Mahalaya 2025: মহালয়া শুভ না অশুভ? জানুন এবার আসল অর্থ ও তাৎপর্য

Mahalaya 2025: দুর্গাপুজো মানেই বাঙালির হৃদয়ের উৎসব। কিন্তু এই পুজো শুরুর আগে যে দিনটি বিশেষভাবে পালন করা হয়, সেটিই হল মহালয়া। পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনার দিন হিসেবে মহালয়া এক অনন্য তাৎপর্য বহন করে। এই দিন থেকেই বাঙালি মনের মধ্যে পুজোর আবহ শুরু হয়ে যায়। ভোরবেলায় রেডিও বা টেলিভিশনে মহিষাসুরমর্দিনীর ...

Updated on:

Mahalaya

Mahalaya 2025: দুর্গাপুজো মানেই বাঙালির হৃদয়ের উৎসব। কিন্তু এই পুজো শুরুর আগে যে দিনটি বিশেষভাবে পালন করা হয়, সেটিই হল মহালয়া। পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনার দিন হিসেবে মহালয়া এক অনন্য তাৎপর্য বহন করে। এই দিন থেকেই বাঙালি মনের মধ্যে পুজোর আবহ শুরু হয়ে যায়। ভোরবেলায় রেডিও বা টেলিভিশনে মহিষাসুরমর্দিনীর সুর শোনা, দেবীর চক্ষুদান দেখা – সবকিছু মিলিয়ে মহালয়া বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে।

মহালয়ার(Mahalaya 2025) তাৎপর্য

শব্দটি এসেছে “মহা” ও “আলয়” থেকে, অর্থাৎ মহান আশ্রয় বা আশ্রম। পুরাণ মতে, মহালয়া দিনেই দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের উদ্দেশ্যে আবির্ভূত হন। দেবী দুর্গার আবির্ভাব শুধু ধর্মীয় কাহিনি নয়, বরং শুভ শক্তির জয় এবং অশুভ শক্তির বিনাশের প্রতীক। এই কারণে মহালয়া হিন্দু ধর্মে এক বিশেষ স্থান দখল করে।

অনেকে মনে করেন, মহালয়া হল পূর্বপুরুষদের স্মরণ করার দিন। এই দিন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ বা জলদান করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, এই শ্রাদ্ধ শান্তি করলে পূর্বপুরুষেরা আশীর্বাদ দেন এবং জীবনের নানা বাধা দূর হয়। তাই মহালয়া কেবল দুর্গাপুজোর সূচনা নয়, পূর্বপুরুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর দিনও।

মহালয়া (Mahalaya 2025) শুভ না অশুভ?

এই প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক আজও আছে। একদিকে অনেকে মনে করেন মহালয়া শুভ, কারণ এদিন থেকেই মাতৃপক্ষ শুরু হয় এবং শুভ শক্তির বিজয়ের সূচনা ঘটে। অন্যদিকে অনেকের মতে, পিতৃপক্ষের সমাপ্তির দিন হওয়ায় মহালয়া আসলে শোক পালনের দিন। যেহেতু এই দিনে তর্পণ বা পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধ করা হয়, তাই কেউ কেউ এটিকে অশুভ মনে করেন। তবে বাঙালির কাছে মহালয়া মানেই দুর্গোৎসবের শুরু, তাই আনন্দ ও শুভ চেতনার পরিবেশই বেশি প্রাধান্য পায়।

পুরাণ অনুসারে মহালয়া

মহালয়া নিয়ে নানা কাহিনি পাওয়া যায় পুরাণ ও মহাকাব্যে। পুরাণ মতে, দেবরাজ ইন্দ্রকে ১৬ দিনের জন্য যমরাজ মর্ত্যে পাঠান তর্পণ করার উদ্দেশ্যে। এই ১৬ দিনই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত। আবার মহাভারতে কর্ণের কাহিনি জড়িত রয়েছে মহালয়ার সঙ্গে। কর্ণ জীবদ্দশায় দানশীল হলেও পিতৃপুরুষকে কখনও জলখাবার দেননি। মৃত্যুর পর স্বর্গে তিনি খাবারের বদলে রত্ন ও সোনা পান। পরে ভুল সংশোধন করতে তাঁকেও তর্পণের প্রয়োজন হয়েছিল। তাই বিশ্বাস করা হয়, পিতৃপক্ষ ও মহালয়ার তর্পণের গুরুত্ব অপরিসীম।

রামায়ণেও মহালয়ার উল্লেখ আছে। কথিত আছে, রামচন্দ্র রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার আগে দেবী দুর্গার অকাল বোধন করেছিলেন। কিন্তু তার আগে নিয়ম মেনে তাঁকে তর্পণ করতে হয়েছিল। মহালয়ার দিন সেই তর্পণ করার মাধ্যমেই এই রীতির প্রচলন হয়।

মহালয়া ২০২৫: দিনক্ষণ

২০২৫ সালে মহালয়া পড়েছে ২১ সেপ্টেম্বর, রবিবার। অমাবস্যা তিথি শুরু হবে ২০ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ৫৪ মিনিটে এবং শেষ হবে ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ২৩ মিনিটে। এই সময়েই তর্পণ করা উত্তম। ভোরবেলা সূর্যোদয়ের পর থেকে তর্পণ শুরু হয়, তবে বিশেষ শুভ সময় হল কুতুপ কাল, অর্থাৎ সকাল ১১টা ৪৭ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৩৭ মিনিট পর্যন্ত।

মহালয়ার দিনে তর্পণের তাৎপর্য

বিশ্বাস করা হয়, মহালয়ার দিনে তর্পণ করলে পূর্বপুরুষেরা শান্তি লাভ করেন। তাঁদের আশীর্বাদে জীবনের বাধা দূর হয়। মহালয়ার তর্পণ কেবল একটি ধর্মীয় রীতি নয়, বরং একধরনের মানসিক তৃপ্তি ও আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি। এদিন পরিবার একত্রিত হয়, পিতৃপুরুষদের স্মরণ করা হয়। তাই মহালয়া কেবল উৎসবের সূচনা নয়, বরং পারিবারিক বন্ধনেরও প্রতীক।

মহালয়া ও বাঙালির সংস্কৃতি

বাঙালির জীবনে মহালয়া এক বিশেষ আবেগ। ভোরবেলা “মহিষাসুরমর্দিনী” শোনার মধ্য দিয়ে এই দিন শুরু হয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই অনুষ্ঠান বাঙালি ঘরে ঘরে পালিত হয়ে আসছে। এমনকি আজকের ডিজিটাল যুগেও এই অভ্যাস বদলায়নি। রেডিও, টেলিভিশন বা মোবাইল – যেখানেই হোক না কেন, মহালয়ার সকাল মানেই দেবীর আহ্বান।

অবশ্যই দেখবেন: Trump H-1B Visa: ৮৮ লক্ষ না দিলে মার্কিন ভিসা বাতিল! ট্রাম্পের নিয়মে দিশেহারা হাজারো ভারতীয় IT কর্মী

মহালয়া শুভ না অশুভ – এ নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলেও বাস্তবে বাঙালির কাছে মহালয়া মানেই দুর্গাপুজোর শুরু। এটি এমন এক দিন, যেদিন পূর্বপুরুষকে স্মরণ করা হয়, দেবীর আগমনবার্তা শোনা যায় এবং একসঙ্গে মিলেমিশে উৎসবের আবহ তৈরি হয়। মহালয়া তাই একদিকে ধর্মীয় বিশ্বাস, অন্যদিকে সামাজিক আবেগ।

অবশ্যই দেখবেন: Rail Neer: আর ১৫ টাকা নয় — সস্তায় মিলবে ১ লিটার রেল নীর, রেলের নয়া নিয়ম

যে যেভাবেই মহালয়াকে দেখুক না কেন, এর মূল বার্তা হল শুভ শক্তির আহ্বান ও অশুভের বিনাশ। তাই আসুন, এই মহালয়া ২০২৫-এ আমরা সবাই শুভ চেতনায় মন ভরি, দেবী দুর্গার আবাহন করি এবং আগামী দিনগুলিকে আনন্দ ও শান্তিতে ভরে তুলি।

Disclaimer:

এই লেখাটি শুধুমাত্র তথ্যভিত্তিক এবং সাধারণ পাঠকের জন্য প্রস্তুত। এখানে বর্ণিত দিনক্ষণ ও তথ্য বিভিন্ন ক্যালেন্ডার ও ধর্মীয় মত অনুসারে পরিবর্তিত হতে পারে। পাঠকদের নিজ নিজ অঞ্চলের নিয়ম ও প্রচলিত রীতি অনুসারে পালন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

অবশ্যই দেখবেন: School Holiday: দুর্গাপুজোর আগে স্কুলে বড় ছুটি! ১৭ দিনের ছুটি ঘোষণা করল রাজ্য সরকার

Anamika Sen

দেশ-বিদেশের খবর, অর্থনীতি, জ্যোতিষ, চাকরি সংক্রান্ত তথ্য এবং টেকনোলজির জগৎ—এই সব বিষয় নিয়ে লেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
WhatsApp Icon