বকেয়া DA নিয়ে বড় ধাক্কা! রাজ্য সরকার এবার হাত তুলে নিতে পারে? আতঙ্কে সরকারি কর্মীরা

রাজ্য সরকারি কর্মীদের বহু প্রতীক্ষিত বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance – DA) মামলায় ২৭ জুন ছিল সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারিত সময়সীমার শেষ দিন। কিন্তু সেই ডেডলাইনে বকেয়া ডিএ পরিশোধ না করে, রাজ্য সরকার আরও ছয় মাস সময় চেয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। এই ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সরকারি ...

Published on:

DA

রাজ্য সরকারি কর্মীদের বহু প্রতীক্ষিত বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance – DA) মামলায় ২৭ জুন ছিল সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারিত সময়সীমার শেষ দিন। কিন্তু সেই ডেডলাইনে বকেয়া ডিএ পরিশোধ না করে, রাজ্য সরকার আরও ছয় মাস সময় চেয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। এই ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সরকারি কর্মচারীরা একে দেখছেন “ইচ্ছাকৃত সময় নষ্টের কৌশল” হিসেবে, আর বিরোধীরা এই ঘটনাকে সরকারি ব্যর্থতা ও আদালত অবমাননার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছেন।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

সুপ্রিম কোর্টের আদেশ: ডিএ-র ২৫ শতাংশ মেটাতে হবে| Supreme Court DA Verdict West Bengal

২০২৫ সালের ১৬ মে, বিচারপতি সঞ্জয় কারলসন্দীপ মেহতার বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়:

বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে Join Now
  • ৩ মাসের মধ্যে (৬ সপ্তাহ) বকেয়া মহার্ঘ ভাতার ২৫% মেটাতে হবে।
  • এই নির্দেশ প্রযোজ্য ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে জমা হওয়া ডিএ-র উপর।

এই নির্দেশ অনুযায়ী ২৭ জুন ছিল ডিএ পরিশোধের ডেডলাইন। কিন্তু সেই নির্ধারিত দিনে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে ছয় মাস সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে।

গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন Join Now

মামলার প্রেক্ষাপট: কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ডিএ-র বিশাল পার্থক্য

বর্তমান ডিএ পরিস্থিতি:

বিষয়কেন্দ্রীয় কর্মচারীরাজ্য সরকারি কর্মচারী
মহার্ঘ ভাতা (২০২৫ সালের এপ্রিল)৫৫%১৮%
ব্যবধান৩৭% কম

মামলার ইতিহাস:

  • ২০২২: কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যকে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
  • রাজ্য সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে।
  • ২০২৫: সুপ্রিম কোর্ট ২৫% বকেয়া ডিএ মেটানোর অন্তর্বর্তী আদেশ দেয়।

অবশ্যই দেখবেন: জুলাই মাস শুরু হতেই সুখবর! সরকারি কর্মীদের জন্য ঘোষণা হাফ ডে ছুটি

রাজ্যের যুক্তি: অর্থনৈতিক সঙ্কট

রাজ্য সরকারের সিনিয়র আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি আদালতে জানান:

“পুরো ডিএ মেটাতে হলে রাজ্যের ওপর ৪১,০০০ কোটি টাকা বোঝা আসবে। ২৫% পরিশোধের জন্যও প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।”

রাজ্যের বক্তব্য:

  • কেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্পের অর্থছাড় বন্ধ করেছে।
  • বাজেট ঘাটতি ও রাজস্ব কম থাকায় সময়সীমা মেনে ডিএ পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।
  • আর্থিক ও প্রশাসনিক প্রস্তুতির জন্য ছয় মাস সময় প্রয়োজন।

সরকারি কর্মচারীদের প্রতিক্রিয়া: “এই সময় চাওয়া সময় নষ্টের কৌশল”

সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতা ভাস্কর ঘোষ বলেন:

“এটা আমাদের অধিকার। ৯১৮ দিন ধরে আন্দোলনের পর আদালত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এখন নতুন করে ছয় মাস সময় চাওয়া সরকারের কৌশলী পালানো ছাড়া কিছুই নয়।”

সরকারি কর্মচারীদের দাবিগুলি:

  • ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত না এলে নবান্ন অভিযানের ডাক
  • আদালতের আদেশ অমান্য করলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিরোধীদের তোপ: আদালত অবমাননা ও রাজনৈতিক চাতুর্য

শুভেন্দু অধিকারী (বিরোধী দলনেতা):

“রাজ্য সরকার আদালতের নির্দেশ মানতেই চায় না। ডিএ-এর টাকা কর্মচারীদের না দিয়ে উৎসব, অনুষ্ঠান আর বিজ্ঞাপনে খরচ করছে।”

অমিত মালবিয়া (BJP নেতা):

“শীর্ষ আদালতের রায় কর্মচারীদের জয়ের প্রতীক। কিন্তু রাজ্য সরকার বারবার দেরি করছে। এটা শুধুই রাজনৈতিক অযোগ্যতা।”

বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য (সিনিয়র আইনজীবী):

“রাজ্যের যুক্তি টিকবে না। আদালত অবমাননা এখন অনিবার্য। সরকারের কাছে অপচয়ের জন্য টাকা থাকলেও কর্মচারীদের জন্য নেই?”

আদালত অবমাননার সম্ভাবনা

কী হতে পারে পরবর্তী পর্যায়ে?

পরিস্থিতিসম্ভাব্য ফলাফল
সুপ্রিম কোর্ট সময়ের আবেদন খারিজ করেআদালত অবমাননার মামলা শুরু হতে পারে
রাজ্য সরকার নতুন সময় পায়কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়বে
মুখ্যসচিব/অর্থসচিবের বিরুদ্ধে নোটিশব্যক্তিগতভাবে শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন
ডিএ পরিশোধে বিলম্ব চলতে থাকেগণআন্দোলন, বৃহৎ মিছিল ও ধর্মঘটের আশঙ্কা

অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ:

  • রাজ্যের বক্তব্য: ২৫% বকেয়া মেটাতে প্রয়োজন ₹১০,০০০ কোটি
  • রাজ্য বাজেট ২০২৫-২৬: ₹৩.৮ লক্ষ কোটি
  • মোট ব্যয়ের তুলনায় ডিএ মেটানোর অর্থ কেবল ২.৬%  অর্থাৎ, এই পরিমাণ খরচ রাজ্য সরকারের জন্য অসম্ভব নয়, যদি সদিচ্ছা থাকে।

সরকার পালাচ্ছে, আদালত এগোচ্ছে, কর্মীরা জেগে উঠছে

রাজ্য সরকারের তরফে বারবার দেরি ও নতুন সময় চাওয়ার প্রবণতা এখন সন্দেহের উদ্রেক করছে। আদালত যেখানে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সেখানে নির্ধারিত দিনে ডিএ না মিটিয়ে সময় চাওয়া শুধু আইন অবমাননা নয়, বরং কর্মচারী স্বার্থের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। আগস্টে পরবর্তী শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট শুধুমাত্র ডিএ পরিশোধ নয়, বরং এটি মৌলিক অধিকার কিনা — তা নিয়েও রায় দেবে। এই রায় শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের জন্য নজির স্থাপনকারী হতে চলেছে।

অবশ্যই দেখবেন: ডেডলাইনের শেষ দিনে অবশেষে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য! বকেয়া DA কবে মেটাবে সরকার?