পশ্চিমবঙ্গে মিড ডে মিল (Mid Day Meal) ঘিরে ফের এক নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। এবার শুধু ছাত্রছাত্রী নয়, স্কুল প্রাঙ্গণের পথ কুকুরদেরও খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সমগ্র শিক্ষা মিশন (PBSSM) ২০ জুন একটি নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে, যেখানে বলা হয়েছে কুকুরের আক্রমণ থেকে ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষা দিতে এবং সহানুভূতিশীল মনোভাব গঠনের উদ্দেশ্যে বিকেলের দিকে স্কুলের বাইরে কুকুরদের খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তবে, এই নির্দেশিকাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের শিক্ষক সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষামহলে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও প্রশ্ন।
মিড ডে মিল ও নতুন বিতর্ক: কী বলছে নির্দেশিকা?
রাজ্যের প্রতিটি প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল (Mid Day Meal) প্রকল্পের অধীনে প্রতিদিন ছাত্রছাত্রীদের জন্য পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হয়। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল ছাত্রদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বাড়ানো, অপুষ্টি প্রতিরোধ এবং শিক্ষার পরিবেশকে উন্নত করা। কিন্তু এই প্রকল্পকে ঘিরেই নতুন বিতর্কের জন্ম দিল ২০ জুন, ২০২৫ তারিখে জারি হওয়া একটি নির্দেশিকা।
নির্দেশিকায় কী বলা হয়েছে?
পশ্চিমবঙ্গ সমগ্র শিক্ষা মিশনের জারি করা ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে:
- স্কুল চত্বরে যেসব পথ কুকুর ঘোরাফেরা করে, তাদের বিকেলে স্কুল প্রাঙ্গণের বাইরে মিড ডে মিলের অতিরিক্ত খাবার সরবরাহ করতে হবে।
- উদ্দেশ্য হলো, ছাত্রছাত্রীদের উপর কুকুরের আক্রমণের ঝুঁকি কমানো এবং তাদের মধ্যে প্রাণীপ্রেম ও সহানুভূতির মনোভাব গড়ে তোলা।
- একজন স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর কর্মী (MDM-SHG) বা নিযুক্ত ব্যক্তি এই দায়িত্ব পালন করবেন।
- জেলা স্তরে পশু সম্পদ উন্নয়ন বিভাগ এবং শিক্ষা দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় করে কুকুরদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থাও করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই নির্দেশিকাটি এসেছে মানেকা গান্ধীর চিঠির প্রেক্ষিতে, যিনি দীর্ঘদিন ধরে পশু অধিকারের পক্ষে কাজ করছেন।
অবশ্যই দেখবেন: সূর্যদেবের কৃপায় আজ ধন-সম্পত্তিতে ভরপুর হবে এই ৩ রাশি! আজকের রাশিফল, ২২ জুন
মিড ডে মিলের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলি
এই বিতর্কিত নির্দেশিকাটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন মিড ডে মিল প্রকল্প ইতিমধ্যেই নানা সমস্যায় জর্জরিত।
সাম্প্রতিক অভিযোগ ও সমস্যা:
- মিড ডে মিলের খাবারে টিকটিকি, মরা আরশোলা, পোকা পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
- অনেক জেলায় স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর কর্মী বা রান্নার কর্মীর অভাব প্রকল্পে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
- স্কুলগুলিতে অপর্যাপ্ত রান্নাঘর, জল, বা খাদ্যসংরক্ষণের সুব্যবস্থা নেই।
- অর্থের অভাব ও পর্যাপ্ত তদারকির অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই মান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপানো কি বাস্তবসম্মত?
শিক্ষক সংগঠনের প্রতিবাদ: বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন
নতুন নির্দেশিকা জারি হতেই রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন ও শিক্ষা অনুরাগী মহল থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে।
কিঙ্কর অধিকারীর বক্তব্য:
শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন,
“প্রতিটি স্কুল কতগুলো কুকুরকে খাওয়াবে তা নির্ধারণ করবে কে? এর জন্য কি আলাদা তহবিল বরাদ্দ করা হয়েছে? এই অতিরিক্ত দায়িত্ব সরকারের নেওয়া উচিত ছিল, স্কুলের উপর চাপানো অন্যায্য।”
অনিমেষ হালদারের মন্তব্য:
মাধ্যমিক শিক্ষক ও কর্মচারী সমিতির নেতা অনিমেষ হালদার বলেন,
“ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সহানুভূতি জাগানো জরুরি, তবে আগে মিড ডে মিল কর্মীদের সম্মানী বৃদ্ধি, স্কুলে সুরক্ষা ব্যবস্থা, খেলার মাঠ বা লাইব্রেরি তৈরির বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। অন্যথায়, শিক্ষা ব্যবস্থার মূল কাঠামোই ভেঙে পড়বে।”
সরকারি যুক্তি ও উদ্দেশ্য: সহানুভূতির বিকাশ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ
সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্কুল চত্বরে কুকুরদের নিয়মিতভাবে খাবার সরবরাহ করলে তারা আক্রমণাত্মক না হয়ে শান্ত থাকবে এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহাবস্থান সহজ হবে।
সম্ভাব্য ইতিবাচক দিক:
- কুকুরদের নিয়মিত খাবার দিলে তারা স্কুলের বাইরে অবস্থান করবে, ছাত্রদের উপর ঝাঁপাবে না।
- শিশুদের মধ্যে প্রাণীপ্রেম ও সামাজিক দায়বদ্ধতা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
- যদি স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার দিকটি ভালোভাবে তদারকি করা যায়, তাহলে এটি একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
বিতর্কের কেন্দ্রে কিছু মূল প্রশ্ন
- তহবিল: এই প্রকল্পের জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ হয়েছে কি? যদি না হয়, তাহলে মিড ডে মিলের বরাদ্দ থেকে কুকুরদের খাওয়ানো হলে পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ কমে যাবে না তো?
- পরিকাঠামো: অধিকাংশ স্কুলেই যথাযথ রান্নার ঘর, সুরক্ষা প্রাচীর বা খাদ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। সেখানে কুকুরদের আলাদা করে খাওয়ানোর জায়গা কোথা থেকে আসবে?
- স্বাস্থ্যবিধি: শিশুদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রে কোন সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে?
- টিকা ও পশু নিয়ন্ত্রণ: কুকুরদের টিকা দেওয়া, স্বাস্থ্যপরীক্ষা, ধরা ও স্থানান্তরের জন্য পশু সম্পদ দপ্তর কতটা প্রস্তুত?
শিক্ষা ও মানবিকতা: ব্যালান্সের দরকার
মানবিক মূল্যবোধ এবং প্রাণীর প্রতি সহানুভূতি শেখানো নিশ্চয়ই শিক্ষার অঙ্গ। কিন্তু তা যেন শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ও পরিকাঠামোকে চাপা না দেয়।
একজন শিক্ষাবিদের ভাষায়,
“ছাত্রছাত্রীদের সহানুভূতিশীল হওয়া শেখাতে হবে ঠিকই, কিন্তু সেই পাঠ যদি মিড ডে মিলের গুণমান বা শিক্ষার পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাহলে তার কোনও মূল্য নেই।”
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে কোথাও কি এমন নজির আছে?
বিশ্বের অনেক দেশেই স্কুলে প্রাণীর প্রতি সহানুভূতির শিক্ষা দেওয়া হয়, কিন্তু কোথাও স্কুলের মিড ডে মিল কুকুরদের দেওয়া হয় না। প্রাণীদের জন্য আলাদা সংস্থা ও দায়িত্ব থাকে। উদাহরণস্বরূপ, জাপানে স্কুলে বাচ্চাদের পোষ্য পরিচর্যা শেখানো হয়, কিন্তু তা বিদ্যালয়ের মূল কার্যক্রমের বাইরে থাকে।
মানবতা না শিক্ষা – কোনটা আগে?
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে মানবিক, কিন্তু তা যেন অসুবিধা ও অনিয়মের নতুন পথ না খুলে। মিড ডে মিল নিয়ে নানা অভিযোগ আগে থেকেই রয়েছে – যেমন মান নিয়ন্ত্রণের অভাব, খাদ্যে অশুদ্ধতা, রন্ধন কর্মীর স্বল্প বেতন ইত্যাদি। এরমধ্যে পথ কুকুরদের খাওয়ানো এক জটিল বাস্তবতায় নতুন দায়িত্ব জুড়ে দিচ্ছে। সরকারের উচিত, আগে মিড ডে মিল ব্যবস্থার সুনিশ্চিত ও সুসংগঠিত উন্নয়ন করা, তারপর শিক্ষার পরিবেশে মানবিক মূল্যবোধ সংযোজনের মতো পদক্ষেপ নেওয়া।
অবশ্যই দেখবেন: নিম্নচাপের জোড়া ধাক্কা, ৯ জেলায় আজ ঝড়-বৃষ্টির তীব্র পূর্বাভাস! দেখে নিন আজকের আবহাওয়া
📅 বিষয় | 🔗 লিংক/বিবরণ |
---|---|
🌤 আবহাওয়া আপডেট | ✅ প্রতিদিনের আবহাওয়ার খবর জানতে আমাদের ফলো করুন |
🔮 রাশিফল | ✅ দৈনিক রাশিফল ও জ্যোতিষশাস্ত্রভিত্তিক পরামর্শ |
💬 হোয়াটসঅ্যাপ | 👉 WhatsApp গ্রুপে যোগ দিন |
📢 টেলিগ্রাম | 👉 Telegram চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন |
📰 অন্যান্য আপডেট | ✅ View More |