কলকাতার লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত মেট্রোরেল (Kolkata Metro) এবার শহরের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিষেবা শুরু করতে চলেছে। এসপ্ল্যানেড-শিয়ালদহ মেট্রো করিডরের ২.৬ কিমির নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। জুলাই মাসেই এই করিডরের সিলিংয়ের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার অর্থ, খুব শিগগিরই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পূর্ণাঙ্গ পরিষেবা মিলতে চলেছে। যাত্রীদের বহু প্রতীক্ষিত ধর্মতলা-শিয়ালদহ সংযোগ বাস্তবায়িত হতে চলেছে অবশেষে।
কলকাতা মেট্রোর (Kolkata Metro) নতুন যুগে পদার্পণ
কলকাতা শহরের গর্ব, দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ রেল ব্যবস্থা—কলকাতা মেট্রো (Kolkata Metro)—দিন দিন নতুন উচ্চতায় পৌঁছচ্ছে। বর্তমানে কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, এমনকি শহরতলি অঞ্চল পর্যন্ত মেট্রোর পরিষেবা বিস্তৃত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একাধিক নতুন করিডোর, যার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প (East-West Metro Corridor)। এই করিডোরে হাওড়া থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত রেল চলবে, যার মধ্যে ধর্মতলা (এসপ্ল্যানেড) থেকে শিয়ালদহ অংশ ছিল সবচেয়ে বিলম্বিত। কিন্তু সম্প্রতি মিলল বড় আপডেট—এই বহু প্রতীক্ষিত এসপ্ল্যানেড-শিয়ালদহ করিডরের কাজ শেষের পথে। জানা গিয়েছে, জুলাই মাসেই শেষ হতে চলেছে গুরুত্বপূর্ণ সিলিংয়ের কাজ, যা পরিষেবা চালুর দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।
কী রয়েছে এই প্রকল্পে?
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প (Howrah to Sector V Metro) মূলত কলকাতা শহর ও শহরতলি এলাকার পূর্ব ও পশ্চিম অংশকে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সংযুক্ত করার জন্য পরিকল্পিত। এই রুটে হাওড়া থেকে শুরু করে এসপ্ল্যানেড, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, শিয়ালদহ, ফিনিক্স, সল্টলেক স্টেডিয়াম হয়ে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত পরিষেবা থাকবে।
এই প্রকল্পের বিশেষত্ব:
- পৃথিবীর গভীরতম মেট্রো স্টেশন (Howrah Metro Station)
- হুগলি নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল
- বহু প্রযুক্তিনির্ভর টানেল বোরিং (Tunnel Boring Machines – Chundy & Urvi)
এসপ্ল্যানেড-শিয়ালদহ মেট্রো লাইন: আপডেট ও অগ্রগতি
এই রুটে ২.৬ কিমি দীর্ঘ অংশে (Sealdah to Esplanade Metro Section) দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণকাজ চলছিল। মূলত বউবাজার অঞ্চলের জটিল ভূগর্ভস্থ অবকাঠামো ও ভূগর্ভে জলপথ থাকার কারণে এখানে কাজ খুব ধীরগতিতে হচ্ছিল।
২০১৯ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে টানেল বোরিং মেশিন ‘চুন্ডি’ ও ‘উর্ভি’র মাধ্যমে এখানে দুটি শ্যাফট তৈরি করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বউবাজারে মাটিধস, বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, জলজমা এবং প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে কাজ বারবার থমকে যায়।
তবে, সেইসব বাধা কাটিয়ে অবশেষে কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন (KMRC) শ্যাফট সিলিংয়ের কাজ শুরু করেছে, যা প্রকল্প সমাপ্তির গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে।
জুলাই মাসেই শেষ হবে সিলিংয়ের কাজ
KMRC-এর এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, জুলাই মাসের মধ্যেই এই শ্যাফটগুলির সিলিংয়ের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। আর একবার সেই কাজ শেষ হলেই, ধর্মতলা (Esplanade) থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করিডরের বাকি অংশটি যাত্রী চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।
অবশ্যই দেখবেন: স্মার্ট মিটার প্রকল্পে বড় পরিবর্তন! আপাতত বন্ধ ঘরে ঘরে বসানো, জারি হল নয়া বিজ্ঞপ্তি
যাত্রীদের জন্য সুবিধা কতটা বাড়বে?
বর্তমানে, সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা চালু রয়েছে। তবে ধর্মতলা বা এসপ্ল্যানেড স্টেশন থেকে মেট্রো ধরতে গিয়ে যাত্রীদের আলাদা যানবাহনে চেপে শিয়ালদহ যেতে হয়। এতে সময়, খরচ এবং ভোগান্তি—সবই বেড়ে যেত।
এই নতুন সংযোগ চালু হলে—
- শিয়ালদহ থেকে সরাসরি ধর্মতলা পৌঁছানো সম্ভব হবে।
- উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা থেকে পূর্ব কলকাতায় যাওয়া সহজ হবে।
- সেক্টর ফাইভ এবং হাওড়া-শিয়ালদহের কর্মজীবীদের যাত্রাপথ অনেক কমবে।
- ট্র্যাফিক কমবে, পরিবেশ দূষণ হ্রাস পাবে।
প্রযুক্তিগত দিক ও চ্যালেঞ্জ
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এই প্রকল্পে ব্যবহৃত হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। ভূগর্ভস্থ এই লাইন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে হাই প্রিসিশন টানেল বোরিং মেশিন, যা মিলিমিটার-স্তরের নির্ভুলতা বজায় রেখে কাজ করেছে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বউবাজার অঞ্চলে টানেল খোঁড়ার সময় পানির স্তর ও পুরনো বাড়ির নিচ দিয়ে যাওয়া লাইন। এজন্য বহুবার কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। এছাড়াও বউবাজারে ধস নামার কারণে বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেটি বড়সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছিল। KMRC ধাপে ধাপে সেই সমস্যা সমাধান করে সুরক্ষার বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে এবং তবেই শেষ পর্যায়ের কাজ শুরু করেছে।
অবশ্যই দেখবেন: ৬% DA বাড়ল, বকেয়া মিলবে জুনেই! পে কমিশন নিয়ে দুর্দান্ত আপডেট রাজ্য কর্মীদের জন্য
সম্ভাব্য উদ্বোধনের তারিখ ও পরবর্তী ধাপ
যদিও অফিসিয়ালি এখনও কোনও নির্দিষ্ট উদ্বোধনের দিন ঘোষণা করা হয়নি, তবে জুলাইয়ের মধ্যেই কাজ সম্পূর্ণ হলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই উদ্বোধনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না আধিকারিকেরা। এমনকি জুলাইয়ের শেষে পরীক্ষামূলক ট্রায়াল রান শুরু হতে পারে। ইতিমধ্যে রেল সুরক্ষা কমিশনের (Commissioner of Railway Safety) অনুমোদন পাওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা, নিরাপত্তা যাচাই ও টেকনিক্যাল ট্রায়ালের পরেই যাত্রী পরিষেবা চালু হবে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও বিস্তৃতি
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো পরিষেবা শুরু হয়ে গেলে এটি হবে কলকাতার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ করিডোর, যেটি পূর্ব-পশ্চিম কলকাতাকে জুড়ে দেবে। আগামী কয়েক বছরে এই মেট্রোর যাত্রী সংখ্যা ১০ লক্ষ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সঙ্গে কলকাতার আরও কিছু মেট্রো করিডোর নির্মাণাধীন:
- জোকা-তারাতলা রুট (Joka-Taratala Metro)
- নিউ গড়িয়া-রুবি-এয়ারপোর্ট মেট্রো (New Garia to Airport Metro)
- বারানগর-ব্যারাকপুর রুট (Baranagar to Barrackpore Metro)
এসব মিলে আগামী দশকে কলকাতা হবে দেশের অন্যতম বৃহৎ মেট্রো নেটওয়ার্ক শহর।
শহরের যাতায়াত ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চলেছে এসপ্ল্যানেড-শিয়ালদহ মেট্রো করিডর। বহু প্রতীক্ষার পর এই প্রকল্প সফল বাস্তবায়নের পথে। কলকাতার দৈনিক কয়েক লক্ষ যাত্রীর যাত্রাপথ হবে আরও সহজ, আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী। জুলাই মাসেই এই পরিষেবা চালু হলে তা হবে কলকাতা মেট্রোর এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
অবশ্যই দেখবেন: মা লক্ষ্মীর কৃপায় আজকের দিনে ভাগ্য খুলবে ৩ রাশির! আজকের রাশিফল, ১২ জুন
📅 বিষয় | 🔗 লিংক/বিবরণ |
---|---|
🌤 আবহাওয়া আপডেট | ✅ প্রতিদিনের আবহাওয়ার খবর জানতে আমাদের ফলো করুন |
🔮 রাশিফল | ✅ দৈনিক রাশিফল ও জ্যোতিষশাস্ত্রভিত্তিক পরামর্শ |
💬 হোয়াটসঅ্যাপ | 👉 WhatsApp গ্রুপে যোগ দিন |
📢 টেলিগ্রাম | 👉 Telegram চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন |
📰 অন্যান্য আপডেট | ✅ View More |