জলের জন্য কাঁদছে পাকিস্তান! ভারতের কাছে পরপর ৪টি চিঠি পাঠাল ইসলামাবাদ

কলকাতা, ৭ই জুন, ২০২৫: পহেলগাঁও-এ জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত কর্তৃক সিন্ধু জলচুক্তি (Indus Waters Treaty – IWT) স্থগিত করার পর থেকেই চরম জল সংকটে ভুগছে পাকিস্তান। এই গুরুতর পরিস্থিতিতে, ইসলামাবাদ চুক্তি পুনর্বিবেচনার জন্য ভারতের কাছে বারবার অনুরোধ জানাচ্ছে এবং এপ্রিল মাস থেকে দিল্লিকে এ বিষয়ে মোট চারটি চিঠি পাঠিয়েছে। WhatsApp ...

Published on:

Indus Waters Treaty

কলকাতা, ৭ই জুন, ২০২৫: পহেলগাঁও-এ জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত কর্তৃক সিন্ধু জলচুক্তি (Indus Waters Treaty – IWT) স্থগিত করার পর থেকেই চরম জল সংকটে ভুগছে পাকিস্তান। এই গুরুতর পরিস্থিতিতে, ইসলামাবাদ চুক্তি পুনর্বিবেচনার জন্য ভারতের কাছে বারবার অনুরোধ জানাচ্ছে এবং এপ্রিল মাস থেকে দিল্লিকে এ বিষয়ে মোট চারটি চিঠি পাঠিয়েছে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

চুক্তির স্থগিতাদেশ: কেন এই কঠোর পদক্ষেপ?

গত ২২শে এপ্রিল পহেলগাঁও-এ ২৬ জন সাধারণ মানুষের ওপর ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পরই ভারত এক কঠোর অবস্থান নেয়। হামলার একদিন পরই নয়াদিল্লি ঘোষণা করে যে, ১৯৬০ সালের সিন্ধু জলচুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হবে। এরপর থেকেই পাকিস্তানের জলসম্পদ সচিব সৈয়দ আলি মুর্তজা ভারতের জলশক্তি মন্ত্রককে একের পর এক চিঠি পাঠিয়ে যাচ্ছেন।

বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে Join Now

জানা গেছে, এই চারটি চিঠির মধ্যে তিনটিই ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামক সামরিক অভিযানের পর লেখা হয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, ভারত একতরফাভাবে এই চুক্তি স্থগিত করতে পারে না এবং এটি আন্তর্জাতিক চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন।

গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন Join Now

ভারতের অনমনীয় অবস্থান: আলোচনার শর্ত ‘সন্ত্রাস বন্ধ’

ভারতের জলসম্পদ সচিব দেবশ্রী মুখোপাধ্যায় গত ২৪শে এপ্রিল পাকিস্তানের জলসম্পদ সচিবকে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠিতে সিন্ধু জলচুক্তি (Indus Waters Treaty – IWT) স্থগিতের বিষয়টি জানান। সেই চিঠিতে তিনি স্পষ্ট করেন, “একটি চুক্তির মূল ভিত্তিই হলো সরল বিশ্বাসে তার শর্তাবলী সম্মান করা। কিন্তু এর পরিবর্তে আমরা দেখছি যে, পাকিস্তান ক্রমাগতভাবে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরকে লক্ষ্য করে সীমান্ত সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে।” এরপর থেকেই পাকিস্তানের তরফ থেকে চুক্তি স্থগিতাদেশের বিরোধিতা করে দিল্লিকে একাধিক চিঠি লেখা হয়েছে।

তবে, পাকিস্তানের এই আবেদন সত্ত্বেও ভারত নিজেদের অবস্থানে অটল রয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল গত ২৯শে এপ্রিল দৃঢ়ভাবে জানিয়েছিলেন যে, প্রতিবেশী দেশটি “বিশ্বাসযোগ্যভাবে সীমান্ত সন্ত্রাস পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত” ভারত পাকিস্তানের সাথে কোনো আলোচনায় বসবে না।

পাকিস্তানের জলসংকট ও তার পরিণতি

১৯৬০ সালের সিন্ধু জলচুক্তি (Indus Waters Treaty – IWT) অনুযায়ী, ভারত পশ্চিমাঞ্চলীয় সিন্ধু, ঝিলম এবং চেনাব নদীর জলের একটি নির্দিষ্ট অংশ পাকিস্তানকে সরবরাহ করত। এই চুক্তিতে পাকিস্তানের জন্য ৮০:২০ অনুপাতে জল বন্টন করা হয়েছিল, অর্থাৎ ৮০% জল পেত পাকিস্তান। অর্থনীতি এবং কৃষির জন্য পাকিস্তান সিন্ধু জল ব্যবস্থার উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এই চুক্তি স্থগিত হওয়ার ফলে তাদের কৃষি ও শিল্প খাতে মারাত্মক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

প্রাক্তন কেন্দ্রীয় জলসম্পদ সচিব শশী শেখর মন্তব্য করেছেন যে, পাকিস্তান এখন “মরিয়া” অবস্থায় রয়েছে, কারণ তাদের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় এক চতুর্থাংশ সিন্ধু জলের উপর নির্ভরশীল। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, চুক্তি স্থগিত থাকার পরিণতি পাকিস্তানের জন্য গুরুতর হতে পারে এবং এর ফলে দেশটিতে নাগরিক অস্থিরতাও বাড়তে পারে। শেখর আরও জানান যে, ২০১৬ সালে তিনি নিজেই এই চুক্তি স্থগিত বা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছিলেন, কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জলকে সবার উপকারের উৎস হিসেবে দেখেছিলেন। তবে পহেলগাঁও হামলার পর মোদী সরকার এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পিছ পা হননি।

১৯৬০ সালে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চারটি যুদ্ধ হলেও, এই প্রথমবারের মতো চুক্তিটি স্থগিত করা হয়েছে। পহেলগাঁও হামলার আগেও ভারত চুক্তিটি পারস্পরিক পুনর্বিন্যাসের অনুরোধ করেছিল, কিন্তু পাকিস্তান তাতে কর্ণপাত করেনি। এখন জলসংকটের মুখে পড়ে পাকিস্তান বারবার আলোচনার জন্য আবেদন জানাচ্ছে।

অবশ্যই দেখবেন: বকেয়া DA নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত! এই তারিখে মিলবে টাকার পাহাড়! জানুন পুরো হিসাব