Vishwakarma Puja 2025: রাত পোহালেই বাঙালির ঘরে ঘরে শুরু হবে বিশ্বকর্মা পুজো। দেবশিল্পীর আরাধনা মানেই কর্মক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি সাজানো, ভোগ দেওয়া আর পূজার আয়োজন। তবে এর পাশাপাশি আরও একটি রীতি আজও সমান জনপ্রিয়, আর তা হলো ঘুড়ি উড়ানো। ভাদ্র সংক্রান্তির আকাশ মানেই রঙ-বেরঙের ঘুড়িতে ভরে ওঠা। কিন্তু প্রশ্ন উঠতেই পারে, ঘুড়ি তো সারা বছরই ওড়ানো যায়, তাহলে বিশ্বকর্মা পুজো (Vishwakarma Puja 2025)-র দিনেই কেন আকাশ ভরে যায় ঘুড়িতে? এর উত্তর লুকিয়ে আছে পুরাণ আর ইতিহাসের নানা অধ্যায়ে।
পুরাণে ঘুড়ি উড়ানোর সূত্র
পুরাণ অনুসারে, ভগবান বিশ্বকর্মা (Vishwakarma Puja 2025) ছিলেন দেবতাদের স্থপতি ও কারিগর। দেবতাদের প্রয়োজনে তিনি একবার একটি উড়ন্ত রথ তৈরি করেছিলেন। এই অসাধারণ কীর্তির স্মৃতিকে ধরে রাখতে ভাদ্র সংক্রান্তির দিনে, অর্থাৎ বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ঘুড়ি ওড়ানোর রীতি চালু হয় বলে অনেকেই মনে করেন। দেবশিল্পীর সেই সৃষ্টিশীলতার প্রতীক হিসেবে আজও আকাশ ভরে যায় রঙিন ঘুড়িতে। তবে বাংলায় এই ঘুড়ি উড়ানোর প্রচলন বহু পুরনো নয়। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, প্রাচীনকালে সাধারণ মানুষ ঘুড়ি ওড়াতেন না। বরং ধনী ও রাজপরিবারের মধ্যেই এর প্রচলন ছিল বেশি।
বাংলায় ঘুড়ি উৎসবের সূচনা
ঐতিহাসিকদের মতে, বাংলায় ঘুড়ি ওড়ানোর প্রচলন শুরু হয় উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। বর্ধমান রাজবাড়ির সঙ্গে এই প্রথার যোগ সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য। রাজা মহতাবচাঁদ নাকি নিজেই ঘুড়ি ওড়াতেন এবং রাজবাড়ির উৎসবে আকাশ ভরে যেত নানা রঙের ঘুড়িতে। শোনা যায়, বর্ধমানের রাজারা এসেছিলেন পাঞ্জাব থেকে, যেখানে ঘুড়ি উৎসব ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। সেই সূত্রে বাংলাতেও ঘুড়ি উড়ানোর ঐতিহ্য তৈরি হয়।
ওয়াজেদ আলি শাহের হাত ধরে কলকাতায় ঘুড়ি
আবার আরেকটি কাহিনি জড়িয়ে আছে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের সঙ্গে। ১৮৫৬ সালে লখনৌর রাজত্ব হারিয়ে তিনি কলকাতায় আসেন এবং মেটিয়াব্রুজ এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। তাঁর হাত ধরেই কলকাতার আকাশে নতুনভাবে শুরু হয় ঘুড়ি ওড়ানোর সংস্কৃতি। সে সময় কলকাতার বিচালিঘাট থেকে শুরু করে মেটিয়াব্রুজের প্রতিটি পাড়ায় ঘুড়ির লড়াই ছিল বেশ জনপ্রিয়। নবাবের আমলে ঘুড়ি উৎসব হয়ে উঠেছিল একেবারে জমকালো আয়োজন। এরপর থেকেই কলকাতার আকাশে নিয়মিত দেখা যেত নানা আকারের ঘুড়ি। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলেছে, কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর সেই আনন্দ আজও অটুট।
অবশ্যই দেখবেন: শিল্পে উন্নতি ও সৌভাগ্যের বার্তা! বিশ্বকর্মা পুজোয় সকলকে পাঠান এই বিশেষ শুভেচ্ছা
বিশ্বকর্মা পুজো (Vishwakarma Puja 2025) আর ঘুড়ির উৎসব
আজও ভাদ্র সংক্রান্তি মানেই ভোর থেকে ছাদে ছাদে কোলাহল, হাতে সুতোর চাকতি আর মুখে সেই চেনা ডাক— “ভো-কাট্টা”। বড় থেকে ছোট, সবাই মেতে ওঠে ঘুড়ির লড়াইয়ে। যদিও সারাবছর আর আগের মতো ঘুড়ি দেখা যায় না, তবুও এই একদিনের জন্য শহর-গ্রাম সব জায়গাতেই আকাশ রঙিন হয়ে ওঠে। বিশ্বকর্মা পুজো ২০২৫ (Vishwakarma Puja 2025)-এও সেই একই দৃশ্য দেখা যাবে। যন্ত্রপাতির পূজা শেষ করে মানুষ ছুটে যাবেন ছাদে, আর শুরু হবে ঘুড়ির উৎসব। অনেকে মনে করেন, এই রীতি কেবল বিনোদন নয়, বরং দেবশিল্পীর সৃষ্টিশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।
অবশ্যই দেখবেন: ভাদ্র মাসে রেঁধে খেতে হবে আশ্বিন মাসে! কেন এমন নিয়ম রান্নাপূজায়? জানুন বিস্তারিত
ঘুড়ি উড়ানোর আনন্দে উৎসবের আমেজ
দুর্গাপুজোর আগে এই উৎসব যেন একপ্রকার আগাম আনন্দ নিয়ে আসে। শিশুদের হাসি, বড়দের প্রতিযোগিতা আর ছাদে ছাদে জমজমাট পরিবেশ— সব মিলিয়ে ভাদ্র সংক্রান্তি এক অনন্য রূপ নেয়। আজকের দিনে হয়তো আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঘুড়ি তৈরির কারিগররা কমে গিয়েছেন, কিন্তু পুজোর সময় তাদের তৈরি ঘুড়ির চাহিদা এখনও তুঙ্গে। তাই বিশ্বকর্মা পুজো ২০২৫ (Vishwakarma Puja 2025) শুধু কর্মদেবতার আরাধনা নয়, বরং এটি হয়ে ওঠে এক বড় সামাজিক উৎসব যেখানে সবার মিলন ঘটে আনন্দ আর উৎসবের আবহে।
FAQ: বিশ্বকর্মা পুজো আর ঘুড়ি উড়ানো
প্রশ্ন: বিশ্বকর্মা পুজো ২০২৫ কবে পালিত হবে?
উত্তর: এ বছর বিশ্বকর্মা পুজো পালিত হবে বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
প্রশ্ন: কেন বিশ্বকর্মা পুজোর দিনেই ঘুড়ি উড়ানো হয়?
উত্তর: পুরাণ মতে, দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা একবার দেবতাদের জন্য উড়ন্ত রথ তৈরি করেছিলেন। সেই ঘটনার স্মরণে এই দিনে ঘুড়ি ওড়ানো হয় বলে বিশ্বাস।
প্রশ্ন: বাংলায় ঘুড়ি উৎসবের সূচনা কবে হয়েছিল?
উত্তর: ইতিহাস অনুযায়ী, উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বর্ধমান রাজবাড়ি ও নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের হাত ধরে বাংলায় ঘুড়ি উড়ানোর প্রচলন শুরু হয়।
প্রশ্ন: এখনও কি বিশ্বকর্মা পুজোতে ঘুড়ি ওড়ানো হয়?
উত্তর: হ্যাঁ, এখনও এই দিনে শহর থেকে গ্রাম— সর্বত্রই আকাশ ভরে যায় নানা রঙের ঘুড়িতে।
Disclaimer
এই প্রবন্ধটি কেবলমাত্র তথ্যভিত্তিক। এখানে দেওয়া কাহিনি ও ঐতিহাসিক তথ্য মূলত প্রচলিত বিশ্বাস, পুরাণ ও ঐতিহাসিক দলিল থেকে নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে কোনও ব্যক্তিগত মতামত বা ধর্মীয় নির্দেশ জড়িত নয়।
অবশ্যই দেখবেন: প্রতি বছর একই দিনে কেন হয় বিশ্বকর্মা পুজো? জেনে নিন সেই অজানা রহস্য!





