একদিনের ভুলে ১৮ বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে জগন্নাথ মন্দির! জানুন সেই রহস্যময় রীতি

ভারতের অন্যতম পবিত্র ও রহস্যময় তীর্থক্ষেত্র হল ওড়িশার পুরী জগন্নাথ মন্দির (Puri Jagannath Temple)। এই মন্দির শুধু ভক্তির কেন্দ্রবিন্দু নয়, বরং রহস্য, পৌরাণিকতা ও অলৌকিক ঘটনার এক বিশাল সংগ্রহশালা। এই মন্দিরের অনেক রীতিনীতির মধ্যে অন্যতম ও গম্ভীর রীতি হল “পতিতপাবন বানা” বা মন্দিরের ধ্বজা বদলানো”। এমন বিশ্বাস রয়েছে যে, যদি ...

Published on:

Puri Jagannath Temple

ভারতের অন্যতম পবিত্র ও রহস্যময় তীর্থক্ষেত্র হল ওড়িশার পুরী জগন্নাথ মন্দির (Puri Jagannath Temple)। এই মন্দির শুধু ভক্তির কেন্দ্রবিন্দু নয়, বরং রহস্য, পৌরাণিকতা ও অলৌকিক ঘটনার এক বিশাল সংগ্রহশালা। এই মন্দিরের অনেক রীতিনীতির মধ্যে অন্যতম ও গম্ভীর রীতি হল “পতিতপাবন বানা” বা মন্দিরের ধ্বজা বদলানো”। এমন বিশ্বাস রয়েছে যে, যদি কোনও একদিন এই রীতি পালন না করা হয়, তবে মন্দির ১৮ বছরের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে শাস্ত্রে

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পতিতপাবন বান: জগন্নাথ মন্দিরের (Puri Jagannath Temple) অলৌকিক ধ্বজা

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের (Puri Jagannath Temple) চূড়ায় প্রতিদিন ওড়ে একটি বিশেষ ধ্বজা, যার নাম “পতিতপাবন বান” (Patitapaban Bana)। এই ধ্বজা হল প্রভু জগন্নাথের আশ্রয়প্রার্থী পতিত জীবদের মুক্তির প্রতীক। এটি প্রতিদিন বিকেলে নতুন করে প্রতিস্থাপন করা হয়। শাস্ত্র অনুসারে, পতাকা প্রতিস্থাপন না করলে সেই দিন মন্দিরে অমঙ্গল নেমে আসে বলে বিশ্বাস করা হয়।

বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে Join Now

১৮ বছর বন্ধ কেন?

শাস্ত্র মতে, যদি একটিবারও এই ধ্বজা বদলানো না হয়, তবে তা ঘোর অমঙ্গল নির্দেশ করে। তখনই প্রাচীন শাস্ত্রীয় নিয়ম অনুযায়ী মন্দির ১৮ বছরের জন্য বন্ধ রাখা হয়। অর্থাৎ, এই পতাকা না ওড়ানো মানেই ভগবানের উপস্থিতি ক্ষুণ্ণ হওয়া, আর সেই কারণে দেবতা ‘অন্তর্ধান’ করেন এবং মন্দিরের দ্বার দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ রাখতে হয়। এই রীতি এতটাই গম্ভীর যে, কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়, বৃষ্টি বা অন্য কোনও প্রতিকূলতাও এর পরিবর্তনকে বাধা হতে পারে না। পতাকা বদলের রীতি যেমন পালনীয়, তেমনই তা না পালনের পরিণতি ভয়ঙ্কর—এই বিশ্বাসে বছরের পর বছর ধরে সেবায়েতরা কঠোর নিষ্ঠার সঙ্গে এই কাজ করে আসছেন।

গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন Join Now

অবশ্যই দেখবেন: পুরী রথযাত্রায় জগন্নাথধামে জনসমুদ্র, আকাশে ওড়ার আগেই ধরা পড়ল ৭টি অবৈধ ড্রোন!

পতাকা কখন এবং কীভাবে বদলানো হয়?

গরমকালে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ এবং শীতকালে সন্ধ্যা ৫টার মধ্যে পতাকা বদলানোর নিয়ম রয়েছে। এই পতাকা বদলের দায়িত্ব পালন করেন মন্দিরের বিশেষ প্রশিক্ষিত সেবায়েতরা। তাঁদের বলা হয় “বনা সেবায়েত”

পতাকা প্রতিস্থাপন একটি বিপজ্জনক কাজ—কারণ,

  • মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ৪৫ তলা ভবনের সমান (প্রায় 214 ফুট)

  • কোনও যন্ত্রপাতি বা নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই এই সেবায়েতরা প্রতিদিন মন্দিরের গায়ে চড়ে উঠে পড়েন চূড়ায়

  • সেখানে অবস্থান করে তারা পুরনো পতাকা খুলে নতুন পতাকা বাঁধেন

এ এক নিঃশব্দ ত্যাগ ও সাহসিকতার নিদর্শন।

অবশ্যই দেখবেন: মা হতে চেয়েছিলেন, হলেন মাসি! কে এই গুণ্ডিচাদেবী? জগন্নাথ কেন থাকেন ৭ দিন তাঁর বাড়িতে?

পতাকা উড়ে হাওয়ার বিপরীত দিকে! বিজ্ঞান ব্যর্থ, বিশ্বাস অটুট

এখানে আরেকটি অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে প্রতিদিন। পতাকা হাওয়ার বিপরীত দিকে উড়ে—এটি একটি এমন রহস্য যা আজও ব্যাখ্যা করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। সাধারণভাবে পতাকা হাওয়ার দিকেই উড়ে, কিন্তু জগন্নাথ মন্দিরের পতাকা ঠিক তার উল্টো দিকে ওড়ে। অনেক বিজ্ঞানী এর পেছনে এয়ার প্রেসার, স্পেসিয়াল মাউন্টিং বা দৃষ্টিভ্রান্তির কথা বললেও ভক্তরা একে প্রভুর কৃপা এবং অলৌকিক শক্তি হিসেবেই মানেন

সেবায়েতদের ধর্মনিষ্ঠা ও প্রাণপণ প্রচেষ্টা

পতাকা বদলানো কেবল দৈহিক পরিশ্রম নয়, এটি এক আধ্যাত্মিক সাধনা। এ কাজের জন্য প্রয়োজন—

  • কঠোর অনুশাসন

  • দৈনিক পূজাপাঠ ও উপবাস

  • নিয়মিত দেহচর্চা ও সাহস

  • এবং ঈশ্বরের প্রতি অগাধ আস্থা

বছরের প্রতিটি দিন, কোনও ছুটি ছাড়া—ঝড়, বৃষ্টি, গরম, শীত—সব উপেক্ষা করেও এই কাজ করা হয়। এই নিষ্ঠাই জগন্নাথধামের মহিমাকে আরও প্রগাঢ় করে তোলে।

পতাকা না ওড়ার ঘটনা: বাস্তব উদাহরণ

ইতিহাসে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যেখানে কোনও একদিন কোনও কারণে পতাকা প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়নি বা দেরি হয়েছিল। সেবার সেই এলাকায় হঠাৎ বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। যদিও এসব বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, কিন্তু ভক্তদের বিশ্বাসে এটিই ঈশ্বরের রোষ। এই কারণেই পতাকা ও তার নিয়মিত পরিবর্তন জগন্নাথ মন্দিরের অন্যতম গুরুভার রীতি, যা কখনোই অবহেলা করা চলে না।

পতাকা নয়, আস্থা ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক

জগন্নাথ মন্দিরের (Puri Jagannath Temple) প্রতিদিন পতাকা পরিবর্তনের রীতি শুধুমাত্র এক ধর্মীয় আচার নয়, বরং এটি হল নিয়ম, শ্রদ্ধা ও আত্মত্যাগের এক নিদর্শন। এই রীতির মধ্যে লুকিয়ে আছে ঈশ্বরের প্রতি মানুষের নিঃশর্ত ভক্তি, দায়িত্ব ও বিশ্বাস। পতাকা না বদলানোর সঙ্গে ১৮ বছর মন্দির বন্ধ রাখার নিয়ম প্রমাণ করে, ঈশ্বরের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ কখনওই বরদাস্ত নয়। এই রীতিকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া অলৌকিক কাহিনি, সেবায়েতদের নিষ্ঠা, এবং পতাকার বিপরীতমুখী ওড়া—সব মিলিয়ে এটি এক অলৌকিক ধর্মীয় বিস্ময়। আর এই বিস্ময়ই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরকে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক নিদর্শনে পরিণত করেছে।

অবশ্যই দেখবেন: দিঘায় রথযাত্রায় ইতিহাস গড়লেন মমতা! জগন্নাথদেবকে দিলেন এই মূল্যবান উপহার