কাল থেকে ভারতে বাড়ছে ২৫% শুল্ক! এবার মোদী সরকারের পাল্টা চাল কেমন হবে?

Donald Trump tariff on India 2025: ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক গত কয়েক দশকে ব্যবসা ও কূটনীতির দিক থেকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই সম্পর্কে দেখা দিলো বড় ঝড়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান প্রশাসনের মূল নীতি প্রণেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ভারতের উপর নতুন করে কঠোর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি ...

Updated on:

Donald Trump tariff on India 2025

Donald Trump tariff on India 2025: ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক গত কয়েক দশকে ব্যবসা ও কূটনীতির দিক থেকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই সম্পর্কে দেখা দিলো বড় ঝড়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান প্রশাসনের মূল নীতি প্রণেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ভারতের উপর নতুন করে কঠোর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করলেন। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার জেরে আমেরিকা ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫% বাড়তি শুল্ক (Trump’s Tariff 2025) আরোপ করেছে। আগামীকাল অর্থাৎ ২৭ আগস্ট থেকে এই নতুন নিয়ম কার্যকর হবে। এর ফলে আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্যের উপর কার্যকর শুল্ক দাঁড়াবে মোট ৫০%। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে—এই পরিস্থিতি সামলাবে কীভাবে ভারত?

শুল্ক আরোপের মূল কারণ: রাশিয়ার তেল কেনা

মার্কিন প্রশাসনের দাবি, ভারতের এই বাড়তি শুল্ক আসলে একটি “শাস্তিমূলক পদক্ষেপ”। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার তেলের উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। তবে ভারত সেই তেল কিনে নিজেদের এনার্জি চাহিদা মিটিয়েছে এবং তুলনামূলক কম দামে ক্রুড অয়েল আমদানি করে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে। আমেরিকার মতে, এতে রাশিয়া অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে। তাই ভারতের উপর এই শুল্ক (Donald Trump tariff on India 2025) চাপিয়ে একদিকে সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে ভারতীয় রপ্তানি খাতে বড় আঘাত হানার চেষ্টা হচ্ছে।

কোন কোন খাত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, ওষুধ শিল্প, সেমিকন্ডাক্টর বা এনার্জি রিসোর্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে শুল্ক (Donald Trump tariff on India 2025) বাড়ানো হয়নি। কিন্তু বাকি অনেক গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাতেই এর প্রভাব পড়বে।

প্রধান ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো হলো –

  • টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প
  • গয়না ও মূল্যবান ধাতু
  • চামড়াজাত পণ্য
  • মৎস্যপণ্য
  • কেমিক্যাল ও ফার্মা সংশ্লিষ্ট পণ্য
  • গাড়ির যন্ত্রাংশ শিল্প

এগুলো ভারতের রপ্তানির বড় অংশ। ফলে এই শুল্ক আরোপ সরাসরি প্রভাব ফেলবে দেশীয় শিল্প ও কর্মসংস্থানে।

বাণিজ্য ঘাটতির নতুন সংকট

২০২৪ সালে ভারত-আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ৪৫.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আবার, ভারতের আমেরিকায় বার্ষিক রপ্তানি প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলার, যা ভারতের মোট জিডিপির প্রায় ২.৫%। এই নতুন শুল্ক (Donald Trump tariff on India 2025) কার্যকর হলে ঘাটতি আরও বাড়বে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে রপ্তানিকারক সংস্থা, ক্ষুদ্র শিল্প থেকে শুরু করে সাধারণ শ্রমিক—সবাই সমস্যায় পড়তে পারেন।

অবশ্যই দেখবেন: SLST পরীক্ষা কি সত্যিই পিছোচ্ছে? সুপ্রিম কোর্টে SSC-র নজিরবিহীন পদক্ষেপ!

ভারতের সামনে চারটি সম্ভাব্য পথ

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের সামনে এখন চারটি বড় কৌশল অবলম্বনের সুযোগ রয়েছে।

১. নতুন বাজারের সন্ধান

মার্কিন বাজারের উপর নির্ভরতা কমানো এখন সময়ের দাবি। ভারতকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ, আফ্রিকা কিংবা লাতিন আমেরিকার বাজারের দিকে নজর দিতে হবে। নতুন বাণিজ্য চুক্তি ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বিকল্প বাজার গড়ে তোলা গেলে এই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।

২. পাল্টা শুল্ক আরোপ

২০১৯ সালে যেমন ভারত বাদাম, স্টিল ও আপেলের উপর শুল্ক চাপিয়ে আমেরিকাকে চাপে ফেলেছিল, এবারও সেই পথ খোলা রয়েছে। কৃষিজাত পণ্য, কিছু প্রযুক্তি সামগ্রী বা বিলাসবহুল আমেরিকান পণ্যের উপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করলে ওয়াশিংটনের উপর চাপ তৈরি হতে পারে।

৩. রাশিয়ার সঙ্গে আরও দৃঢ় সম্পর্ক

রাশিয়া ইতিমধ্যেই আশ্বাস দিয়েছে, তাদের বাজার ভারতের জন্য সবসময় খোলা থাকবে। সেক্ষেত্রে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে রপ্তানি-বাণিজ্য আরও জোরদার করতে পারে। শুধু রাশিয়াই নয়, ভেনিজুয়েলা বা আফ্রিকার দেশগুলিকেও এনার্জির বিকল্প উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও এর জন্য পরিবহন খরচ বাড়বে।

৪. দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা

টেক্সটাইল, চামড়া, আইটি বা গয়না শিল্পের মতো খাতগুলোকে সরকারি ভর্তুকি বা কর ছাড় দিয়ে সহায়তা করতে হবে। অভ্যন্তরীণ বাজার শক্তিশালী করা গেলে রপ্তানির ধাক্কা সাময়িকভাবে সামলানো সম্ভব।

ভারতের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ভারত সরকার এখন কূটনৈতিক দিক থেকে কঠিন পরীক্ষার মুখে। একদিকে আমেরিকা ভারতের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক সঙ্গী, অন্যদিকে রাশিয়া ভারতের এনার্জি নিরাপত্তার মূল ভরসা। তাই প্রশ্ন হলো—ভারত কি আমেরিকার চাপ মেনে নেবে, নাকি রাশিয়ার পাশে দাঁড়াবে? বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত আপাতত ভারসাম্যের রাজনীতি বজায় রাখবে। আলোচনার টেবিলে সমাধান খোঁজা হবে, তবে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পিছপা হবে না।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি ভারতের জন্য নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার কারণে যে ২৫% বাড়তি শুল্ক চাপানো হয়েছে, তা শুধু ভারতের অর্থনীতিকেই নয়, দেশীয় শিল্প ও শ্রমিকদেরও প্রভাবিত করবে। এখন দেখার বিষয়, ভারত এই পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেয়—নতুন বাজার খুঁজে, পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, নাকি কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে। তবে এটা নিশ্চিত, আগামী দিনে ভারতকে আরও কৌশলী হতে হবে।

📌 FAQ (প্রশ্নোত্তর)

প্রশ্ন ১: ডোনাল্ড ট্রাম্প কেন ভারতের উপর শুল্ক (Donald Trump tariff on India 2025) চাপালেন?
উত্তর: ভারতের রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনাকে “শাস্তি” দিতে আমেরিকা এই শুল্ক আরোপ করেছে।

প্রশ্ন ২: এই শুল্ক কত শতাংশ?
উত্তর: ২৫% অতিরিক্ত শুল্ক, ফলে মোট কার্যকর শুল্ক দাঁড়াবে প্রায় ৫০%।

প্রশ্ন ৩: কোন খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
উত্তর: টেক্সটাইল, গয়না, চামড়া, মৎস্যপণ্য, কেমিক্যাল ও গাড়ির যন্ত্রাংশ শিল্পে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে।

প্রশ্ন ৪: ভারত কি পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে?
উত্তর: হ্যাঁ, ভারত চাইলে আমেরিকান পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে পারে, যেমন ২০১৯ সালে করেছিল।

প্রশ্ন ৫: এই সংকটে ভারতের বিকল্প কী হতে পারে?
উত্তর: নতুন বাজার খোঁজা, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা এবং দেশীয় শিল্পকে ভর্তুকি দেওয়াই এখন ভারতের প্রধান বিকল্প।

অবশ্যই দেখবেন: DA Case Update: ডিএ মামলায় সুপ্রিম কোর্টে আজ বড় সিদ্ধান্ত! সরকারি কর্মীরা কী পেলেন জানেন

Anamika Sen

দেশ-বিদেশের খবর, অর্থনীতি, জ্যোতিষ, চাকরি সংক্রান্ত তথ্য এবং টেকনোলজির জগৎ—এই সব বিষয় নিয়ে লেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
WhatsApp Icon