২০ বছর কোমায়! শেষমেশ চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে পড়লেন সৌদির ‘ঘুমন্ত রাজপুত্র’ ওয়ালিদ

Prince Al Waleed bin Khaled bin Talal Al Saud: ২০ বছরের দীর্ঘ কোমার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে চিরনিদ্রায় তলিয়ে গেলেন সৌদি রাজপুত্র ওয়ালিদ বিন খালিদ বিন তালাল আল সৌদ (Prince Al Waleed bin Khaled bin Talal Al Saud)। ২০০৫ সালে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার পর থেকেই কোমায় ছিলেন তিনি। ‘ঘুমন্ত রাজপুত্র’ ...

Published on:

Prince Al Waleed bin Khaled bin Talal Al Saud

Prince Al Waleed bin Khaled bin Talal Al Saud: ২০ বছরের দীর্ঘ কোমার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে চিরনিদ্রায় তলিয়ে গেলেন সৌদি রাজপুত্র ওয়ালিদ বিন খালিদ বিন তালাল আল সৌদ (Prince Al Waleed bin Khaled bin Talal Al Saud)। ২০০৫ সালে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার পর থেকেই কোমায় ছিলেন তিনি। ‘ঘুমন্ত রাজপুত্র’ নামে পরিচিত এই যুবরাজের জীবন রক্ষায় পরিবার ব্যয় করেছে অগণিত অর্থ, কিন্তু সোনার কাঠির মতো কোনও চিকিৎসাই তাঁকে জাগাতে পারেনি। ৩৮ বছর বয়সে শনিবার ঘুমের মধ্যেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সৌদি রাজপরিবারসহ গোটা বিশ্ব।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

কে ছিলেন এই ‘ঘুমন্ত রাজপুত্র’?

প্রিন্স ওয়ালিদ বিন খালিদ বিন তালাল সৌদি আরবের প্রভাবশালী রাজপরিবারের সদস্য ছিলেন। তাঁর বাবা খালিদ বিন তালাল আল সৌদ সৌদি রাজপরিবারে একজন পরিচিত এবং রাজনীতিক চেতনায় বিশ্বাসী ব্যক্তি। রাজপুত্র ওয়ালিদ ছিলেন সৌদি যুব সমাজের উদীয়মান প্রতীক, যার জীবনকাহিনী এককথায় ট্র্যাজিক।

বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে Join Now

২০০৫ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে রাজধানী রিয়াধে এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন ওয়ালিদ। তাঁর মাথায় আঘাত লাগে, এবং সঙ্গে সঙ্গেই কোমায় চলে যান। ডাক্তাররা জানিয়ে দেন, মস্তিষ্কে তীব্র ক্ষতি হয়েছে—তিনি আর জাগবেন না। সেই থেকে ২০২৫ পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ বছর কোমায় ছিলেন তিনি। এই সময়ের মধ্যে একাধিক চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ তাঁর আরোগ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালালেও ফল মেলেনি।

গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন Join Now

২০ বছরের কোমা: ‘জীবন্ত কিন্তু নিস্পন্দ’

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল চিকিৎসা ব্যবস্থা এই রাজপুত্রের পেছনে প্রয়োগ করা হয়েছিল। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান যতটা সম্ভব, তার সবটাই প্রয়োগ করেছিলেন চিকিৎসকরা। সৌদি সরকারের পক্ষ থেকেও তাঁকে দেওয়া হয় সর্বোচ্চ চিকিৎসা সহায়তা। পরিবারের পক্ষ থেকে প্রায় প্রতিদিন কোনও না কোনও সদস্য তাঁকে দেখতে যেতেন। বাবা খালিদ বিন তালাল কখনও হাল ছাড়েননি।

বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, ‘Persistent Vegetative State’-এ ছিলেন তিনি। অর্থাৎ শরীরের কিছু অঙ্গ কাজ করলেও, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ছিল না। বছর কয়েক আগেও তাঁর একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল, যেখানে দেখা যায়, কোমায় থাকা রাজপুত্র চোখ ঘোরাচ্ছেন, হাত নাড়ছেন—যা দেখে কিছুটা আশার আলো দেখতে পেয়েছিল পরিবার। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, সেটি ছিল শুধুই স্বতঃস্ফূর্ত মাংসপেশির প্রতিক্রিয়া, কোনও সচেতন প্রতিক্রিয়া নয়।

বাবার আশা, পুত্রের জীবনের প্রতীক্ষা

প্রিন্স ওয়ালিদের বাবা খালিদ বিন তালাল শুরু থেকেই নিজের ছেলের জীবন নিয়ে ছিলেন অদম্য আশাবাদী। যখন ডাক্তাররা পরামর্শ দেন, লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়ার, তিনি রাজি হননি। তাঁর বিশ্বাস ছিল, একদিন অলৌকিক কিছু ঘটবে, ছেলে আবার চোখ মেলে তাকাবে। ২০২৩ সালের ইদ-উল-আজহায় বাবার সঙ্গে ভাইয়েরা গিয়ে পুত্র ওয়ালিদকে দেখতে যান। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি শেয়ার করে লিখেছিলেন খালিদ, “আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমার ছেলেকে সুস্থ করে দেন। আমি আশা ছাড়িনি। কারণ আমার বিশ্বাস, দয়াময় আল্লাহ অলৌকিক কিছু করতে পারেন।” এই শেষ ইদ ছিল সম্ভবত প্রিন্স ওয়ালিদের জীবনের শেষ ‘পরিবারের সঙ্গে মিলন’।

ঘুমের মধ্যেই চিরঘুমে, মৃত্যুকালে বয়স ৩৮

২০২৫ সালের ২০ জুলাই, শনিবার ঘুমের মধ্যেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রিন্স ওয়ালিদ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩৮ বছর। পরিবারের তরফে দেওয়া এক বিবৃতিতে রাজপুত্রের পিতা খালিদ বিন তালাল বলেন, “পুত্রশোকের ভাষা নেই। ২০ বছর ধরে আমরা শুধু অপেক্ষা করেছি। আল্লাহ আমাদের সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটালেন। তিনি এখন চিরশান্তির দেশে।”

অবশ্যই দেখবেন: ফের নিম্নচাপ! উত্তরবঙ্গে আজ ভারী বর্ষণ, দক্ষিণেও বাড়ছে দুর্যোগের আশঙ্কা! জেনে নিন আজকের আবহাওয়া

শেষকৃত্যের আয়োজনে আলাদা ব্যবস্থা

প্রিন্স ওয়ালিদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে রবিবার, ২১ জুলাই। তাঁর প্রাসাদে (আল-ফকিরিয়া, সৌদি আরব) সর্বসাধারণের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সৌদি সংস্কৃতি অনুযায়ী, পুরুষ ও মহিলা শোককারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে। তবে রাজপুত্রের মৃতদেহ শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে ২৩ জুলাই-এর পর।

সৌদি সমাজে প্রতিক্রিয়া

প্রিন্স ওয়ালিদের মৃত্যু সংবাদে শোকস্তব্ধ সৌদি সমাজ। টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বহু সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্ট রাজপরিবারের সদস্য, চিকিৎসক ও সাংবাদিকরা। অনেকেই লিখেছেন—“তিনি কোমায় থেকেও জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে গেছেন।”

অবশ্যই দেখবেন: ফের নিম্নচাপ! উত্তরবঙ্গে আজ ভারী বর্ষণ, দক্ষিণেও বাড়ছে দুর্যোগের আশঙ্কা! জেনে নিন আজকের আবহাওয়া

এক নজরে সৌদি ঘুমন্ত রাজপুত্রের জীবন:

বিষয়তথ্য
পূর্ণ নামপ্রিন্স ওয়ালিদ বিন খালিদ বিন তালাল
জন্ম১৯৮৭ সাল (আনুমানিক)
দুর্ঘটনার সময়২০০৫ সালে, বয়স ১৮
অবস্থানকোমা (Persistent Vegetative State), ২০ বছর
মৃত্যু২০ জুলাই ২০২৫
বয়স৩৮ বছর
শেষকৃত্য২১ জুলাই, আল-ফকিরিয়া প্রাসাদ
পরিবারপিতা – খালিদ বিন তালাল; সৌদি রাজপরিবারের সদস্য

একটি সম্ভাবনাময় জীবন যেখানে থেমে গেল মাত্র ১৮ বছর বয়সে, তা শেষ হল দীর্ঘ ২০ বছরের অপেক্ষার পরে। সৌদি আরবের ‘ঘুমন্ত রাজপুত্র’ হিসেবে পরিচিত প্রিন্স ওয়ালিদের জীবন-কাহিনী শুধু রাজপরিবারের নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্য এক আবেগঘন বার্তা রেখে গেল—আশা, লড়াই, এবং চরম ট্র্যাজেডির। তিনি ছিলেন জীবনের সেই প্রতীক, যে ঘুমের মধ্যেও পরিবারের ভালোবাসা ও আশার মধ্য দিয়ে বেঁচে ছিলেন।

অবশ্যই দেখবেন: সূর্য দেবের কৃপায় সৌভাগ্যের আলোতে ভাসবে এই ৪ রাশি! আজকের রাশিফল, ২০ জুলাই