Frank Caprio: না ফেরার দেশে ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও, কে এই ‘বিশ্বের সবচেয়ে দয়ালু বিচারক’?

ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও (Frank Caprio)— নামটা শুনলেই ভেসে ওঠে এমন এক বিচারকের মুখ, যিনি আদালতের কাঠগড়ায় শুধু আইন নয়, মানবিকতার দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর প্রতিটি রায়, প্রতিটি মুহূর্ত ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। সেই প্রিয় মুখ আর নেই। দীর্ঘ লড়াই শেষে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে ৮৮ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে সহৃদয় ...

Updated on:

Frank Caprio

ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও (Frank Caprio)— নামটা শুনলেই ভেসে ওঠে এমন এক বিচারকের মুখ, যিনি আদালতের কাঠগড়ায় শুধু আইন নয়, মানবিকতার দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর প্রতিটি রায়, প্রতিটি মুহূর্ত ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। সেই প্রিয় মুখ আর নেই। দীর্ঘ লড়াই শেষে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে ৮৮ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে সহৃদয় বিচারক ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও (Frank Caprio)।

মৃত্যুর আগে শেষ ভিডিও বার্তা

জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন সক্রিয়। মৃত্যুর মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন তিনি (Frank Caprio)। সেখানে ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন— “আমি শীঘ্রই ফিরে আসব। আমার জন্য আলাদা কিছু করতে হবে না, শুধু প্রার্থনার সময়ে আমাকে মনে করবেন।” এই ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। যেমন ভাইরাল হয়েছিল তাঁর বিচারসভাগুলি।

;

পরিবার জানাল দুঃসংবাদ

বুধবার তাঁর পরিবার ইনস্টাগ্রামে একটি বিবৃতি দিয়ে জানান— “ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও দীর্ঘ ও সাহসী লড়াইয়ের পর শান্তিতে প্রয়াত হয়েছেন। সহানুভূতি, বিনয় এবং মানুষের প্রতি অগাধ বিশ্বাস দিয়ে তিনি কোটি কোটি মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছিলেন। তিনি শুধু বিচারক নন, ছিলেন আদর্শ স্বামী, পিতা, দাদা ও বন্ধু।”

ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিওর (Frank Caprio) শৈশব ও পড়াশোনা

  • জন্ম: ২৩ নভেম্বর ১৯৩৬
  • জন্মস্থান: প্রভিডেন্স, রোড আইল্যান্ড (যুক্তরাষ্ট্র)
  • পরিবার: ইতালিয়ান অভিবাসী পরিবার, বাবা ছিলেন ফল বিক্রেতা।
  • শিক্ষাজীবন:
    • ১৯৫৮ সালে Providence College থেকে স্নাতক ডিগ্রি।
    • শিক্ষকতা করতে করতে রাতের স্কুলে আইন পড়াশোনা।
    • পরে Boston Suffolk University School of Law থেকে আইন ডিগ্রি।

বিচারক হওয়ার যাত্রা

১৯৮৫ সালে তিনি প্রভিডেন্স মিউনিসিপাল কোর্ট-এর বিচারক নিযুক্ত হন। প্রায় চার দশক ধরে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রধান বিচারক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

টেলিভিশন ও বিশ্বখ্যাতি

২০১৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত তিনি “Caught in Providence” নামের টেলিভিশন শো-তে অংশ নেন। এই অনুষ্ঠানেই তাঁর মানবিক রায়, সহজ-সরল রসবোধ এবং সহমর্মিতার নজির বিশ্বব্যাপী দর্শকদের কাছে তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে। এমনকি শোটি এমি অ্যাওয়ার্ডস-এর জন্য মনোনীত হয়েছিল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল মানবিক রায়

ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিওকে বলা হয় “Kindest Judge in the World”। তাঁর আদালতের বহু ঘটনা ভাইরাল হয়েছে—

  • এক বৃদ্ধ ট্রাফিক আইন ভাঙার জন্য আদালতে আসেন। পরে বিচারক জানতে পারেন, বৃদ্ধ তাঁর ক্যান্সার আক্রান্ত ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ফ্র্যাঙ্ক আবেগাপ্লুত হয়ে মামলা খারিজ করে দেন।
  • সাধারণ মামলায় অভিযুক্তদের সঙ্গে তিনি রসিকতা করতেন, অনেককে সুযোগ দিতেন, আবার কাউকে নিজের জীবনের গল্প শোনাতে বলতেন।

এভাবেই কঠিন আইনকেও মানবিকতার স্পর্শে সহজ করে তুলেছিলেন তিনি।

অসুস্থতা ও শেষ লড়াই

২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি নিজের ইনস্টাগ্রামে জানান, তাঁর অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার (Pancreatic Cancer) ধরা পড়েছে। তিনি লিখেছিলেন— “আমার জন্য প্রার্থনা করুন। আপনাদের ভালোবাসাই আমাকে লড়াই করার শক্তি দেবে।” শেষ দিন পর্যন্ত তিনি আশা হারাননি। মৃত্যুর আগের দিনও তিনি ভিডিও বার্তায় ভক্তদের কাছে প্রার্থনার অনুরোধ করেছিলেন।

উত্তরাধিকার

ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও শুধু একজন বিচারক ছিলেন না, ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। তাঁর ভিডিও এখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় কোটি কোটি মানুষ দেখেন। আদালতের কাঠগড়া থেকে শুরু করে টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের মজার ভিডিও—সব জায়গায় তিনি মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছেন। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়, আইন মানে শুধু শাস্তি নয়, বরং মানুষের পরিস্থিতি বুঝে সহানুভূতি দেখানোই সত্যিকারের ন্যায়বিচার।

আজ ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও (Frank Caprio) আমাদের মাঝে নেই, তবে তাঁর মানবিক রায়, সহৃদয় ব্যবহার এবং হাস্যরস মিশ্রিত বিচারসভা চিরকাল মানুষের মনে থাকবে। তিনি প্রমাণ করে গেছেন—একজন বিচারকও হতে পারেন মানবতার শ্রেষ্ঠ দূত।

অবশ্যই দেখবেন: Bhumika Chawla: সুপারহিট ছবি দিয়েই বলিউডে পা, তবু হারিয়ে গেলেন কাপুর পরিবারের প্রিয় অভিনেত্রী

Anamika Sen

দেশ-বিদেশের খবর, অর্থনীতি, জ্যোতিষ, চাকরি সংক্রান্ত তথ্য এবং টেকনোলজির জগৎ—এই সব বিষয় নিয়ে লেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
WhatsApp Icon