দুয়ারে রেশন ব্যবস্থা বন্ধ! জানুন কারা আর পাবেন না ঘরে বসে রেশন

মে মাসের শেষেই রাজ্যবাসীর মধ্যে উদ্বেগ ছড়াল এক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে। বহুল প্রচলিত এবং জনবান্ধব বলে পরিচিত “দুয়ারে রেশন” (Door to Door Ration) পরিষেবা বন্ধের পথে হাঁটছে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার। জুন মাস থেকেই এই পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেই জানানো হয়েছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গে এখনই বন্ধ হচ্ছে না এই ...

Published on:

Door to Door Ration

মে মাসের শেষেই রাজ্যবাসীর মধ্যে উদ্বেগ ছড়াল এক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে। বহুল প্রচলিত এবং জনবান্ধব বলে পরিচিত “দুয়ারে রেশন” (Door to Door Ration) পরিষেবা বন্ধের পথে হাঁটছে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার। জুন মাস থেকেই এই পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেই জানানো হয়েছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গে এখনই বন্ধ হচ্ছে না এই পরিষেবা, কিন্তু খরচের যে অঙ্ক উঠে আসছে, তা ভবিষ্যতের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

দুয়ারে রেশন প্রকল্প কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ? What is the Door to Door Ration Scheme and why is it important?

২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যবাসীর কাছে প্রতিশ্রুতি দেন, রেশন ব্যবস্থাকে আরও সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা হবে। এর ফলস্বরূপ চালু হয় “দুয়ারে রেশন”(Door To Door Ration System) প্রকল্প, যার মাধ্যমে রেশন দোকানে না গিয়ে সরাসরি উপভোক্তার বাড়িতে চাল, গম সহ অন্যান্য রেশন সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়। এই প্রকল্পটি গরিব ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য একটি বিশাল সুবিধা হিসেবে বিবেচিত হয়, বিশেষ করে যাঁরা অসুস্থ, বয়স্ক বা রেশন দোকানে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে অক্ষম।

বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে Join Now

অবশ্যই দেখবেন: অবশেষে BSNL-এ আসছে 5G! পরিষেবা শুরু কবে, আপনার শহর কি তালিকায় রয়েছে?

অন্ধ্রপ্রদেশে বন্ধ হচ্ছে কেন?

সূত্র অনুযায়ী, অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার ২০ মে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, শুধুমাত্র ৬৫ বছরের ঊর্ধ্ব নাগরিক এবং দৃষ্টিহীন, অঙ্গহীন, বা শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য এই পরিষেবা বজায় থাকবে। বাকি সকল উপভোক্তাদের নির্দিষ্ট রেশন দোকান থেকেই রেশন সংগ্রহ করতে হবে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত খরচ। অন্ধ্র সরকার জানিয়েছে, বছরে প্রায় ১,৮০১ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে এই পরিষেবা রক্ষণাবেক্ষণে। তার মধ্যে রয়েছে:

গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন Join Now
  • খাদ্যশস্য লিকেজ ও অপচয়।
  • ডেলিভারি গাড়ি মাসের অর্ধেক সময় বসে থাকা।
  • উচ্চ সংরক্ষণ খরচ।
  • হিসাবের অসঙ্গতি।

এই বিশাল খরচ সামলাতে না পেরেই প্রকল্পটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অবশ্যই দেখবেন: ‘দাদাগিরি’ থেকে বিদায় সৌরভ গাঙ্গুলির! নতুন সিজেনে কাকে দেখা যাবে সঞ্চালকের ভূমিকায়?

পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা কী?

পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত দুয়ারে রেশন পরিষেবা চালু আছে এবং বন্ধ করার কোনও সরকারি ঘোষণা হয়নি। বরং তৃণমূল সরকার এটিকে একটি জনমুখী প্রকল্প হিসেবে তুলে ধরছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্য সরকার ৪০৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করছে প্রতি বছর শুধুমাত্র জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় থাকা চাল ও গম বিতরণে। রাজ্যের খাদ্যসাথী প্রকল্পের খরচ এতে অন্তর্ভুক্ত নয়। ফলে প্রকৃত খরচের অঙ্ক আরও অনেক বেশি।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক

এই প্রকল্প রক্ষার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু। তাঁর মতে, ‘একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই গ্রাহকদের সুবিধা বজায় রাখতে এই ব্যয়বহুল প্রকল্প চালু রেখেছে।

অন্যদিকে, তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় রেশন ডিলারদের জন্য কমিশন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে চিঠি পাঠিয়েছেন। বর্তমানে ডিলাররা কুইন্টাল প্রতি ৯০ টাকা কমিশন পান, যা বাড়িয়ে ২০০ টাকা করার দাবি উঠেছে। কিন্তু এখনও কেন্দ্রের তরফে কোনও সদুত্তর আসেনি।

দুয়ারে রেশন ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কী?

যদিও পশ্চিমবঙ্গ সরকার আপাতত পরিষেবা বন্ধ করছে না, তবে অন্ধ্রপ্রদেশের সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্ট, খরচের দিকটি সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ:

  • অতিরিক্ত বাজেট চাপ
  • রক্ষণাবেক্ষণে দুর্নীতি বা অপচয়
  • পর্যাপ্ত রেশন সরবরাহ না থাকা

সম্ভাব্য সমাধান:

প্রযুক্তির মাধ্যমে সিস্টেম মনিটরিং

  • রেশন ডিলারদের প্রশিক্ষণ
  • এলাকার ভিত্তিতে পরিষেবা সীমিত করা

জনস্বার্থ বনাম আর্থিক ভারসাম্য

দুয়ারে রেশন পরিষেবা নিঃসন্দেহে মানুষের জীবনে স্বস্তি এনেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, আর্থিক ভারসাম্য বজায় রেখে কীভাবে এই প্রকল্পকে দীর্ঘমেয়াদী করা যায়? অন্ধ্রপ্রদেশের উদাহরণ দেখিয়ে অনেকেই বলছেন, পশ্চিমবঙ্গকেও বিকল্প মডেলের কথা ভাবতে হবে। অন্যদিকে, তৃণমূল সরকার বলছে, জনস্বার্থের প্রশ্নে আপস করা যাবে না। এই অবস্থায় আগামী দিনে প্রকল্পটি চালু রাখা হবে কিনা, বা কোনও রূপান্তর আনা হবে কিনা, তা সময়ই বলবে। তবে আপাতত পশ্চিমবঙ্গবাসীর জন্য স্বস্তির খবর যে, দুয়ারে রেশন প্রকল্প এখনই বন্ধ হচ্ছে না

অবশ্যই দেখবেন: ভলভোর পর বড়সড় ধামাকা! উত্তরবঙ্গের ৪ রুটে ফিরছে NBSTC-র AC বাস পরিষেবা, দেখে নিন রুট ও তারিখ!