Joy Banerjee: পুজোর মরসুম মানেই আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর আলোঝলকানি। কিন্তু এই বছর কলকাতার এক পরিবারে সেই আনন্দের মধ্যে মিলেছে শূন্যতার ছোঁয়া। উৎসবের রঙিন বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে এক নিঃশেষের স্মৃতি। মানুষের জীবনে কখনো কখনো এমন মুহূর্ত আসে, যখন প্রতিটি হাসি যেন কিছুটা ব্যথা ঢেকে রাখে। সম্প্রতি অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ জয় বন্দ্যোপাধ্যায় (Joy Banerjee) চলে যাওয়ার পর তার প্রাক্তন স্ত্রী এক আবেগঘন সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করেছেন তাদের সম্পর্ক ও হারানো স্মৃতির কথা।
জয়ের প্রথম স্ত্রী জানালেন, “জয় আমার জীবনের প্রথম পুরুষ, প্রথম প্রেম। তার হই হই করে বাঁচার ধরন আমাকে ভাসিয়ে নিয়েছিল। আমার কলেজবেলার ‘ক্রাশ’ ছিল সে।” উত্তরের কলকাতার প্রাচীনপন্থী পরিবারের মেয়ে এই অভিজ্ঞতাটি স্মৃতিচারণে বর্ণনা করেছেন। জয় যখন অভিনেতা হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন, তখনও তার স্বাধীনচেতা চরিত্র ও অদম্য প্রাণশক্তি অনেকের মন জয় করেছিল। কিন্তু জীবনের বিভিন্ন ধাপে অসুস্থতা ও কঠিন সময়গুলোও তাকে ছুঁয়ে গেছে, যা প্রথম স্ত্রীকে প্রায়শই হাসপাতালে জয়ের পাশে থাকতে বাধ্য করেছিল।
অভিনেতা থেকে রাজনীতিবিদ
জয় শুধুই অভিনেতা ছিলেন না, রাজনৈতিক অঙ্গনেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। ২০০৯-২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময়ে জয়ও তাঁর পাশে লড়েছিলেন। প্রথম স্ত্রী মনে করেন, অভিনয়জীবন ও রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য অনেক, তাই মাঝে মাঝে বিতর্কও জড়িয়েছেন। তবে তার মানবিক দিক, পরিবারপ্রেম, এবং কথার জালে মানুষকে বন্দি করার ক্ষমতা—সবই তাকে বিশেষ মানুষ করে তুলেছিল। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেতা যদিও কিছু সময়ের জন্য অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন, তবুও তার প্রতিভা এবং মনপ্রাণ দিয়ে বাঁচার ধরন সকলের মনে গভীর ছাপ রেখে গেছে।
ব্যক্তিগত জীবন ও বিচ্ছেদের পর সম্পর্ক
বিচ্ছেদের পরও প্রথম স্ত্রী জানালেন, তাদের মাঝে মাঝে দেখা হত এবং কথাও হত। জয় ছিলেন নিজের শর্তে জীবনযাপনকারী, স্বাধীনচেতা মানুষ। বড়লোক ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান হলেও মাটিতে পা রেখেছিলেন, মা-বাবাকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। তিনি নিজেকে নিয়ে সচেতন ছিলেন না, কিন্তু অন্যের প্রতি সৎ ও আন্তরিক ছিলেন। প্রথম স্ত্রী বলেন, আজও মনে হয়, প্রথম প্রেমের স্মৃতি যেমন কর্পূরের সুগন্ধের মতো থাকে, তেমনই জয়ও তাঁর জীবনে সেই অবিনশ্বর ছাপ রেখে গেছে।
শেষ বিদায় ও স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা
জয়ের জন্মদিন ২৫ মে, এবং তিনি চলে গেছেন ২৫ অগাস্ট। তার প্রাক্তন স্ত্রী মনে করেন, তার এই ‘বিদায়’টুকুই হয়তো জয়ের প্রাপ্য। পুজোর আনন্দের মাঝেও এই শূন্যতা স্পষ্ট, তবে স্মৃতির রঙিন ছোঁয়া সব কষ্টকে মধুর করে তোলে। আবেগঘন এই গল্প পাঠককে মনে করিয়ে দেয়, জীবনের ভালোবাসা কখনো নিঃশেষ হয় না, তা প্রতিটি মুহূর্তে অনুভূত হয়। এই ক্ষণস্থায়ী বেদনা, স্মৃতি ও ভালোবাসার মিশ্রণে জয় আজও জীবন্ত হয়ে রয়েছেন মানুষের মনে।
অবশ্যই দেখবেন: Joy Banerjee: টলিউডে শোকের ছায়া! চলে গেলেন অভিনেতা ও বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়