৬ হাজার মৃত ব্যক্তি তোলেন রেশন!  ফাঁস বিশাল কেলেঙ্কারি, এবার কি জীবিতরাও হতে পারে বঞ্চিত ? 

ভারতের কোটি কোটি গরিব মানুষের ভরসা হলো সরকারের রেশন প্রকল্প। প্রত্যেক মাসে নির্ধারিত পরিমাণে গম, চাল কিংবা আনাজ পেয়ে সংসার সামলান বহু পরিবার। কিন্তু যখন এই ব্যবস্থার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে চাতুরী, প্রতারণা আর ফাঁকফোকর, তখন প্রশ্ন উঠে—কারা আদৌ পাচ্ছেন এই সহায়তা, আর কারা পাচ্ছেন না? সাধারণ মানুষ যখন আধার কার্ড হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করেন, তখন কেউ কেউ নিশ্চিন্তে মৃত ব্যক্তিদের নামেই তোলেন রেশন!

দরিদ্রের হকের চাল যাচ্ছে কার পাতে? (Poor People’s Rights Hijacked)

আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে দুর্নীতি ঠেকানো সম্ভব—এই বিশ্বাস নিয়েই সরকার এনেছে আধার বেসড বায়োমেট্রিক সিস্টেম (Aadhaar-based biometric system)। বলা হয়েছিল, এতে ভুলভ্রান্তি কমবে, প্রকৃত উপভোক্তারা সুবিধা পাবেন। অথচ বাস্তবতা ঠিক উলটো। মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে দেখা যাচ্ছে, যাঁরা বহু বছর আগে মারা গেছেন, তাঁরাও নাকি রেশন তুলছেন প্রতিমাসে! আর যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের নাম সরকারি নথিতে মৃত বলে দেখানো হচ্ছে, ফলে তাঁরা নিজের অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

Read More: জিও গ্রাহকদের ধাক্কা: গেমিং প্ল্যান থেকে ডেটা সুবিধা সরিয়ে নিল জিও!

মৃত মানুষও ‘রেশনপ্রাপ্ত’: চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস (Dead People Getting Ration)

সাতনা (Satna) জেলার আকৌনা (Akouna) গ্রামে মৃত বালবন্ত সিংয়ের (Balwant Singh) নামে বিগত সাত বছর ধরে নিয়মিত রেশন তোলা হচ্ছে—এমনই তথ্য সামনে এসেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পরও তাঁর আধার নম্বর ‘সক্রিয়’ (Active) রয়েছে এবং সেই তথ্য কাজে লাগিয়েই তাঁর পরিবার নিয়মিত রেশন পাচ্ছে। শুধু বালবন্ত নন, জেলার আরও বহু মৃত মানুষের নামেই চলছে এই অপারেশন। স্থানীয় সূত্রের খবর, বহু মৃত ব্যক্তি এখনও পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে (Public Distribution System – PDS) সক্রিয় হিসেবে তালিকাভুক্ত।

জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে রেশন কেটে নেওয়ার অভিযোগ (Living Shown Dead for Ration Theft)

এই ঘটনাগুলির বিপরীতে আরও ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। আকৌনা গ্রামেরই শঙ্কর নামে এক ৬২ বছরের আদিবাসী ব্যক্তি, যিনি ২০১৭ সাল থেকে সরকারিভাবে মৃত হিসেবে দেখানো হয়েছেন, তাই কোনও রেশনই পাচ্ছেন না। তাঁর একাধিকবার আবেদন, বিক্ষোভ সত্ত্বেও কোনও সুরাহা হয়নি। সরকারি পোর্টাল সামগ্রা (Samagra Portal)-তে তাঁর মৃত্যু নথিভুক্ত হয়ে আছে, অথচ তিনি প্রতিদিন বেঁচে থেকে রেশন দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন, শুধুমাত্র হতাশা নিয়েই ফিরতে হয়।

Read More: কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ৫ জেলায় ধেয়ে আসছে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি! দক্ষিণবঙ্গে কবে মিলবে স্বস্তি?

প্রশাসনের নিশ্চুপতা ও সাধারণ মানুষের হতাশা (Administrative Silence and Public Anger)

এই কেলেঙ্কারির প্রেক্ষিতে প্রশাসন বলছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি, কোনও স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সমাজকর্মীরা বলছেন, অন্তত ৬ হাজার মৃত ব্যক্তি রেশন তোলার তালিকায় রয়েছেন মধ্যপ্রদেশে। এমন দুর্নীতি শুধু সাধারণ মানুষের ওপর অবিচার নয়, বরং গোটা সিস্টেমের উপর আস্থা হারানোর কারণ। যদি অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে এই রেশন ব্যবস্থা পুরোপুরি দুর্নীতির কবলে পড়বে, আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশের প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষজন।

Related: হলুদ লাইন পেরোলেই বিপদ! আজ পর্যন্ত কতজনকে দিতে হল জরিমানা, জানুন বিস্তারিত