বীরভূমের প্রভাবশালী নেতা অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) ফের একবার বিতর্কের কেন্দ্রে। দীর্ঘ তিহার জেলবাসের পর জেলায় ফিরে আপাত নিঃশব্দ থাকা তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি অনুব্রত (Anubrata Mondal) সম্প্রতি এক বেফাঁস মন্তব্যে নিজের দলেই প্রবল চাপে পড়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি অডিও ক্লিপ ঘিরে শাসক দলের অন্দরেই ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে অনুব্রতকে নোটিস পাঠিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলা হয়। অবশেষে তৃণমূল নেতাকে রাজ্য পুলিশের কাছে ক্ষমা চাইতে হয়েছে।
ভাইরাল অডিও ঘিরে বিতর্ক: কী রয়েছে সেই ক্লিপে?
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়, যেখানে দাবি করা হচ্ছে, বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদার এবং অনুব্রত মণ্ডলের মধ্যে কথোপকথন শোনা যাচ্ছে। যদিও Tollywood Online সহ কোনও সংবাদমাধ্যম এখনও পর্যন্ত এই অডিওর সত্যতা যাচাই করেনি।
তবে সেই অডিও ক্লিপে যাকে ‘অনুব্রত মণ্ডল'(Anubrata Mondal) বলে দাবি করা হচ্ছে, সেই কণ্ঠস্বর থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে হুমকি, গালিগালাজ ও অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার শোনা যাচ্ছে। অডিওতে বলা হয়, আইসিকে থানার বাইরে বার করে এনে পেটানো হবে, এমনকি তাঁর পরিবার সম্পর্কেও কুরুচিকর মন্তব্য করা হয়। পাশাপাশি অভিযোগ ওঠে, বোলপুরের আইসি ডেপুটেশন গ্রহণে বাধা দিচ্ছেন এবং পুলিশের রিপোর্ট নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়।
অবশ্যই দেখবেন: গ্যাসের দামে ৩০০ টাকা ছাড়! মাসের শুরুতেই বিশাল সুখবর, দেখে নিন বিস্তারিত নিয়ম!
অনুব্রতের অভিযোগ: ‘টাকা ছাড়া কিছু বোঝেন না এই আইসি’
সরাসরি সংবাদমাধ্যমের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অনুব্রত মণ্ডল বলেন,
“আমি রাজ্য পুলিশের ডিজি, পশ্চিমাঞ্চলের ডিআইজি এবং বীরভূমের এসপিকে জানিয়েছি এই আইসির (লিটন হালদার) বিষয়ে। FIR করতে গেলেও টাকা চায়, কাজ করাতেও টাকা চায়। টাকা ছাড়া কিছু বোঝে না এই আইসি।”
এই মন্তব্যেই আগুনে ঘি পড়ে। ইতিমধ্যে প্রশাসনের এক পদস্থ অফিসারকে এভাবে প্রকাশ্যে অভিযুক্ত করার ঘটনায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
অবশ্যই দেখবেন: বাচ্চাদের গরমের ছুটি শেষ! এই তারিখেই খুলছে স্কুল! শিক্ষা দপ্তরের বড় ঘোষণা!
শাসকদলের অন্দরেই অসন্তোষ: নেই জেলা সভাপতির পদ
যে পদে একসময় ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল, সেই বীরভূম জেলা সভাপতির পদই এখন আর তৃণমূল কংগ্রেসে নেই। ফলে এখন আর কোনও সাংগঠনিক ক্ষমতায় নেই অনুব্রত। তা সত্ত্বেও দলের হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে এই ধরনের বেফাঁস মন্তব্য অনেকে ভালোভাবে নেয়নি।
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তড়িঘড়ি তৃণমূল ভবনে আলোচনায় বসে এবং অনুব্রতের মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানায়।
তৃণমূলের কড়া বার্তা: নোটিস পাঠিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা দাবি
ভাইরাল অডিও-র জেরে অনুব্রত মণ্ডলকে দলীয়ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে একটি নোটিস পাঠানো হয়। নোটিসে বলা হয়, আগামী ৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি যদি প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা না চান, তবে কড়া সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি শোকজও করা হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। তৃণমূল নেতৃত্ব এই ঘটনা রাজ্যের আইনের শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অসম্মানজনক বলে মনে করে।
অনুব্রতের চিঠি: ‘দিদির পুলিশের কাছে আমি ১০০ বার ক্ষমা চাইতে পারি’ | Anubrata Mondal’s letter: ‘I can apologize to Didi’s police 100 times’
দলের নোটিস পাওয়ার পর অনুব্রত মণ্ডল রাজ্য পুলিশের ডিজিকে উদ্দেশ করে একটি চিঠি লিখে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সেই চিঠিতে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করে লেখেন—
“পশ্চিমবঙ্গের পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাধারণ পুলিশকর্মী থেকে উচ্চপদস্থ অফিসার— সকলেই দিদির ঘনিষ্ঠ মানুষ। তাদের অপমান করার কথা আমি কখনও ভাবতে পারি না। সাম্প্রতিক ঘটনায় আমি অত্যন্ত দুঃখিত। দিদির পুলিশের কাছে আমি একবার কেন, ১০০ বার ক্ষমা চাইতে পারি।”
ওষুধের প্রভাবে মাথা গরম? আত্মপক্ষ সমর্থনে কী বললেন অনুব্রত?
চিঠিতে আরও বলা হয়,
“আমি নিয়মিত নানা রকম ওষুধ খাই। ফলে মাঝে মাঝে মাথা গরম হয়ে যায়। যদি কেউ দিদির পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, তখন আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। তবে আমি কখনই কারও অসম্মান করতে চাই না। তবুও যদি কেউ আমাকে ভুল বোঝে, আমি দুঃখিত।”
তিনি আরও বলেন,
“আপনারা ভাবুন, বোলপুর, সিউড়ি ও রামপুরহাটে আমাদের বিশাল মিছিল দেখে কারা ভয় পেল? বিজেপির হাতে গালমন্দের অডিও ফুটেজ কীভাবে পৌঁছল? কে দিল? এর পেছনে কোনও চক্রান্ত আছে কি না, সেটাও ভাবা উচিত।”
বিজেপির পাল্টা কটাক্ষ: ‘তৃণমূলের আসল রূপ প্রকাশ্যে’
অন্যদিকে, এই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র বলেন,
“এই অডিও প্রমাণ করে দেয়, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা পুলিশের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করেন। পুলিশকে হুমকি দেওয়া, গালিগালাজ করা এদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এই কারণেই রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার হাল এই জায়গায় এসে পৌঁছেছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ: অনুব্রতের বিতর্কে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়ল?
অনুব্রত মণ্ডল বীরভূম জেলার এক সময়ের অবিসংবাদী নেতা ছিলেন। তবে বর্তমানে তার সাংগঠনিক কোনও পদ নেই। তিনি বর্তমানে জামিনে মুক্ত। এই পরিস্থিতিতে তার এমন হঠকারী মন্তব্যে দলের অন্দরেই ভাঙন দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
বিশেষত লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে দলীয় নেতার এমন মন্তব্যে তৃণমূলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল অডিও ক্লিপে বেফাঁস মন্তব্যের জেরে চরম বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। পুলিশকে প্রকাশ্যে হুমকি এবং অশালীন ভাষা ব্যবহার নিয়ে দলীয় নেতৃত্বও কড়া অবস্থানে। শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চেয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন অনুব্রত, তবে এই ঘটনা তাঁর এবং তৃণমূল কংগ্রেস উভয়ের জন্যই দীর্ঘমেয়াদে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে যেখানে বিরোধীরা প্রতিটি ভুলকে রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত করতে তৎপর।
📅 বিষয় | 🔗 লিংক/বিবরণ |
---|---|
🌤 আবহাওয়া আপডেট | ✅ প্রতিদিনের আবহাওয়ার খবর জানতে আমাদের ফলো করুন |
🔮 রাশিফল | ✅ দৈনিক রাশিফল ও জ্যোতিষশাস্ত্রভিত্তিক পরামর্শ |
💬 হোয়াটসঅ্যাপ | 👉 WhatsApp গ্রুপে যোগ দিন |
📢 টেলিগ্রাম | 👉 Telegram চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন |
📰 অন্যান্য আপডেট | ✅ View More |