এই মুহূর্তে গোটা বাংলা জুড়ে চলছে বৈশাখের খরতাপ। রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ঘরে পৌঁছে গিয়েছে। আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে হাঁসফাঁস করছেন সাধারণ মানুষ। কলকাতা, হাওড়া, বর্ধমান, মেদিনীপুর, বীরভূম-সহ একাধিক জেলায় জারি হয়েছে তাপপ্রবাহ সতর্কতা (Heatwave Alert)। বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছেন রাজ্যবাসী। কিন্তু বৃষ্টির বদলে এবার আসছে আরও বড়ো আশঙ্কা— শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ (Cyclone Shakti)।
বৈশাখ মানেই ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্ক
মে মাস মানেই বঙ্গোপসাগরের উপরে ঘনীভূত নিম্নচাপ এবং সেখান থেকেই তৈরি হওয়া শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। প্রতি বছরই এপ্রিল-মে মাসে একাধিক ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরে জন্ম নেয় এবং তা ভারতের ও বাংলাদেশ উপকূলে আছড়ে পড়ে। গত কয়েকবছরের পরিসংখ্যান বলছে, এই সময়েই আমফান, ইয়াস, মোখা-র মতো বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হয়েছে দুই বাংলা। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখা হয়েছে ‘শক্তি’ (Cyclone Shakti)। নামটি শ্রীলঙ্কার পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত।
ঘূর্ণিঝড় শক্তি: কোথা থেকে আসছে, কখন আঘাত হানবে?
আলিপুর আবহাওয়া অফিস এবং বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (BWOT)-এর সূত্র অনুযায়ী, আগামী ১৬ থেকে ১৮ মে-র মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। এই ঘূর্ণাবর্ত ধীরে ধীরে শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে এবং তা থেকেই তৈরি হতে পারে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’। আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, ২৩ থেকে ২৮ মে-র মধ্যে এই ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরের ওপর তৈরি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় শক্তি (Cyclone Shakti) যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তাহলে এটি ভারতের ওড়িশা উপকূল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূল পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে প্রভাবিত করতে পারে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চল।
কোথায় ল্যান্ডফল করবে ঘূর্ণিঝড় শক্তি (Cyclone Shakti)?
আপাতত ঘূর্ণিঝড় শক্তির সম্ভাব্য ল্যান্ডফল (Cyclone Landfall) নির্ধারণ করা না গেলেও, বিভিন্ন মডেলের পূর্বাভাস বলছে, ২৪ থেকে ২৬ মে-র মধ্যে এটি ভারতের ওড়িশা উপকূল বা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। এই সময় উপকূলবর্তী অঞ্চলে ৮০–১০০ কিমি/ঘণ্টা বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তার সঙ্গে থাকবে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি ও সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় জলোচ্ছ্বাস (Storm Surge)।
তারিখ (২০২৫) | সম্ভাব্য ঘটনা |
---|---|
১৬-১৮ মে | দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হতে পারে |
২০ মে | সমুদ্রে যাওয়া নিষেধাজ্ঞা শুরু হতে পারে মৎস্যজীবীদের জন্য |
২৩-২৮ মে | ‘শক্তি’ ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি ও শক্তি বৃদ্ধি |
২৪-২৬ মে | সম্ভাব্য ল্যান্ডফল (ওড়িশা/চট্টগ্রাম উপকূলে) |
প্রস্তুতি নিতে শুরু করল উপকূলবর্তী জেলা প্রশাসন
আলিপুর আবহাওয়া দফতর থেকে এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত সতর্কতা জারি না হলেও, পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা সহ উপকূলবর্তী জেলাগুলি ইতিমধ্যেই প্রাথমিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। প্রতিটি ব্লকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা দল (NDRF) এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (SDRF) কে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের ২০ মে’র পর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতামত
ঘূর্ণিঝড় শক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ তার ভেরিফায়েড সোশ্যাল পেজে জানিয়েছেন, “বঙ্গোপসাগরে প্রচুর জলীয়বাষ্প এবং উচ্চতাপমাত্রার কারণে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই একটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। এর নাম হবে ‘শক্তি’। বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চল এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সবথেকে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।”
তাঁর মতে, এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে অতিভারী বর্ষণ, নদী তীরবর্তী এলাকায় প্লাবন এবং জনজীবনে চরম ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
‘শক্তি’র পাশাপাশি বর্ষার আগমনেও বড় আপডেট
এই ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর (Monsoon 2025) আগমন সম্পর্কেও বড় আপডেট দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া অফিস। জানা গিয়েছে, দক্ষিণ আন্দামান সাগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপরে ইতিমধ্যেই একটি ঘূর্ণাবর্ত অবস্থান করছে, যার প্রভাবে আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ১৫–১৭ মে’র মধ্যেই আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বর্ষা ঢুকে পড়বে। তবে কেরালা এবং পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার প্রবেশ সংক্রান্ত এখনও কোনো নির্দিষ্ট তথ্য নেই।
কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
এই মুহূর্তে উপকূলবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা:
- ২০ মে থেকে সমুদ্রে যাওয়া বন্ধ রাখুন।
- মোবাইলে সরকারি সতর্কবার্তা ও আপডেট লক্ষ্য করুন।
- প্রয়োজনে নিকটস্থ ত্রাণ শিবিরে চলে যান।
- বাড়িতে জরুরি ওষুধ, শুকনো খাবার, ব্যাটারি, মোবাইল চার্জার সংরক্ষণ করে রাখুন।
- কৃষকদের ফসল বাঁচাতে আগাম ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
অতীতের অভিজ্ঞতা
ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ (২০২০) এবং ‘ইয়াস’ (২০২১)-এর তাণ্ডব এখনও মানুষের স্মৃতিতে টাটকা। আমফান আছড়ে পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে এবং কলকাতাতেও বিস্তর ক্ষতি করেছিল। ইয়াস-ও উপকূলবর্তী গ্রামাঞ্চলে বাঁধ ভেঙে প্লাবনের সৃষ্টি করেছিল। ঘূর্ণিঝড় শক্তি যদি তেমনই ভয়ঙ্কর রূপ নেয়, তবে ফের একই ধরনের বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় নাম | সাল | প্রভাবিত এলাকা | ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ (আনুমানিক) |
---|---|---|---|
আমফান | ২০২০ | পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ | ১ লাখ কোটি টাকা+ |
ইয়াস | ২০২১ | ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ | ২০০০ কোটি টাকা+ |
মোখা | ২০২৩ | মায়ানমার, বাংলাদেশ | ৫০০ কোটি টাকা+ |
শক্তি | ২০২৫ (সম্ভাব্য) | ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, খুলনা, চট্টগ্রাম | অজানা |
বৈশাখের খরতাপ এবং অস্বস্তিকর আবহাওয়ার মাঝে ‘শক্তি’ নামের সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় এখন রাজ্যের মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। আলিপুর ও বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এটি অত্যন্ত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। উপকূলবর্তী অঞ্চলের মানুষদের এখন থেকেই সতর্ক থাকা, সরকারি নির্দেশ মেনে চলা এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া একান্ত জরুরি। প্রকৃতির এই রুদ্ররূপ মোকাবিলায় একমাত্র সচেতনতাই পারে প্রাণহানির সম্ভাবনা কমাতে।
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ নিয়ে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্ন ১: ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ কী?
উত্তর:
‘শক্তি’ একটি সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়, যা মে ২০২৫-এ বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে চলেছে। এটি দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত থেকে সৃষ্টি হয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। নামটি শ্রীলঙ্কার দেওয়া।
🔹 প্রশ্ন ২: ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ কবে আছড়ে পড়তে পারে?
উত্তর:
বর্তমান পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২৪ থেকে ২৬ মে’র মধ্যে এটি ভারতের ওড়িশা ও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলের মধ্যে কোনো এক স্থানে ল্যান্ডফল করতে পারে।
🔹 প্রশ্ন ৩: পশ্চিমবঙ্গে এর প্রভাব কতটা হতে পারে?
উত্তর:
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর ও সুন্দরবন এলাকায় ঝড়ো হাওয়া, প্রবল বর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে। বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনাও রয়েছে।
🔹 প্রশ্ন ৪: ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ কোন কোন এলাকায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে?
উত্তর:
সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলি হল –
ভারতের ওড়িশা উপকূল
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশ
বাংলাদেশের খুলনা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল
🔹 প্রশ্ন ৫: ‘শক্তি’ ঘূর্ণিঝড়ের ফলে কি ভারি বর্ষণ হতে পারে?
উত্তর:
হ্যাঁ, সম্ভাব্য ল্যান্ডফলকে কেন্দ্র করে উপকূলবর্তী এলাকায় ভারি থেকে অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে বন্যা, নদী উপচে পড়া ও জলমগ্নতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
🔹 প্রশ্ন ৬: সাধারণ মানুষ কীভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন?
উত্তর:
আবহাওয়া দফতরের সতর্কতা নিয়মিত শুনুন
নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন
অতিরিক্ত খাদ্য, পানীয় জল ও ওষুধ মজুত রাখুন
মোবাইলে চার্জ, পাওয়ার ব্যাঙ্ক ও টর্চ প্রস্তুত রাখুন
🔹 প্রশ্ন ৭: মৎস্যজীবীদের জন্য কী পরামর্শ?
উত্তর:
আবহাওয়াবিদরা ২০ মে থেকে সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ১৬-১৮ মে’র মধ্যে ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হলে তা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় আগাম সতর্কতা নেওয়া জরুরি।
🔹 প্রশ্ন ৮: ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ কি আমফান বা ইয়াসের মতো ধ্বংসাত্মক হতে পারে?
উত্তর:
বর্তমানে এর শক্তির মাত্রা পূর্বাভাসের স্তরে রয়েছে। তবে আবহাওয়াবিদদের মতে এটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে, যার ফলে ইয়াস বা আমফানের মতো ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না
নানা ধরনের খবরের লেটেস্ট আপডেট পেতে এখনই ফলো করুন আমাদের Tollywood Online কে।
অবশ্যই দেখবেন: তীব্র গরমে হাঁসফাঁস রাজ্য, হঠাৎ সুখবর! আগেভাগেই আসছে বর্ষা? জানুন মৌসম ভবনের বার্তা
📅 বিষয় | 🔗 লিংক/বিবরণ |
---|---|
🌤 আবহাওয়া আপডেট | ✅ প্রতিদিনের আবহাওয়ার খবর জানতে আমাদের ফলো করুন |
🔮 রাশিফল | ✅ দৈনিক রাশিফল ও জ্যোতিষশাস্ত্রভিত্তিক পরামর্শ |
💬 হোয়াটসঅ্যাপ | 👉 WhatsApp গ্রুপে যোগ দিন |
📢 টেলিগ্রাম | 👉 Telegram চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন |
📰 অন্যান্য আপডেট | ✅ View More |