মাত্র ২ ঘন্টায় মুম্বাই থেকে আহমেদাবাদ! বুলেট ট্রেন ট্রায়ালে বড় অগ্রগতি

ভারতের প্রথম হাই-স্পিড বুলেট ট্রেন (Bullet Train) প্রকল্পে এক বড় অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। দেশের অন্যতম উচ্চাভিলাষী এই রেল প্রকল্প—মুম্বাই থেকে আহমেদাবাদ পর্যন্ত ৫০৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বুলেট ট্রেন করিডোর—নির্মাণের কাজ জোর কদমে চলছে। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ শুরু হয়েছে: জাপানে শুরু হয়ে গেছে ভারতের জন্য নির্ধারিত বুলেট ট্রেনের ট্রায়াল রান। এই উন্নয়নকে ভারতের জন্য দ্রুতগামী রেল যোগাযোগের যুগান্তকারী সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মুম্বাই-আহমেদাবাদ বুলেট ট্রেন করিডোর: দেশের প্রথম হাই-স্পিড বুলেট ট্রেন

ন্যাশনাল হাই স্পিড রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (NHSRCL) ভারতের প্রথম বুলেট ট্রেন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। মুম্বাই থেকে আহমেদাবাদ পর্যন্ত এই হাই-স্পিড করিডোরটি হবে ৫০৮ কিমি দীর্ঘ। এর মধ্যে ৩৫২ কিমি গুজরাটের ৯টি জেলা এবং ১৫৬ কিমি মহারাষ্ট্রের ৩টি জেলা অতিক্রম করবে। এই করিডোরে মোট ১২টি স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: থানে, ভিরার, বোয়সার, ভাপি, সুরাট ও ভাদোদরা।

জাপানে শুরু হয়েছে ভারতের বুলেট ট্রেনের ট্রায়াল

সবচেয়ে বড় খবর হলো—এই প্রকল্পে ব্যবহৃত হওয়ার জন্য নির্ধারিত জাপানি শিনকানসেন ট্রেন-এর ট্রায়াল ইতিমধ্যেই জাপানে শুরু হয়েছে। জাপান সরকার ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতার অংশ হিসেবে E5 ও E3 সিরিজের দুটি শিনকানসেন বুলেট ট্রেন উপহার দিচ্ছে। এই ট্রেনগুলি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি, যা ঘণ্টায় ৩২০ কিমি বেগে চলতে সক্ষম।

এই ট্রায়ালগুলির মাধ্যমে ট্রেনের কার্যক্ষমতা, জলবায়ু সহনশীলতা, ধুলা প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং যান্ত্রিক পারফরম্যান্স পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। জাপানের এই সফল ট্রায়াল ভবিষ্যতে ভারতে নিরাপদ ও দক্ষ বুলেট ট্রেন পরিচালনার একটি দিক নির্দেশ করবে।

ভারতে আসছে শিগগিরই E5 ও E3 সিরিজের শিনকানসেন

এই দুটি ট্রেন ২০২৬ সালের শুরুতেই ভারতে আসবে বলে জানা গেছে। ট্রেনগুলিকে ভারতীয় ভূগোল এবং জলবায়ুর উপযোগী করে তুলতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও মানানসই প্রযুক্তি পরিবর্তন করা হবে। এই পরীক্ষার তথ্য ভবিষ্যতে ভারতে ‘Make in India’ উদ্যোগের অধীনে E10 সিরিজের শিনকানসেন ট্রেন নির্মাণে ব্যবহার করা হবে। অর্থাৎ, এই ট্রায়াল ভারতীয় রেল প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং স্থানীয় উৎপাদন ব্যবস্থাকে আরও দৃঢ় করবে।

সময় বাঁচাবে, অর্থনীতি এগিয়ে দেবে বুলেট ট্রেন

বর্তমানে মুম্বাই থেকে আহমেদাবাদ যেতে সময় লাগে গড়ে ৭ ঘণ্টা। কিন্তু এই বুলেট ট্রেন চালু হলে পুরো পথ মাত্র ২ ঘণ্টা ৭ মিনিটে অতিক্রম করা যাবে। সময় বাঁচানো ছাড়াও এটি ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, পর্যটন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ প্রসার করবে।

এই বুলেট ট্রেন প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতীয় রেল ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা হবে। এটি পরিবহন ব্যবস্থার গতি, নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতায় বিপুল পরিবর্তন আনবে।

Read More: জুন থেকেই বড় পরিবর্তন, সপ্তাহে দুদিন বন্ধ থাকবে ব্যাংক?

জাপান দিচ্ছে সহজ শর্তে ঋণ

ভারত ও জাপানের মধ্যে ২০১৬ সালে এই হাই-স্পিড রেল প্রকল্প নিয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়। সেই অনুযায়ী, জাপান ভারতের এই প্রকল্পে প্রায় ৮০% ব্যয় বহন করছে একটি অতি স্বল্প সুদের ইয়েন ঋণের মাধ্যমে। অর্থাৎ, এটি শুধু প্রযুক্তি হস্তান্তরের উদাহরণ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত সহযোগিতা এবং বিনিয়োগ সম্পর্কের শক্তি প্রকাশ করে।

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-তে তৈরি হবে E10 সিরিজ

জাপানে শুরু হওয়া ট্রায়ালের ফলাফল বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে ভারতের মাটিতে তৈরি হবে E10 সিরিজের পরবর্তী প্রজন্মের বুলেট ট্রেন। এই উদ্যোগ ‘Make in India’ প্রোগ্রামের আওতায় বাস্তবায়িত হবে এবং দেশীয়ভাবে হাই-স্পিড রেল প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।

পরিবেশ ও প্রযুক্তির দিক থেকেও নজিরবিহীন

এই বুলেট ট্রেন প্রকল্প শুধু দ্রুত যাতায়াতই নিশ্চিত করবে না, এটি হবে এক পরিবেশবান্ধব ও টেকসই রেল পরিবহণ ব্যবস্থা। ট্রেনগুলি বিদ্যুৎচালিত হওয়ায় দূষণের হার অনেক কম থাকবে এবং ট্রেনের গঠনেও আধুনিক ভাইব্রেশন রিডাকশন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, যা যাত্রীদের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করবে।

ভারতের জন্য গর্বের বিষয়

এই বুলেট ট্রেন প্রকল্প নিঃসন্দেহে ভারতের রেল পরিবহণ ব্যবস্থায় একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তন আনবে। এটির মাধ্যমে শুধু যাত্রা নয়, বরং নিরাপত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, প্রযুক্তি দক্ষতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকেও নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।

Read More: শুধু মেট্রো নয়, এবার দক্ষিণেশ্বর স্টেশনেও রেলের মেগা আপগ্রেড! জেনে নিন কী কী বদল আসছে

এটি শুধুমাত্র একটি রেল প্রকল্প নয়, বরং ‘নিউ ইন্ডিয়া’র প্রতীক হিসেবে উঠে আসবে। এতে ভারতের দ্রুতগামী ভবিষ্যতের জন্য এক দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন হবে।

মুম্বাই-আহমেদাবাদ বুলেট ট্রেন প্রকল্প শুধু সময় সাশ্রয় করবে না, বরং ভারতীয় রেল প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। জাপানে শুরু হওয়া ট্রায়াল রান এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই বুলেট ট্রেন প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে, ভারত পৌঁছে যাবে উন্নত রেল যোগাযোগের নতুন যুগে।