Mahalaya 2025: আশ্বিন মাস মানেই পুজোর হাওয়া। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই যে সুর ভেসে আসে, সেটিই যেন জানিয়ে দেয় দুর্গাপুজো দরজায় কড়া নাড়ছে। মহালয়ার দিন ভোরে আকাশবাণী কলকাতার চিরন্তন অনুষ্ঠান মহিষাসুরমর্দিনী (Mahalaya) না শুনলে উৎসবের শুরুটাকেই যেন অসম্পূর্ণ মনে হয়। “আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জরি”— এই লাইন দিয়ে যে আবহ তৈরি হয়, তা আজও বাঙালির মনে এক অনন্য জায়গা দখল করে আছে।
মহিষাসুরমর্দিনী (Mahalaya) শোনার আবহ
একটা সময় ছিল যখন মহালয়ার সকালে বাড়ির বড়রা রেডিও সেট ঠিকঠাক করে রাখতেন, যেন ভোর চারটের সময় কোনো অসুবিধা না হয়। পর্দা টেনে, শয্যা ছেড়ে, পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে মহিষাসুরমর্দিনী শোনা ছিল এক রকমের পারিবারিক রীতি। আজকাল সেই জায়গা নিয়েছে স্মার্টফোন, ইউটিউব বা নানা অ্যাপ। কিন্তু সুর, চণ্ডীপাঠ আর ভোরের নস্টালজিয়া— এগুলো একটুও বদলায়নি। মোবাইল অ্যাপ হোক বা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, মানুষ আজও সেই একই আবেগে মহিষাসুরমর্দিনী শোনেন। পুজো শুরু করার সেই ভোরবেলার আনন্দ এখনও সমান রোমাঞ্চ জাগায়।
মহিষাসুরমর্দিনী (Mahalaya) কারা তৈরি করেছিলেন
এই ঐতিহ্যমণ্ডিত অনুষ্ঠানটির পেছনে ছিলেন তিন কিংবদন্তি শিল্পী। বাণী কুমার ছিলেন রচয়িতা, সুরারোপ করেছিলেন পঙ্কজ কুমার মল্লিক এবং চণ্ডীপাঠ করেছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। তাঁদের মেলবন্ধনেই জন্ম নিয়েছিল মহিষাসুরমর্দিনী। শুধু তাই নয়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, উৎপলা সেন, শিপ্রা বসু— আরও অনেকের গান এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছিল। তাই গান, স্তোত্র আর পাঠ মিলিয়ে এটি হয়ে ওঠে এক অনন্য সৃষ্টি।
আজও যখন ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে “যা দে বাগেশ্বরী” কিংবা চণ্ডীপাঠ ভেসে আসে, তখন মনে হয় যেন শিউরে ওঠে গোটা পরিবেশ।
মহিষাসুরমর্দিনী (Mahalaya) – বিভিন্ন সংস্করণ
অনেকে হয়তো জানেন না, আকাশবাণী কলকাতায় মহিষাসুরমর্দিনীর একাধিক সংস্করণ তৈরি হয়েছিল। প্রতিটি সংস্করণই একে অপরের থেকে কিছুটা আলাদা। বছরের পর বছর ধরে আকাশবাণী ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই সংস্করণগুলিই বাজায়। এ বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে আকাশবাণী কলকাতা বাজাবে ১৯৭২ সালের মহিষাসুরমর্দিনী সংস্করণ। এই সংস্করণটির সময়সীমা প্রায় দেড় ঘণ্টা। ভোর চারটের সময় থেকে এটি সম্প্রচারিত হবে।
কোথায় শোনা যাবে মহিষাসুরমর্দিনী (Mahalaya)
শুধু আকাশবাণী কলকাতা নয়, আরও কয়েকটি চ্যানেলে শোনা যাবে এই অনুষ্ঠান। আকাশবাণী গীতাঞ্জলি, এফএম রেনবো, মৈত্রী, ডিটিএইচ বাংলা— সব জায়গাতেই সম্প্রচারিত হবে। পাশাপাশি আকাশবাণী শিলিগুড়ি, মুর্শিদাবাদ এবং শান্তিনিকেতন থেকেও শোনা যাবে মহিষাসুরমর্দিনী। যাঁরা দূরে আছেন বা রেডিও হাতে নেই, তাঁদের জন্য রয়েছে আকাশবাণী কলকাতার অফিসিয়াল অ্যাপ এবং ইউটিউব চ্যানেল। মহালয়ার ভোরে লাইভ স্ট্রিমিং-এও পাওয়া যাবে এই অনুষ্ঠান। তবে একটি বিষয় মনে রাখা দরকার— ১৯৭২ সালের রেকর্ডিং শোনা যাবে কেবল আকাশবাণীর চ্যানেলেই। বাকি বেসরকারি এফএম স্টেশনগুলোতেও মহিষাসুরমর্দিনী বাজানো হবে, কিন্তু সেখানে থাকবে ভিন্ন রেকর্ডিং।
মহিষাসুরমর্দিনী (Mahalaya) – বাঙালির মনে জায়গা করে নেওয়ার কারণ
অনেকেই বলেন, পুজোর কাউন্টডাউন শুরু হয় মহালয়ার ভোরে। এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে যে মহিষাসুরমর্দিনী শুধুই একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি আসলে বাঙালির আবেগ। শৈশব থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত কত ভোর যে এই অনুষ্ঠান শুনে শুরু হয়েছে, তার হিসেব রাখা যায় না।
প্রতি বছর মহালয়ার দিনে মহিষাসুরমর্দিনী শোনার মধ্যে যে আনন্দ, তা নতুন জামাকাপড় কেনা, আলপনা আঁকা বা ঢাকের শব্দের থেকেও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং বলা যায়, এই অনুষ্ঠান শোনা না হলে দুর্গাপুজোর শুরুটাই যেন সম্পূর্ণ হয় না।
মহিষাসুরমর্দিনী (Mahalaya) আজও কেন এত জনপ্রিয়
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শোনার মাধ্যম বদলেছে। কিন্তু মহিষাসুরমর্দিনী এখনও একইরকম জনপ্রিয়। কারণ এটি শুধুই সঙ্গীত বা পাঠ নয়, এটি একটি ঐতিহ্য। ভোর চারটের সময় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় চণ্ডীপাঠ শুরু হলেই মানুষ বুঝে যায়, আসছে মা। এই এক অনুভূতিই প্রতি বছর বাঙালিকে নতুন করে শিহরিত করে। মোবাইল, অ্যাপ, ইউটিউব— সবই আসবে যাবে, কিন্তু মহিষাসুরমর্দিনী শোনার আবেগ বদলাবে না।
শেষকথা
মহিষাসুরমর্দিনী (Mahalaya) এখন শুধুই একটি রেডিও অনুষ্ঠান নয়, এটি বাঙালির উৎসবচেতনার অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রজন্ম বদলেছে, প্রযুক্তি বদলেছে, কিন্তু ভোর চারটের অপেক্ষা আর সেই সুরের আবহ আজও একইরকম। মহালয়ার দিন তাই এখনও আকাশবাণী শোনার ঐতিহ্য জীবন্ত আছে। দুর্গাপুজোর সূচনা হয় মহিষাসুরমর্দিনী দিয়েই। এবছরও তাই ভোরে ওঠার প্রস্তুতি সেরে রাখুন। আকাশবাণী খুললেই ভেসে আসবে সেই চেনা সুর— আর বুঝে যাবেন, মা এসেছেন।
Disclaimer
এই লেখায় দেওয়া সমস্ত তথ্য সরকারি সূত্র এবং আকাশবাণী কলকাতার ঘোষণার ভিত্তিতে লেখা হয়েছে। সম্প্রচারের সময় ও চ্যানেল সংক্রান্ত পরিবর্তন হলে তা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হবে।
অবশ্যই দেখবেন: Rail Neer: আর ১৫ টাকা নয় — সস্তায় মিলবে ১ লিটার রেল নীর, রেলের নয়া নিয়ম