সতর্কবার্তা

➤ ফের ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা

আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা জুড়ে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষত নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা—এইসব জেলায় বৃষ্টির চাপ বেশি থাকবে।

➤ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলিতে নজরদারি

এই অবস্থায় নিচু এলাকাগুলিতে জল জমে দীর্ঘক্ষণ থাকলে সংক্রামক রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। তাই সেগুলিতে অ্যান্টি-লার্ভা স্প্রে, ক্লোরিনেশন শুরু করতে বলা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে।

প্রশাসনের পদক্ষেপ ও বন্যা সতর্কতা

➤ বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুতি

রাজ্য প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যেই জলপথ সংলগ্ন নিচু এলাকা ও বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে:

  • পর্যাপ্ত ত্রাণ ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা রাখতে,
  • বিপর্যয় মোকাবিলা দল (NDRF ও SDRF) প্রস্তুত রাখতে,
  • নিকাশি ব্যবস্থা পরিষ্কার করতে,
  • স্কুল ভবন বা পঞ্চায়েত অফিসে অস্থায়ী ত্রাণ শিবির প্রস্তুত রাখতে।

➤ রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেও DVC-র জলছাড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি এই ধরণের বন্যাকে ‘ম্যান-মেড’ বা মানুষসৃষ্ট বিপর্যয় বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। এবারেও মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—DVC-র যদি এই জলছাড়া অব্যাহত থাকে, তবে রাজ্যকে চরম দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হবে।

সবমিলিয়ে, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক। আবহাওয়ার প্রাকৃতিক রূপ এবং প্রশাসনিক অবহেলার সংমিশ্রণে ফের বড়সড় দুর্যোগের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে দক্ষিণবঙ্গে। রাজ্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের তরফে বন্যা প্রতিরোধে যতই প্রস্তুতি থাকুক না কেন, DVC-এর পূর্ব সতর্কতা ছাড়া জলছাড়া এই বিপর্যয়কে রোখা মুশকিল। তাই এখনই প্রয়োজন সমন্বিত প্রশাসনিক পরিকল্পনা এবং কেন্দ্রীয় সংস্থার সহযোগিতা

অবশ্যই দেখবেন: ৩২,০০০ চাকরি থাকবে না উঠে যাবে? হাইকোর্টে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বড় আপডেট