Puja Vacation From Today: কলকাতা মানেই দুর্গাপুজোর আনন্দে ভরপুর শহর। প্যান্ডেলের আলো, ঢাকের শব্দ আর মানুষের ভিড়—সবটাই এই সময়ের আলাদা আবহ তৈরি করে। তবে এবছর পুজোর আগে একেবারেই অন্য ছবি দেখা গেল। টানা প্রবল বর্ষণে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে শহর কলকাতা। রাস্তাঘাট জলে ভাসছে, সাধারণ মানুষের চলাচল কার্যত বন্ধ। এই পরিস্থিতিতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বড় ঘোষণা করলেন—আজ থেকেই শুরু হচ্ছে পুজোর ছুটি (Puja Vacation from Today)।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে সিদ্ধান্ত
সাধারণত স্কুল-কলেজে পুজোর ছুটি কিছুটা নির্দিষ্ট সময় পরে শুরু হয়। কিন্তু এবছর ব্যতিক্রম। নিম্নচাপের জেরে টানা মেঘভাঙা বৃষ্টি শহরজুড়ে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। অনেক বাড়ির একতলায় জল ঢুকে গেছে, অলিগলিতে হাঁটুজল জমেছে। পরিবেশের এই পরিস্থিতি বিবেচনা করেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, সরকারি স্কুল ও কলেজগুলিতে আজ থেকেই ছুটি থাকবে।
এখানেই শেষ নয়। আইসিএসসি এবং সিবিএসসি বোর্ডগুলিকেও তিনি একইভাবে পুজোর ছুটি (Puja Vacation from Today) শুরু করার অনুরোধ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আগামী দু’দিন অনলাইনে ক্লাস করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে পড়াশোনার ক্ষতি না হয়। একইসঙ্গে বেসরকারি অফিসগুলোকেও মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করেছেন দু’দিনের জন্য ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু করতে।
মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি বার্তা
এক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “আজ ও কাল রাস্তায় বেরোবেন না। স্কুল, কলেজগুলিতে আজই ছুটি দিয়ে দিচ্ছি। সরকারি কর্মীরা বাড়ি থেকে কাজ করতে পারবেন। বেসরকারি অফিসগুলোকেও অনুরোধ করছি, ওয়ার্ক ফ্রম হোম করুক। কোভিডের সময় যেমন বাড়ি থেকেই অফিস চালানো হয়েছিল, তেমনটাই করা হোক।” তার এই মন্তব্য স্পষ্ট করে দিচ্ছে, শহরের পরিস্থিতি যথেষ্ট গুরুতর। একদিকে মানুষ চায় উৎসবের আনন্দে মেতে উঠতে, অন্যদিকে প্রবল বৃষ্টিতে সেই আনন্দকে কার্যত থামিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতি।

পরীক্ষা স্থগিত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অচল
শুধু স্কুল-কলেজ নয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। বৃষ্টির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী পড়লেন নতুন সমস্যায়। তবে অধিকাংশই মেনে নিচ্ছেন যে এই অবস্থায় পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়।
আসলে বাস্তব ছবিটা হচ্ছে, সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত চলেছে। ফলে শহরের বহু জায়গায় জল জমে গিয়েছে। স্কুল-কলেজে যাতায়াত কার্যত অসম্ভব। এই অবস্থায় পুজোর ছুটি (Puja Vacation from Today) আগে থেকে ঘোষণা ছাড়া উপায়ও ছিল না।
পুরসভার বক্তব্য ও সময়ের হিসাব
কলকাতা পুরসভার মেয়র পরিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ জানিয়েছেন, এই জলমগ্ন পরিস্থিতি অন্তত ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা স্থায়ী হতে পারে। অর্থাৎ, এখনই দ্রুত স্বস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা কম। পুরসভার তরফে অবশ্য জল নামানোর চেষ্টা চলছে, কিন্তু টানা বৃষ্টির ফলে সেই কাজ বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আবহাওয়া দফতরও জানিয়েছে, মঙ্গলবার সারাদিন আকাশ মেঘলা থাকবে এবং হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি চলবে। তবে নতুন করে ভারী বর্ষণ হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। গঙ্গায় জোয়ার ও বান আসার সম্ভাবনা থাকায় শহরের জল আরও বেড়ে যেতে পারে।
নতুন নিম্নচাপের আশঙ্কা
যা নিয়ে আরও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা হলো আবহাওয়া দফতরের নতুন পূর্বাভাস। দফতর জানিয়েছে, সপ্তাহান্তে পঞ্চমী থেকে আবার একটি নতুন নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। এর ফলে আবারও প্রবল বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ, এখনও শহরবাসীর কপালে চিন্তার ভাঁজ থেকেই যাচ্ছে।
শহরের মানুষজন তাই একদিকে আনন্দিত যে পুজোর ছুটি (Puja Vacation from Today) শুরু হওয়ায় পড়ুয়ারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে, অন্যদিকে চিন্তিতও বটে—কারণ ছুটির আসল আনন্দ উপভোগ করতে গেলে তো শুকনো রাস্তাঘাট, পরিষ্কার আকাশ প্রয়োজন।
নাগরিক জীবনের প্রভাব
টানা বৃষ্টিতে শহরের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ ব্যাহত হয়েছে। অফিস যাতায়াত থেকে শুরু করে দোকানপাটের ব্যবসা—সবকিছুই প্রায় থমকে গেছে। এর সঙ্গে আবার দুর্গাপুজোর প্রস্তুতিও ভেস্তে যাচ্ছে। মণ্ডপে কাজ বন্ধ, কাপড় ভিজে নষ্ট, আলো-সাজসজ্জার কাজ থমকে গেছে। এমন অবস্থায় পুজোর ছুটি (Puja Vacation from Today) শহরবাসীর কাছে কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর বটে। অন্তত মানুষজন অপ্রয়োজনীয় বাইরে না বেরিয়ে ঘরে থেকে নিরাপদে থাকতে পারবেন।
কলকাতার জন্য এবারের পুজোর শুরুটা একেবারেই অন্যরকম। আনন্দের বদলে উদ্বেগ আর বৃষ্টির ভয়ই এখন বড় বিষয়। তবে এই শহর বারবার দেখিয়েছে, বিপর্যয়ের মধ্যেও আবার ঘুরে দাঁড়াতে জানে। আশা করা যায়, আবহাওয়া দ্রুত স্বাভাবিক হবে এবং পুজোর আসল আনন্দে মেতে উঠতে পারবে শহর। মুখ্যমন্ত্রীর আজ থেকেই পুজোর ছুটি (Puja Vacation from Today) ঘোষণা হয়তো সেই আনন্দের পথে প্রথম পদক্ষেপ।
Disclaimer
এই প্রতিবেদনটি সাধারণ তথ্যের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে। এখানে উল্লেখিত তথ্য কোনও সরকারি নোটিশ বা অফিসিয়াল ঘোষণার বিকল্প নয়। পাঠকদের অনুরোধ করা হচ্ছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারি দপ্তরের নির্দেশিকা অনুসরণ করুন।
অবশ্যই দেখবেন: আজ ঘরেই থাকুন! গঙ্গার জলে ভাসছে শহর, সতর্ক করলেন ফিরহাদ হাকিম