স্মার্ট মিটার মানেই দ্বিগুণ বিদ্যুৎ বিল? বিদ্যুৎ দফতরের ইঞ্জিনিয়ার জানালেন আসল সত্য!

সারাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও চলছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ। সেই আধুনিকীকরণের অন্যতম পদক্ষেপ হলো স্মার্ট মিটার (Smart Meter)। এই প্রযুক্তিনির্ভর মিটার এখন পুরনো অ্যানালগ ও ডিজিটাল মিটারের জায়গা নিচ্ছে ঘরে ঘরে। তবে এখনও অনেকের মধ্যে স্মার্ট মিটার নিয়ে রয়েছে নানা ভুল ধারণা ও বিভ্রান্তি। এই প্রতিবেদন থেকে আপনি জানতে পারবেন স্মার্ট মিটারের ...

Published on:

Smart Meter

সারাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও চলছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ। সেই আধুনিকীকরণের অন্যতম পদক্ষেপ হলো স্মার্ট মিটার (Smart Meter)। এই প্রযুক্তিনির্ভর মিটার এখন পুরনো অ্যানালগ ও ডিজিটাল মিটারের জায়গা নিচ্ছে ঘরে ঘরে। তবে এখনও অনেকের মধ্যে স্মার্ট মিটার নিয়ে রয়েছে নানা ভুল ধারণা ও বিভ্রান্তি। এই প্রতিবেদন থেকে আপনি জানতে পারবেন স্মার্ট মিটারের আসল কার্যপদ্ধতি, সুবিধা, এবং গ্রাহকদের মধ্যে প্রচলিত ভুল ধারণার বাস্তবতা।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

স্মার্ট মিটার কী এবং কেন দরকার? | What is a Smart Meter and why is it needed?

স্মার্ট মিটার হল একটি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বৈদ্যুতিক মিটার, যা বিদ্যুৎ ব্যবহার রেকর্ড করে তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎ দফতরে তথ্য পাঠাতে পারে। এটি মূলত একটি ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার (Prepaid Smart Meter) যা মোবাইল ফোনের রিচার্জ সিস্টেমের মতোই কাজ করে। আপনি যত রিচার্জ করবেন, ততটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন।

বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে Join Now

স্মার্ট মিটারের মূল বৈশিষ্ট্য:

  • রিয়েল-টাইম বিদ্যুৎ ব্যবহারের তথ্য পাওয়া
  • অনলাইন রিচার্জ ও বিল পরিশোধের সুবিধা
  • দুর্নীতি ও অতিরিক্ত বিলিং-এর সুযোগ কমে যাওয়া
  • দ্রুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও পুনঃসংযোগের ব্যবস্থা
  • উচ্চ নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা

অবশ্যই দেখবেন: পুলিশকে গালি মানেই জেল!’ অনুব্রতের কি এবার কপাল পুড়ছে? চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আজ

স্মার্ট মিটার প্রকল্পে সরকারের ভূমিকা

কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার উভয়ই স্মার্ট মিটার (Prepaid Smart Meter) স্থাপনকে অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে গ্রহণ করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় ‘Revamped Distribution Sector Scheme (RDSS)’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। পশ্চিমবঙ্গেও বিভিন্ন জেলায় এবং গ্রামীণ এলাকায় এই কাজ শুরু হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন Join Now

অবশ্যই দেখবেন: গ্যাসের দামে ৩০০ টাকা ছাড়! মাসের শুরুতেই বিশাল সুখবর, দেখে নিন বিস্তারিত নিয়ম!

ভুল ধারণা ও বাস্তব সত্যতা: কী বললেন বিদ্যুৎ দফতরের ইঞ্জিনিয়ার?

স্মার্ট মিটার নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেক ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে। এই মিটার বসালে বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যাবে, মাঝরাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাবে—এমন নানা ভয় গ্রাস করছে গ্রাহকদের। এই ভ্রান্ত ধারণাগুলি দূর করতে এগিয়ে এসেছেন বিদ্যুৎ দফতরের বারাসত ডিভিশনের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার বাপ্পাদিত্য ঘোষ

স্মার্ট মিটারে বিল বেশি আসে?

এই প্রশ্নের জবাবে ইঞ্জিনিয়ার বাপ্পাদিত্য ঘোষ স্পষ্ট জানিয়েছেন—“এটি সম্পূর্ণরূপে একটি গুজব। স্মার্ট মিটারে বিদ্যুৎ ব্যবহারের হারে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। বিদ্যুৎ দফতরের নির্ধারিত ইউনিট রেট অনুযায়ীই বিল ধার্য হচ্ছে।”

সাধারণত আগে গ্রাহকরা ৩ মাসে একবার বিল পেতেন, ফলে বিলের পরিমাণ অনেক বেশি মনে হত। এখন স্মার্ট মিটারের মাধ্যমে প্রতি মাসে বা প্রতিদিনই গ্রাহক নিজে জানবেন কত ইউনিট ব্যবহার করেছেন, কত টাকা ব্যয় হচ্ছে। এটি বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতনতা ও নিয়ন্ত্রণ আনবে।

রিচার্জ শেষ হলেই কি বিদ্যুৎ সংযোগ কাটা যাবে?

অনেকেই ভাবেন ফোনের রিচার্জ শেষ হলে যেমন কথা বলা যায় না, তেমনই স্মার্ট মিটারের রিচার্জ শেষ হলে বিদ্যুৎও বন্ধ হয়ে যাবে হঠাৎ করে। এই ধারণাটিও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার বাপ্পাদিত্য ঘোষ।

বাস্তব নিয়ম কী?

  • রিচার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও গ্রাহকরা ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন (emergency overdraft)।
  • এই সীমা অতিক্রম না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে না।
  • শনিবার, রবিবার বা ছুটির দিনে এবং বিকেল ৫টা থেকে পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে কোনও সংযোগ কাটা হবে না।
  • সংযোগ কাটা হলে অনলাইন পেমেন্ট বা অফিসে গিয়ে বকেয়া মিটিয়ে অটোমেটিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ আবার চালু হবে।
  • অর্থাৎ, এখন আর কোনও টেকনিশিয়ান এসে ‘লাইন জোড়া’ দিতে হবে না।

স্মার্ট মিটারের সুবিধা কী কী?

স্মার্ট মিটার শুধু বিদ্যুৎ সংযোগ নয়, একধরণের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন। নিচে তুলে ধরা হলো এর প্রধান সুবিধাগুলি:

১. স্বচ্ছতা ও বিলিংয়ে নির্ভুলতা:- বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রতি ইউনিটের তথ্য সঙ্গে সঙ্গে রেকর্ড হয়, ফলে ভুল বিলিং বা অতিরিক্ত চার্জের সুযোগ নেই।

২. অনলাইন অ্যাক্সেস :- প্রতিদিন কত ইউনিট ব্যবহার করছেন, কত টাকা খরচ হচ্ছে—সবই আপনি দেখতে পারবেন মোবাইল অ্যাপে বা ওয়েবসাইটে।

৩. প্রিপেইড সুবিধা:- যে পরিমাণে রিচার্জ করবেন, সে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন। বিল বাকি থাকার ঝামেলা নেই।

৪. দ্রুত সংযোগ পুনরুদ্ধার :- যদি সংযোগ কেটে যায়, আপনি অনলাইন পেমেন্ট করলেই সঙ্গে সঙ্গে আবার বিদ্যুৎ পেয়ে যাবেন। দেরি নেই, অপেক্ষা নেই।

৫. বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি:- প্রতিদিনের খরচ জানার ফলে অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমানো সম্ভব। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয় এবং পরিবেশ রক্ষা হয়।

সাধারণ মানুষের মানসিকতায় পরিবর্তন প্রয়োজন

গ্রামীণ ও আধা-শহরাঞ্চলে অনেকেই এখনও এই পরিবর্তনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নন। অজ্ঞতা ও ভুল তথ্যের কারণে ভয় সৃষ্টি হচ্ছে, যা প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করছে বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকদের কাজের জন্য।

করণীয়:

  • সরকারি সচেতনতা কর্মসূচি জোরদার করতে হবে।
  • পাড়ায় পাড়ায় ডেমো দিয়ে বোঝাতে হবে স্মার্ট মিটারের কার্যকারিতা।
  • সঠিক তথ্য ও টেকনিক্যাল সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
  • স্থানীয় নেতৃত্ব ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রচার বাড়াতে হবে।

স্মার্ট মিটার হলো বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ। শুধু শহর নয়, গ্রামেও এই পরিবর্তন পৌঁছে দেওয়ার সময় এসেছে। অপ্রয়োজনীয় ভয় ও ভুল ধারণার জন্য আমরা যেন দেশের ডিজিটাল অগ্রগতিকে থামিয়ে না দিই। স্মার্ট মিটার আমাদের জীবনকে করবে আরও স্বচ্ছ, আধুনিক এবং সুবিধাজনক। সরকারের এই পদক্ষেপ সফল করতে হলে আমাদের প্রত্যেকের সচেতনতা ও সহযোগিতা প্রয়োজন।