আজ ঘরেই থাকুন! গঙ্গার জলে ভাসছে শহর, সতর্ক করলেন ফিরহাদ হাকিম

Firhad Hakim: কলকাতা মানেই পুজোর আগে আনন্দ, রঙ, আলো আর উৎসবের আবহ। কিন্তু এবছর সেই ছবির মধ্যে আচমকা ধাক্কা দিল টানা বৃষ্টি। নিম্নচাপের জেরে শহর কলকাতা কার্যত জলমগ্ন। কোথাও কোমরসমান জল, কোথাও হাঁটুজল। রাতভর বৃষ্টির পর সকালেই দেখা গেল রাস্তাঘাট, অলিগলি, এমনকি সল্টলেকের মতো আধুনিক এলাকাও পানির তলায় চলে গেছে। ...

Updated on:

Firhad Hakim

Firhad Hakim: কলকাতা মানেই পুজোর আগে আনন্দ, রঙ, আলো আর উৎসবের আবহ। কিন্তু এবছর সেই ছবির মধ্যে আচমকা ধাক্কা দিল টানা বৃষ্টি। নিম্নচাপের জেরে শহর কলকাতা কার্যত জলমগ্ন। কোথাও কোমরসমান জল, কোথাও হাঁটুজল। রাতভর বৃষ্টির পর সকালেই দেখা গেল রাস্তাঘাট, অলিগলি, এমনকি সল্টলেকের মতো আধুনিক এলাকাও পানির তলায় চলে গেছে। অনেক বাড়ির একতলায় জল ঢুকে গিয়েছে, বহু পরিবার সমস্যায় পড়েছেন।

ফিরহাদ হাকিমের বার্তা শহরবাসীর উদ্দেশ্যে

পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুমে পৌঁছেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেন, “এত বছরে এরকম মেঘভাঙা বৃষ্টি আমি দেখিনি। মাত্র পাঁচ-ছ’ ঘণ্টায় ৩০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এটা সত্যিই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি।” তিনি আরও জানান, সমুদ্র তখন উত্তাল এবং নদী ধারণক্ষমতার সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। শহরের সঙ্গে যুক্ত ক্যানালগুলোও জলে ভরে গিয়েছে। পুরসভার পক্ষ থেকে লক গেট খুলে জল বের করার চেষ্টা করা হলেও জল ফের বাউন্স ব্যাক করছে। তাই শহরবাসীকে তিনি অনুরোধ করেছেন যতটা সম্ভব ঘরে থাকতে, কারণ এ ধরনের জল জমলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) আশ্বাস দিয়েছেন যে পোর্টেবল পাম্প বসিয়ে দ্রুত জল বের করার চেষ্টা চলছে এবং পুরসভা পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর খবর, আতঙ্কে নাগরিকরা

জল জমা হলেই বড় বিপদ হয়ে দাঁড়ায় বিদ্যুতের তার। বহু জায়গায় তার ছিঁড়ে জলে পড়েছিল। তার জেরেই দুঃখজনকভাবে শহরে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। নেতাজি নগর, বেনিয়াপুকুর, গড়িয়াহাট, কালিকাপুর, মোমিনপুর থেকে শুরু করে হরিদেবপুর—শহরের নানা প্রান্ত থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এমন দুর্ঘটনা শহরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বাড়িয়েছে। অনেক রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ। উৎসবের মুখে এমন ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে সবার।

পুজোর প্রস্তুতিতে জলীয় ধাক্কা

বৃষ্টির দাপটে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, পুজোর প্রস্তুতিতেও ভাঁটা পড়েছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতা—প্রায় সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে প্যান্ডেলে জল ঢুকে গিয়েছে। কোথাও নতুন করে রঙ করা কাপড় ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে, কোথাও মণ্ডপের সাজসজ্জা জলে ভেসে গিয়েছে। রবিবার বোধনের আগে এই পরিস্থিতি আয়োজকদের চিন্তায় ফেলেছে।

সল্টলেক, বালিগঞ্জ, শ্যামবাজার কিংবা যাদবপুর—প্রায় সব জায়গারই ছবি এক। রঙিন কাপড়ের স্টল, বড় বড় বিজ্ঞাপনের গেট ভেঙে পড়েছে জল আর বাতাসের দাপটে। মণ্ডপে কাজ করা শিল্পীদের অনেকেই জানিয়েছেন, তারা নতুন করে আবার প্রস্তুতি শুরু করতে বাধ্য হচ্ছেন।

পুরসভার তৎপরতা ও ভবিষ্যতের চিন্তা

কলকাতা পুরসভা অবশ্য দ্রুততার সঙ্গে কাজে নেমেছে। বিভিন্ন জায়গায় পাম্প বসিয়ে জল নামানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু এত অল্প সময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টি নামার কারণে সমস্যার সমাধান ততটা সহজ নয়। মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) বলেছেন, “আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু এমন প্রাকৃতিক পরিস্থিতি সামলানো সত্যিই কঠিন। তবুও আমাদের কর্মীরা রাতদিন এক করে কাজ করছেন।”

এমন পরিস্থিতি সামনে আসায় শহরবাসীর মধ্যে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—প্রতি বছর বৃষ্টির সময় জল জমার সমস্যার স্থায়ী সমাধান কবে হবে? ক্যানাল পরিষ্কার রাখা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ—সবটাই এখন শহরের অন্যতম দাবি।

নাগরিকদের দুশ্চিন্তা আর অপেক্ষা

শহরের সাধারণ মানুষ এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় আছেন দুর্গাপুজো নিয়েই। উৎসবের আগে মণ্ডপের সাজসজ্জা, নতুন কাপড়ের বাজার, আলো আর শিল্পকলার আয়োজন সবটাই জলে ভেসে গেছে। অনেকে আবার উদ্বিগ্ন বাড়ির ভেতরের পরিস্থিতি নিয়ে। একতলায় জল ঢুকে আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে, শিশু ও বয়স্কদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

তবে শহরবাসী আশায় রয়েছেন যে আবহাওয়া ধীরে ধীরে ভালো হবে এবং পুরসভার তরফে নেওয়া পদক্ষেপে সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে।

কলকাতা সবসময়ই লড়াকু। বৃষ্টি বা ঝড়—সব কিছুর পরেও শহরটা আবার ঘুরে দাঁড়ায়। এবছরও হয়তো তার ব্যতিক্রম হবে না। পুজোর আনন্দে শহর আবার রঙে ভরে উঠবে। তবে এই বিপর্যয় আমাদের আরও একবার মনে করিয়ে দিল, শহরের পরিকাঠামো উন্নত করা এখন সময়ের দাবি।

Disclaimer

এই প্রতিবেদনটি সাধারণ তথ্যের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে। এখানে উল্লেখিত তথ্য, মন্তব্য ও বিশ্লেষণ কোনও সরকারি নোটিশ বা অফিসিয়াল ঘোষণার বিকল্প নয়। পাঠকদের অনুরোধ করা হচ্ছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারি দপ্তরের নির্দেশিকা অনুসরণ করুন।

অবশ্যই দেখবেন: Amul Mother Dairy GST Cut 2025: দুধ-ঘি থেকে পনির-আইসক্রিম! সব কিছুর দাম কমেছে, কতটা সস্তা হবে জেনে নিন

Anamika Sen

দেশ-বিদেশের খবর, অর্থনীতি, জ্যোতিষ, চাকরি সংক্রান্ত তথ্য এবং টেকনোলজির জগৎ—এই সব বিষয় নিয়ে লেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
WhatsApp Icon