ধস নামল সিকিমে! পাহাড়ে আটকে শতাধিক পর্যটক, রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার অভিযান

উত্তর সিকিমের মুন্সিথাং (Munsithang, North Sikkim) অঞ্চলে ঘটে গেল এক ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনা (Sikkim Road Accident)। বৃহস্পতিবার (৩০ মে ২০২৫) রাতে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত এক পর্যটকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে, এবং নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৯ জন। স্থানীয় প্রশাসন, সেনা বাহিনী ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেও ...

Published on:

Sikkim Road Accident

উত্তর সিকিমের মুন্সিথাং (Munsithang, North Sikkim) অঞ্চলে ঘটে গেল এক ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনা (Sikkim Road Accident)। বৃহস্পতিবার (৩০ মে ২০২৫) রাতে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত এক পর্যটকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে, এবং নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৯ জন। স্থানীয় প্রশাসন, সেনা বাহিনী ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেও আবহাওয়া ও ভূপ্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় প্রচণ্ড বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। ঘটনাটি সিকিমের দুর্গম পর্যটন এলাকাগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পরিকাঠামো নিয়েও বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে (Sikkim Landslide)।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

ঘটনার বিবরণ

বৃহস্পতিবার রাতে সিকিমের চুংথাং (Chungthang) থেকে মুন্সিথাং-এর পথে একটি পর্যটকবাহী গাড়ি প্রায় ১০০০ ফুট গভীর খাদে পড়ে তিস্তা নদীতে তলিয়ে যায়। গাড়িটিতে ছিলেন মোট ১১ জন—১০ জন পর্যটক এবং একজন স্থানীয় চালক। জানা গিয়েছে, ওই পর্যটকেরা কলকাতা ও ওড়িশা থেকে উত্তর সিকিম ভ্রমণে গিয়েছিলেন এবং ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।

বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে Join Now

সময় ও স্থান: রাত প্রায় ৯টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথের এক দুর্গম বাঁকে। হঠাৎ ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হলে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যায় এবং গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চালক গাড়ি খাদে ফেলে দেন।

গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন Join Now

উদ্ধার তৎপরতা ও বাধা:

দুর্ঘটনার খবর পেয়েই রাতেই তৎপর হয়ে ওঠে স্থানীয় প্রশাসন এবং উদ্ধারকারী বাহিনী। ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ (ITBP), সিকিম পুলিশ, অগ্নিনির্বাপণ দফতর, NDRF, BRO (86 RCC), IHCAE Chemchey-এর পর্বতারোহণ বিশেষজ্ঞ দল, চালক সমিতি, পর্যটন ও বেসামরিক বিমানচালনা দফতর এবং TAAS-এর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশিষ্ট পর্বতারোহী কাজী শেরপা। স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বেচ্ছাসেবকরাও উদ্ধারকার্যে অংশ নিয়েছেন।

উদ্ধারপ্রাপ্তদের অবস্থা: ঘটনাস্থল থেকে দুই জনকে উদ্ধার করা হয়েছে—তাঁদের মধ্যে একজন পর্যটকের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে এবং অন্যজন গুরুতর আহত অবস্থায় গ্যাংটকের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি।

উদ্ধার অভিযানের সমস্যা:

  • প্রবল বর্ষণের ফলে তিস্তা নদীর জলস্তর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • অন্ধকার রাত, পাহাড়ি রাস্তায় ধস এবং প্রবল স্রোত উদ্ধারকার্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে।
  • শুক্রবার সন্ধ্যায় বৃষ্টি আরও তীব্র হয়ে ওঠায় প্রশাসনকে উদ্ধার অভিযান সাময়িক স্থগিত রাখতে হয়েছে।
  • শনিবার সকাল থেকে আবারও উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে।

প্রশাসনের তৎপরতা:

উত্তর সিকিমের জেলা কালেক্টর, পুলিশ সুপার, চুংথাং-এর SDM ও SDPO, DPO, BRO-র CO এবং SHO ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন। স্যাটেলাইট ফোন ও হ্যান্ড হেল্ড রেডিওর মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, কারণ দুর্গত এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট পরিষেবা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন

আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার:

  • ড্রোন ক্যামেরা, থার্মাল ইমেজিং, ও নাইট ভিশন ডিভাইস ব্যবহার করে নদীতে তলিয়ে যাওয়া গাড়ির খোঁজ চলছে।
  • তিস্তা নদীর প্রবল স্রোতে গাড়ির চিহ্ন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রভাব:

বৃহস্পতিবার রাত থেকে উত্তর সিকিমে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে। চুংথাং, থিয়েংসহ আশপাশের এলাকাগুলিতে নদী বিপদসীমার উপরে বইছে। এর ফলে একাধিক এলাকায় ভূমিধস হয়েছে, এবং সড়কপথ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা:

  • চুংথাং ও মুন্সিথাং সংলগ্ন অঞ্চল
  • বেশ কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন
  • বহু ঘরবাড়ি, গাড়ি ও দোকান ক্ষতিগ্রস্ত

পরিস্থিতি মোকাবিলায় উদ্যোগ:

  • পর্যটকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী শিবির
  • জরুরি চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম মোতায়েন
  • পর্যটকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে স্থানীয় প্রশাসন

নিখোঁজদের খোঁজে পরিবার ও প্রশাসনের উদ্বেগ:

যেহেতু নিখোঁজদের অনেকেই পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা থেকে এসেছেন, তাই রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নজর রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পরিবারগুলিকে তথ্য দেওয়া হয়েছে, এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিবারের সদস্যদের গ্যাংটক পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

সতর্কতা ও ভবিষ্যতের করণীয়:

এই দুর্ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, সিকিম বা উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে পর্যটন করতে গেলে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন। খারাপ আবহাওয়ার সময়, পাহাড়ি রাস্তায় রাতে গাড়ি চলাচল একেবারেই অনিরাপদ।

পর্যটকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা:

  • রাতের বেলা পাহাড়ি পথে যাতায়াত এড়িয়ে চলুন।
  • আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে তবেই সফর পরিকল্পনা করুন।
  • পেশাদার ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক নিয়োগ করুন।
  • সরকার অনুমোদিত ট্যুর অপারেটর ব্যবহার করুন।

উত্তর সিকিমের মুন্সিথাং দুর্ঘটনা একটি অতি মর্মান্তিক ঘটনা যা অনেক পর্যটক পরিবারকে শোকস্তব্ধ করে দিয়েছে। প্রশাসন ও উদ্ধারকারী বাহিনীর চেষ্টার মধ্যেও প্রকৃতির প্রতিকূলতা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সকলের প্রার্থনা, নিখোঁজদের দ্রুত খোঁজ পাওয়া যাক এবং তাদের সুস্থভাবে উদ্ধার করা সম্ভব হোক। পর্যটকদের জন্য এটি একটি সতর্ক সংকেত—ভ্রমণের সময় নিরাপত্তা ও সচেতনতা সর্বোচ্চ স্তরে বজায় রাখা আবশ্যক।