ভারত সরকারের অধীনস্থ টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল (BSNL) এবার দেশের ডিজিটাল পরিকাঠামোকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে চলেছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সংস্থাটি এবার 5G পরিষেবা চালুর দিশায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই দেশের একাধিক শহরে পরীক্ষামূলক 5G নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়েছে এবং তারই পাশাপাশি চলছে 4G পরিকাঠামো বিস্তারের কাজ। সরকারি প্রযুক্তি নির্ভরতা এবং স্বদেশি উদ্যোগের উপর নির্ভর করে BSNL এবার এক লক্ষ 4G টাওয়ার বসানোর মাধ্যমে দেশকে এক নতুন ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করাতে চলেছে।
BSNL 5G আপডেট: কোন কোন শহরে শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক কাজ?
BSNL ইতিমধ্যেই দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শহরে 5G টেস্টিং শুরু করে দিয়েছে। কানপুর, পুনে, কোয়েম্বাটুর, বিজয়ওয়াড়া এবং কোল্লাম শহরে বসানো হয়েছে বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন (BTS)। বর্তমানে এই নেটওয়ার্কগুলি অভ্যন্তরীণভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। যদিও এই পরিষেবা এখনো সাধারণ গ্রাহকদের জন্য উন্মুক্ত নয়, তবে খুব শীঘ্রই তা চালু হবে বলে আশাবাদী সংস্থা।
BSNL কর্তৃপক্ষের মতে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও ইনফ্রাস্ট্রাকচারের মাধ্যমে তারা 5G পরিষেবার গুণগত মান নিশ্চিত করতে চাইছে। এই পদক্ষেপে ভারতীয় টেলিকম ইন্ডাস্ট্রিতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
অবশ্যই দেখবেন: ‘দাদাগিরি’ থেকে বিদায় সৌরভ গাঙ্গুলির! নতুন সিজেনে কাকে দেখা যাবে সঞ্চালকের ভূমিকায়?
গ্রামে পৌঁছবে 4G, শহরে মিলবে 5G—BSNL-এর বড় পরিকল্পনা
BSNL-এর লক্ষ্য একেবারে স্পষ্ট—সারা দেশ জুড়ে সংযোগকে ছড়িয়ে দেওয়া। যেখানে এখনও দেশের অনেক গ্রামীণ অঞ্চলে 4G পরিষেবা পৌঁছায়নি, সেখানে BSNL বলছে, ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যেই তারা দেশব্যাপী ১ লক্ষ 4G টাওয়ার স্থাপন করবে। এই টাওয়ারগুলির মাধ্যমে দেশের প্রতিটি কোণায় পৌঁছবে হাই স্পিড ইন্টারনেট সংযোগ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই 4G টাওয়ারগুলি এমনভাবে ডিজাইন করা হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে খুব সহজেই সেগুলিকে 5G নেটওয়ার্কে রূপান্তর করা যায়। অর্থাৎ একই পরিকাঠামোকে ব্যবহার করেই আরও উন্নত পরিষেবা চালু করা যাবে, যা প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক—উভয় দিক থেকেই অত্যন্ত ইতিবাচক।
অবশ্যই দেখবেন: দক্ষিণবঙ্গে কালবৈশাখীর তাণ্ডব! মুষলধারে বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত ৫ জেলা, আবহাওয়ার আপডেট
দেশীয় প্রযুক্তিতে ভরসা, BSNL-এর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ মডেল
BSNL-এর এই উদ্যোগে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল—দেশীয় প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা। এই পুরো প্রকল্পেই স্বদেশি প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ অভিযানের একটি বাস্তব উদাহরণ।
এছাড়া BSNL-এর মাধ্যমে যে 5G পরিষেবা চালু হবে, সেটি অন্যান্য প্রাইভেট সংস্থার তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে কম খরচে উচ্চমানের ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থার।
অবশ্যই দেখবেন: আজই কিনুন সোনা! জামাই ষষ্ঠীর আগে রেকর্ড কম দামে মিলছে গয়না
কেন্দ্রীয় সরকারের সমর্থন: ডিজিটাল ইন্ডিয়ার দিকে বড় ধাপ
ভারতের কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া BSNL-এর এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, BSNL-এর এই ডিজিটাল সম্প্রসারণ ভারতের ডিজিটাল রূপান্তরকে এক নতুন গতি দেবে। তাঁর মতে, “BSNL-এর পরিষেবা যেন দেশের প্রতিটি মানুষের কণ্ঠস্বরে পৌঁছায়।” এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিও ডিজিটাল ভারতের অন্তর্ভুক্ত হবে।
টেলিকম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিযোগিতা বাড়বে?
BSNL 5G পরিষেবা চালু করার পর, জিও (Jio), এয়ারটেল (Airtel), ভোডাফোন আইডিয়া (Vi)-এর মত প্রাইভেট সংস্থাগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে বলেই মত টেলিকম বিশ্লেষকদের। বর্তমানে জিও এবং এয়ারটেল দেশের বিভিন্ন শহরে 5G পরিষেবা চালু করলেও তা এখনো সর্বত্র পৌঁছায়নি। সেখানে BSNL যদি স্বল্প খরচে এবং উন্নত মানের পরিষেবা দিতে পারে, তাহলে গ্রাহকদের বড় অংশ তাদের দিকেই আকৃষ্ট হবে।
BSNL 5G পরিষেবার সম্ভাব্য সুবিধাগুলি
১. উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ:
5G নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রাহকরা পাবে আলট্রা-ফাস্ট ডাউনলোড ও আপলোড স্পিড।
২. লো ল্যাটেন্সি:
বিশেষ করে অনলাইন গেমার ও ভিডিও কনফারেন্স ইউজারদের জন্য দারুণ সুবিধা হবে।
৩. স্মার্ট ডিভাইস ও IoT সংযোগ:
5G প্রযুক্তির মাধ্যমে স্মার্ট হোম, স্মার্ট সিটি, স্মার্ট ট্রাফিক ইত্যাদি সম্ভব হবে।
৪. আত্মনির্ভরতা:
স্বদেশি প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে BSNL ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্ত ভিত তৈরি করছে।
BSNL-এর অগ্রযাত্রা কি পাল্টে দেবে ভারতের টেলিকম চিত্র?
সরকারি নিয়ন্ত্রিত BSNL দীর্ঘদিন ধরেই টেলিকম জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। যদিও সম্প্রতি কিছুটা পিছিয়ে ছিল, এবার 5G পরিষেবার মাধ্যমে তারা আবার শক্তিশালীভাবে ফিরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে। শহর ও গ্রামের ব্যবধান ঘুচিয়ে BSNL দেশের প্রত্যন্ত কোণায় উচ্চমানের ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দিতে চায়। তাদের এই পরিকল্পনা সফল হলে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই BSNL ভারতের ডিজিটাল রূপান্তরের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে।





