ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে তোলপাড় নেটপাড়া! মিমের নয়া ট্রেন্ডে দেবকে কী বলছে নেটিজেনরা?

১৯৮৩ থেকে ২০২৫ — দীর্ঘ ৪২ বছর কেটে গেলেও ঘাটালবাসীর দুর্দশার অবসান হয়নি। ফি বছর বর্ষা এলেই ডুবে যায় পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমা। বছরের পর বছর ধরে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান (Ghatal Master Plan) নিয়ে প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। এই পরিস্থিতিতে ঘাটাল এখন রাজনীতি, কটাক্ষ ও মিমের কেন্দ্রবিন্দু। অভিনেতা-সাংসদ ...

Published on:

Ghatal Master Plan

১৯৮৩ থেকে ২০২৫ — দীর্ঘ ৪২ বছর কেটে গেলেও ঘাটালবাসীর দুর্দশার অবসান হয়নি। ফি বছর বর্ষা এলেই ডুবে যায় পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমা। বছরের পর বছর ধরে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান (Ghatal Master Plan) নিয়ে প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। এই পরিস্থিতিতে ঘাটাল এখন রাজনীতি, কটাক্ষ ও মিমের কেন্দ্রবিন্দু। অভিনেতা-সাংসদ দেব প্রতিশ্রুতি দিলেও মানুষ চায় বাস্তব পদক্ষেপ। এবার প্রশ্ন—আর কতকাল চলবে এই জল-দুর্যোগ?

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

ঘাটাল: বছরের পর বছর একই বন্যা, একই দুর্ভোগ

পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমা বর্ষা এলেই বন্যার ছবি-তে ভরে যায় সংবাদপত্র ও সোশ্যাল মিডিয়া। প্রতি বছর জুন-জুলাই মাসে শিলাবতী, ঝুমি ও কংসাবতী নদীর জল বেড়ে গেলে জলমগ্ন হয়ে পড়ে:

বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে Join Now
  • রাস্তা, ঘরবাড়ি, বাজার
  • হাসপাতাল ও স্কুল
  • চাষের জমি

বিশেষ করে ঘাটাল ও চন্দ্রকোনা ব্লকের মানুষ ভুগছেন জলবন্দি অবস্থায়প্রায় লক্ষাধিক মানুষ প্রতি বছর চলে যান ত্রাণ শিবিরে। বিষধর সাপের উৎপাত, পানীয় জলের সমস্যা, এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার মতো বিপদের মধ্যে দিন কাটে( Ghatal Master Plan)।

গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন Join Now

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান: এক প্রতিশ্রুতির দীর্ঘ ইতিহাস

পর্যায়বছর / সময়কালঘটনা / বিবরণ
সূচনা১৯৮৩রাজ্যের তৎকালীন সেচ মন্ত্রী প্রভাস রায় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের শিলন্যাস করেন।উদ্দেশ্য ছিল ঘাটালের স্থায়ী বন্যা-সমস্যার সমাধান।
থমকে যাওয়া প্রকল্প১৯৯০-এর দশকশুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়।১৯৯৩ সালে স্থানীয়রা ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করেন। কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি হয়নি।
ডিপিআরের ঘোরাফেরা২০০৯–২০১৫২০০৯: রাজ্য প্রকল্প পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয়- ২০১০: গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশনে DPR জমা- ২০১১: কেন্দ্র ফেরত পাঠায় DPR- ২০১৫: কেন্দ্রীয় সরকার সবুজ সংকেত দেয়
বাস্তবায়ন অনুপস্থিত১৯৮৩–২০২৫ (৪২ বছর)৩৪ বছরের বাম শাসন ও ১০+ বছরের তৃণমূল শাসনে কার্যকর বাস্তবায়ন হয়নি।ঘাটাল এখনও বার্ষিক বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।

রাজনীতি বনাম বাস্তবতা: কে দায়ী?

পর্যায় / নেতৃত্বসময়কাল / বছরমূল কার্যকলাপ ও মন্তব্য
বাম আমল১৯৮৩–২০১১– বন্যা প্রতিরোধে শুরুর উদ্যোগ ছিল- মাস্টার প্ল্যানের শিলন্যাস হয় (১৯৮৩)- দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় দৃঢ়তা বা বাস্তবায়ন ছিল না
তৃণমূল আমল২০১১–২০২৫– একাধিকবার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান পুনরুজ্জীবনের আশ্বাস- ২০১৫ সালে DPR-এ কেন্দ্রের অনুমোদন- কিন্তু বাস্তব কাজের চেয়ে কাগজেই সীমাবদ্ধ থেকেছে পরিকল্পনা
সাংসদ দেবের ভূমিকা২০১৪–বর্তমান (২০২৫)– ২০১৪ সাল থেকে ঘাটালের সাংসদ- বন্যা পরিস্থিতিতে ঘাটাল পরিদর্শন ও মানবিক সাহায্য- ২০২৫ সালে বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে মাস্টার প্ল্যানের কাজ শুরু হয়েছে। সময় লাগবে ৪–৫ বছর।”- তবে স্থানীয়দের কটাক্ষ: “৪২ বছর ধরে শুধু সময়ই তো লাগছে!”

সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ (Ghatal Master Plan) মিম ট্রেন্ড

ঘাটালের মানুষ যখন বুক জলে দাঁড়িয়ে জীবন রক্ষা করছেন, তখনই সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ হয়ে উঠেছে কটাক্ষের বিষয়

ভাইরাল কিছু বিষয়:

  • দেবের সুইমিং পুলের ছবি ঘিরে রসিকতা
  • অভিনেতা-সাংসদের ‘জলের রাজা’ তকমা
  • ঘাটালবাসীর দুর্দশাকে ব্যঙ্গ করে বানানো ট্রেন্ডিং মিম

ঘাটালের যন্ত্রণা যেন হয়ে উঠেছে ইনফ্লুয়েন্সারদের ট্রেন্ডিং কনটেন্ট

সাংসদ দেবের বক্তব্য (২০২৫, জুন)

বক্তব্য
“সরকার ও প্রশাসন সবসময় আপনাদের পাশে আছে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। তবে এটা একদিনের কাজ নয়, সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।”

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত প্রধান কাজসমূহ

কাজের ধরনবিস্তারিত বিবরণ
নদীর ড্রেজিংশিলাবতী, ঝুমি, কংসাবতী নদীর পলি পরিষ্কার করা
বাঁধ নির্মাণবন্যার জল ঠেকাতে সুরক্ষিত ও উচ্চ মানের বাঁধ তৈরি
ব্রিজ নির্মাণজলাবদ্ধ এলাকায় যান চলাচলের জন্য সেতু নির্মাণ
কৃত্রিম খাল তৈরিঅতিরিক্ত জল সরানোর জন্য বিকল্প কৃত্রিম খাল কাটা
জমি অধিগ্রহণপ্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ
খাল সংস্কারপুরনো খালগুলি পুনঃনির্মাণ ও পরিষ্কারের কাজ

ঘাটালবাসীর প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন

প্রশ্নঅর্থ / গুরুত্ব
কাজ শুরু হয়েছে, কিন্তু বন্যা পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ কেন?বাস্তবিক কাজের অগ্রগতি কতটুকু?
কতটুকু কাজ বাস্তবে হয়েছে?শুধুই কাগজে পরিকল্পনা, না কি মাটিতে দৃশ্যমান কিছু হয়েছে?
মানুষের জীবনরক্ষার তাগিদে কি আরও জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া যেত না?প্রতিবার ত্রাণ নয়, এবার কি স্থায়ী সমাধান আনা যেত না?

বাস্তবতার মুখোমুখি ঘাটালবাসী

ঘাটালের মানুষের বক্তব্য:

  • “আমরা মরে যাচ্ছি, আর ওরা কাগজে কাজ দেখাচ্ছে।”
  • “মিম নয়, আমরা চাই ঘর, রাস্তা, জল, নিরাপত্তা।”
  • “ত্রাণ চাই না, চাই স্থায়ী সমাধান।”

ঘাটালের কৃষক, দিনমজুর, স্কুলপড়ুয়া, বৃদ্ধ—সবাই একই সুরে বলছেন— “৪২ বছর ধরে কেউ কথা রাখেনি।”

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান এখন আর শুধুই একটি প্রকল্প নয়—এটি বাঙালির প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। সময় এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ার কটাক্ষ নয়, বাস্তব পদক্ষেপের। ঘাটালবাসী এখন চাইছেন না শুধু ত্রাণ—তাঁরা চাইছেন স্বাভাবিক জীবন। ১৯৮৩ সাল থেকে আজ ২০২৫। চার দশকের অপেক্ষা যেন এক প্রহসন। প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন—আর কত বছর লাগবে কথা রাখতে?