বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলব্রিজ চেনাবের উদ্বোধন! ইতিহাস গড়লেন মোদি, উন্নয়নের নতুন অধ্যায় শুরু

কাশ্মীর যেন এক নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করছে। একসময় সন্ত্রাস, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও নিরাপত্তা হানির ছায়ায় ঢাকা এই উপত্যকা আজ উন্নয়নের এক নতুন দিগন্তে পৌঁছেছে। সেই বার্তাই আরও জোরদার করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, যিনি সম্প্রতি কাশ্মীর সফরে এসে একাধিক ঐতিহাসিক প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল লিঙ্ক প্রকল্প, ...

Published on:

Chenab Rail Bridge

কাশ্মীর যেন এক নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করছে। একসময় সন্ত্রাস, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও নিরাপত্তা হানির ছায়ায় ঢাকা এই উপত্যকা আজ উন্নয়নের এক নতুন দিগন্তে পৌঁছেছে। সেই বার্তাই আরও জোরদার করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, যিনি সম্প্রতি কাশ্মীর সফরে এসে একাধিক ঐতিহাসিক প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল লিঙ্ক প্রকল্প, চেনাব রেলওয়ে ব্রিজ (Chenab Rail Bridge Inauguration) এবং বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল লিঙ্ক: ৩০ বছরের অপেক্ষার অবসান

এই প্রকল্পটি ভারতের অন্যতম জটিল রেল প্রকল্প হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৪ সালে এই প্রকল্প অনুমোদন পেলেও প্রকৃত নির্মাণ শুরু হয় ২০০২ সালে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে। দীর্ঘ ৩০ বছরের অপেক্ষা, অগণিত প্রতিকূলতা এবং নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে অবশেষে কাশ্মীর আজ সরাসরি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে রেলপথে যুক্ত হলো।

বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে Join Now

চেনাব রেল ব্রিজ: বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল ব্রিজ | Chenab Rail Bridge: The highest rail bridge in the world

রেইয়াসি জেলার কৌরি ও বাক্কালের মাঝখানে অবস্থিত চেনাব রেল ব্রিজ এখনো বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল ব্রিজ (Chenab Rail BridgeInauguration) হিসেবে স্বীকৃত। এই ব্রিজটি প্রায় ৩৫৯ মিটার উঁচু, যা আইফেল টাওয়ারের থেকেও ৩৫ মিটার বেশি। নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৪৮৬ কোটি টাকা এবং এটি ভূমিকম্প, প্রবল বাতাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন Join Now

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা

প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাশ্মীর সফর শুধুমাত্র একটি উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের ঐক্য এবং অদম্য মানসিকতার প্রকাশ। পহেলগাঁও হামলার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই সফর হওয়া, এবং তার মধ্যেই এত বড় রেল সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন, বার্তা দেয় যে উন্নয়নই কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ এবং সন্ত্রাস কখনোই ভারতকে রুখতে পারবে না।

বন্দে ভারত এক্সপ্রেস: কাশ্মীরের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন

প্রধানমন্ত্রী মোদী চেনাব ব্রিজ (Chenab Rail BridgeInauguration) থেকে ট্রেনে চড়ে পৌঁছন কাটরায় এবং সেখানেই দুটি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধন করেন। একটি বারামুল্লা থেকে কাটরা এবং অপরটি কাটরা থেকে বারামুল্লা চলবে। এই ট্রেনগুলো ৭ জুন থেকে সপ্তাহে ৬ দিন পরিষেবা দেবে।

অবশ্যই দেখবেন: শুধু মেট্রো নয়, এবার দক্ষিণেশ্বর স্টেশনেও রেলের মেগা আপগ্রেড! জেনে নিন কী কী বদল আসছে

এই বন্দে ভারত ট্রেন বিশেষভাবে কাশ্মীরের আবহাওয়া মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও চলতে সক্ষম এই ট্রেনগুলির জানালায় থাকবে বিশেষ হিটিং সিস্টেম, যাতে বরফ জমে না যায়। এছাড়া থাকবে উন্নত হিটিং সিস্টেম, থার্মালি ইনস্যুলেটেড টয়লেট, হট ওয়াটার ফ্যাসিলিটি এবং এয়ার ড্রায়ার সিস্টেম যা ট্রেনের ব্রেকিং সিস্টেমকে সচল রাখবে।

অবশ্যই দেখবেন: আজ ৬ জুন, ব্যাতিপাত যোগে জীবন বদলে যাবে এই ৩ রাশির! কী বলছে রাশিফল?

কাশ্মীরের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত

রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, এই দ্রুতগতির ট্রেন কেবল যাত্রী পরিষেবা নয়, বরং কাশ্মীরের হস্তশিল্প, চেরি এবং অন্যান্য কৃষিপণ্যের রপ্তানিতেও বিপ্লব ঘটাবে। ইতিমধ্যেই চেরি রপ্তানির পরীক্ষামূলক চালান সফল হয়েছে। এই রেল যোগাযোগের মাধ্যমে কাশ্মীরের স্থানীয় অর্থনীতি একটি নতুন মাত্রা পাবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নের ধাপ

এই প্রকল্পটির মোট দৈর্ঘ্য ২৭২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২০৯ কিমি ইতিমধ্যেই চারটি ধাপে চালু হয়েছে:

  • ২০০৯: কজিগুন্ড থেকে বারামুল্লা (১১৮ কিমি)
  • ২০১৩: বনিহাল থেকে কজিগুন্ড (১৮ কিমি)
  • ২০১৪: উধমপুর থেকে কাটরা (২৫ কিমি)
  • ২০২৪: বনিহাল থেকে সঙ্গলদান (৪৮.১ কিমি)
  • ২০২৪ (ডিসেম্বর): সঙ্গলদান থেকে রেইয়াসি (৪৬ কিমি)

কাটরা-বনিহাল সেকশন: প্রকল্পের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অংশ

এই ১১১ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশের ৮৭% অর্থাৎ প্রায় ৯৭.৪ কিমি সুরঙ্গের মধ্যে। এখানে রয়েছে ৪৯টি ব্রিজ, ৩৬টি সুরঙ্গ এবং ৯৪৩টি ছোট-বড় ব্রিজ। দেশের সবচেয়ে বড় রেলসুরঙ্গ T-50, যার দৈর্ঘ্য ১২.৭৭ কিমি। নির্মাণে খরচ হয়েছে ৪৩,৭৮০ কোটি টাকার বেশি এবং সমস্ত সুরঙ্গ আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সিসিটিভি ও ফায়ার সেফটি দিয়ে সজ্জিত।

কাশ্মীরের জন্য এই উন্নয়নমূলক পদক্ষেপগুলি শুধুমাত্র একটি গঠনমূলক পরিকাঠামো তৈরি করছে না, বরং মানুষের মনেও এক নতুন আশা ও আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে। চেনাব ব্রিজ ও বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের মাধ্যমে উপত্যকার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিও আজ ভারতের মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এই পথেই কাশ্মীর এগিয়ে যাবে শান্তি, স্থিতি এবং সমৃদ্ধির দিকে।