বর্তমান সময়ে বাংলা সিনেমা এক নতুন মোড় নিয়েছে। বাণিজ্যিক বিনোদনের পাশাপাশি ঐতিহাসিক ও নারীকেন্দ্রিক সিনেমার দিকে মনোযোগ দিয়েছে পরিচালক-প্রযোজকেরা। সেই ধারাতেই রাজ চক্রবর্তীর নতুন ছবি হিসেবে আসছে “রানি ভবশঙ্করী”(Rani Bhavashankari)। আর এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে দেখা যাবে অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়কে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবির ফার্স্ট লুক প্রকাশ্যে আসতেই তা ভাইরাল হয়ে গেছে।
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ‘নারী বীরত্ব’ নির্ভর গল্প খুবই কম। তাই ভবশঙ্করীর মতো এক ঐতিহাসিক নারী চরিত্রকে বড় পর্দায় তুলে আনা নিঃসন্দেহে একটি সাহসী পদক্ষেপ। কিন্তু কে এই রানি ভবশঙ্করী? কেন তাকে বলা হয় “রায় বাঘিনী”? চলুন জেনে নেওয়া যাক তাঁর বীরত্বগাঁথা।
কে ছিলেন রানি ভবশঙ্করী? | Rani Bhavashankari Biography in Bengali
রানি ভবশঙ্করী (Rani Bhavashankari) ছিলেন ভূরিশ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্যের রানি, যা বর্তমানে হাওড়া ও হুগলি জেলার অংশ। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ভবশঙ্করী চৌধুরী নামে। তাঁর পিতা ছিলেন দুর্গ রক্ষাকর্তা ও সেনাপতি, যিনি রাজ্যের তরুণদের যুদ্ধবিদ্যায় প্রশিক্ষণ দিতেন। ছোটবেলা থেকেই ভবশঙ্করী শেখেন তলোয়ার চালানো, ঘোড়ায় চড়া এবং শিকার। তবে ভবশঙ্করী শুধু যুদ্ধবিদ্যায় নয়, শাস্ত্রজ্ঞানেও ছিলেন পারদর্শী। সমাজনীতি, ধর্ম, দর্শন ও কূটনীতি — সব বিষয়েই তিনি ছিলেন শিক্ষিত। এর ফলে পরবর্তীকালে তিনি একাধারে রানি, সেনাপতি ও দক্ষ প্রশাসক হয়ে উঠেছিলেন।
অবশ্যই দেখবেন: TRP তালিকায় চমক! পরশুরাম-জগদ্ধাত্রী শীর্ষে, পরিণীতা বড় ধাক্কায়!
রাজা রুদ্রনারায়ণের সঙ্গে পরিণয় এবং রানি হয়ে ওঠার যাত্রা
যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শিতা ভবশঙ্করীকে(Rani Bhavashankari) বিশেষ সম্মান এনে দেয়। একদিন শিকারে গিয়ে তাঁর দুর্ধর্ষ তলোয়ার চালানো দেখে মুগ্ধ হন ভূরিশ্রেষ্ঠ রাজা রুদ্রনারায়ণ। তিনি ভবশঙ্করীকে বিবাহের প্রস্তাব দেন এবং গড় ভবানীপুর দুর্গের কাছে বিবাহ সম্পন্ন হয়। এর পরেই তিনি রানি ভবশঙ্করী নামে পরিচিত হন।
রানি ভবশঙ্করী (Rani Bhavashankari) ছিলেন দেবী চন্ডির অগ্রণী ভক্ত। বিবাহের পর তিনি রাজপ্রাসাদের পাশে এক চন্ডি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। আজও হাওড়া ও হুগলির বিভিন্ন অঞ্চলে যে চন্ডি পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়, তার সূচনা হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই।
সামরিক কৌশলে নারীদের অন্তর্ভুক্তি এবং দুর্গ নির্মাণ
রানি ভবশঙ্করী প্রথম বাংলা ইতিহাসে নারী সেনা গঠনের সূচনা করেন। তিনি প্রতি পরিবার থেকে অন্তত একজনকে যুদ্ধ প্রশিক্ষণের নির্দেশ দেন। তার ফলে বিপদে পড়লে প্রতিটি নাগরিকই সামরিক দায়িত্ব পালন করতে পারত। তিনি খানাকুল, ছাউনপুর, তমলুক, আমতা, উলুবেড়িয়া ও নস্করডাঙ্গায় একাধিক দুর্গ গড়ে তোলেন।
অবশ্যই দেখবেন: বিদ্যুৎ বিল একেবারে শূন্য! প্রতি মাসে ১২৫ ইউনিট ফ্রি দেবে কেন্দ্র সরকার
নারীদের নিয়ে গঠিত এই সেনাদল তিনি নিজেই প্রশিক্ষণ দিতেন। সাম্রাজ্যের রক্ষণাবেক্ষণ এবং সীমান্ত সুরক্ষায় তাঁর গৃহীত পদক্ষেপ বাংলার ইতিহাসে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
গৌড়ের পাঠান বাহিনীর বিরুদ্ধে জয় | Tribeni Battle Against Pathan Sultan
তৎকালীন বাংলার এক বিশাল শাসন অঞ্চল ছিল গৌড়, যার শাসক ছিলেন সুলেমান কারি। পাঠান বাহিনী বিভিন্ন অঞ্চলে লুটপাট চালাতো। রানি ভবশঙ্করীর (Rani Bhavashankari) পরামর্শে রাজা রুদ্রনারায়ণ ও ওড়িশার রাজা মুকুন্দদেবের মধ্যে জোট গঠিত হয়। এরপর ত্রিবেণীতে সুলেমান কারিকে পরাজিত করা হয়। সুলেমানের মৃত্যুর পর তার পুত্র দাউদ খান মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য রুদ্রনারায়ণের সাহায্য প্রার্থনা করেন। প্রত্যাখ্যাত হলে তিনি ভূরিশ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্য আক্রমণ করেন। ভবশঙ্করীর নেতৃত্বে সেই আক্রমণ প্রতিহত হয়।
রাজা রুদ্রনারায়ণের মৃত্যুর পর নারীনেতৃত্ব
ত্রিবেণীর যুদ্ধে জয়ের পর রানি ভবশঙ্করী এক পুত্রের জন্ম দেন। কিন্তু পুত্রের বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর, তখন রাজা রুদ্রনারায়ণ মৃত্যুবরণ করেন। কুলপুরোহিত রানিকে রাজ্য পরিচালনার অনুরোধ জানান। তিন মাস প্রস্তুতির সময় নিয়ে তিনি রাজ্য ত্যাগ করেন এবং সেনাপতি চতুর্ভুজ চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে রাজ্য রাখেন।
এই সুযোগে চতুর্ভুজ ষড়যন্ত্র করে পাঠান সেনার সহযোগিতায় রানিকে হত্যার ছক কষে। কিন্তু রানি ভবশঙ্করী সতর্ক ছিলেন। পাঠানদের আক্রমণে তাঁর মহিলা সেনা প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং অসমান খান পালিয়ে যায়। প্রমাণের অভাবে চতুর্ভুজকে শাস্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি।
পুনরায় রাজ্য পরিচালনায় প্রত্যাবর্তন ও রাজ্যাভিষেক
রানি রাজ্যে ফিরে এসে সেনাপতির পদ থেকে চতুর্ভুজকে সরিয়ে কৃষ্ণ রায়কে নিয়োগ দেন। রাজ্যের প্রতিটি কোণে তিনি সামরিক প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করেন এবং নিয়মিত মনিটরিং করেন। এরপর মাশুরি গ্রামের ভবানী মন্দিরে তাঁর রাজ্যাভিষেকের দিন ঠিক হয়।
অবশ্যই দেখবেন: সেনার মাইনে বাড়ছে? কর্নেল সোফিয়া কুরেশির বেতনের হদিশ মিলল অবশেষে!
এই সময় আবারও চক্রান্ত হয় চতুর্ভুজ ও অসমান খানের তরফে। রাতের অন্ধকারে খানাকুলে পাঠান বাহিনী আক্রমণ চালায়। রানির নেতৃত্বে সেনারা এই আক্রমণ প্রতিহত করে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাঠান সেনা পরাজিত হয় এবং রানি ভবশঙ্করীর রাজ্যাভিষেক সম্পন্ন হয়।
আকবরের স্বীকৃতি ও ‘রায় বাঘিনী’ উপাধি
রানি ভবশঙ্করীর বীরত্বের কথা মুঘল সম্রাট আকবর পর্যন্ত পৌঁছায়। পাঠানদের হাতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত মোঘল সাম্রাজ্য এই বিজয়কে মিত্রতার প্রেক্ষিতে দেখে। সম্রাট আকবর মানসিংহকে পাঠান রাজার সাথে চুক্তি সম্পন্ন করতে এবং ভূরিশ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্যকে সার্বভৌম স্বীকৃতি দেন। এছাড়া রানি ভবশঙ্করীকে ‘রায় বাঘিনী’ উপাধিতে সম্মানিত করেন। এই উপাধি তাঁর দুর্দান্ত সাহস, নেতৃত্ব ও নারীবাহিনীর অগ্রদূত হিসেবে তাঁর কীর্তির স্বীকৃতি।
টলিউডে রানি ভবশঙ্করী: শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক চরিত্রে আত্মপ্রকাশ
রানি ভবশঙ্করীর (Rani Bhavashankari) এই গৌরবময় ইতিহাস এখন বাংলা সিনেমার পর্দায় আসতে চলেছে রাজ চক্রবর্তীর প্রযোজনায়। শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় এই প্রথমবারের মতো একটি পূর্ণাঙ্গ ঐতিহাসিক নারী বীরাঙ্গনার চরিত্রে অভিনয় করছেন। এই সিনেমা শুধু এক বাঙালি রানি বা যুদ্ধের গল্প নয়, এটি বাংলার হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস, নারীবাদের শক্তি ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের পুনর্জাগরণ।
রানি ভবশঙ্করী – ইতিহাসের পাতায় এক বাঙালি রূপকথা
বহুদিন ধরেই বাংলা ইতিহাসে রানি ভবশঙ্করীর (Rani Bhavashankari) মতো চরিত্রকে উপেক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি শুধু একজন রানি ছিলেন না; ছিলেন শিক্ষিতা, যুদ্ধবাজ, কৌশলী ও সংস্কারপন্থী। বাংলার সংস্কৃতি, ধর্মীয় ঐতিহ্য, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের বিকাশে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
আজ যখন টলিউড নতুন ধারায় পদার্পণ করছে, তখন এই রকম এক ঐতিহাসিক চরিত্রকে পর্দায় তুলে ধরা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। “রানি ভবশঙ্করী” সিনেমা শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাংলার এক বিস্মৃত গৌরব ফিরিয়ে আনার মাধ্যম হয়ে উঠবে।
অবশ্যই দেখবেন: কবে নামছে বর্ষা দক্ষিণবঙ্গে? মৌসম দফতরের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ
📅 বিষয় | 🔗 লিংক/বিবরণ |
---|---|
🌤 আবহাওয়া আপডেট | ✅ প্রতিদিনের আবহাওয়ার খবর জানতে আমাদের ফলো করুন |
🔮 রাশিফল | ✅ দৈনিক রাশিফল ও জ্যোতিষশাস্ত্রভিত্তিক পরামর্শ |
💬 হোয়াটসঅ্যাপ | 👉 WhatsApp গ্রুপে যোগ দিন |
📢 টেলিগ্রাম | 👉 Telegram চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন |
📰 অন্যান্য আপডেট | ✅ View More |