উচ্চ রক্তচাপ কী? (what is high blood pressure?)
উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure), বা হাইপারটেনশন, এক ধরনের শারীরিক অবস্থা যেখানে আমাদের রক্তনালির ভেতর চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে যায়। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য আদর্শ রক্তচাপ ধরা হয় ১২০/৮০ mmHg। কিন্তু যদি সিস্টোলিক প্রেসার (উপরের সংখ্যা) ১৩০ কিংবা তার বেশি হয় এবং ডায়াস্টোলিক প্রেসার (নিচের সংখ্যা) ৮০ বা তার বেশি ওঠে, তাহলে তা উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে বিবেচিত হয়।
এই অসুস্থতাটি অনেকেই বুঝতে পারেন না, কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত কোনও উপসর্গ থাকে না—তাই একে ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়। কিন্তু যদি সময়মতো নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তাহলে তা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি বিকল হওয়া বা চোখের সমস্যার মতো গুরুতর অসুখ ডেকে আনতে পারে। তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

উচ্চ রক্তচাপের প্রকারভেদ (Types of high blood pressure)
প্রাথমিক (Primary) হাইপারটেনশন:
এই ধরনের উচ্চ রক্তচাপকে (High Blood Pressure) “প্রাইমারি” বা “প্রধান উচ্চ রক্তচাপ” (Primary Hypertension) বলা হয়। এটি সাধারণত ধীরে ধীরে বিকশিত হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণে ঘটে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ৯০-৯৫% ক্ষেত্রে এর নির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
এটি এমন এক সমস্যা যা জিনগত কারণ, বয়স, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা, মানসিক চাপ ও স্থূলতার মতো নানা বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। যদিও এটি তৎক্ষণাৎ কোনো লক্ষণ সৃষ্টি না করলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়, কিডনি এবং রক্তনালির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
✅ তাই এই ধরনের উচ্চ রক্তচাপকে (High Blood Pressure) )হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা, পরিমিত লবণ সেবন, শারীরিক ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং মানসিক চাপ কমানো—এই অভ্যাসগুলো গড়ে তোলাই হলো প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি।
সেকেন্ডারি (Secondary) হাইপারটেনশন:
এই ধরনের উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure) সাধারণত কোনও নির্দিষ্ট শারীরিক সমস্যা বা রোগের কারণে হয়। যেমন—থাইরয়েডের গন্ডগোল, কিডনির অসুখ, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির সমস্যা কিংবা কিছু বিশেষ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। একে বলা হয় “সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন” বা গৌণ উচ্চ রক্তচাপ।
এই অবস্থায় মূল সমস্যাটিকে চিহ্নিত করে চিকিৎসা শুরু করা খুব জরুরি, নইলে রক্তচাপ (High Blood Pressure) নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
Read More: Heart Attack এ রুখে দিন ছোট কিছু অভ্যাসে! UC Davis Health জানাচ্ছে হৃদরোগ ঠেকানোর ৮ সহজ উপায়!

উচ্চ রক্তচাপে জিনগত বা বংশগত কারণ for causes high blood pressure
যদি আপনার পরিবারে আগে থেকে কারো উচ্চ রক্তচাপের (High Blood Pressure) সমস্যা থাকে, তবে আপনি নিজেও এই ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন। কারণ অনেক সময় আমাদের জিনেই এমন কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, যা রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি করে।
হ্যাঁ, বংশগত উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure) পুরোপুরি ঠেকানো না গেলেও, তা সময়মতো বুঝে নিয়ম মেনে চললে একেবারে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সঠিক জীবনযাপন, সুষম খাদ্যাভ্যাস আর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা—এই কয়েকটি অভ্যাসই হতে পারে আপনার সবচেয়ে বড় সুরক্ষা।
উচ্চ রক্তচাপে জীবনধারার প্রভাব (Lifestyle effect on high blood pressure)
খাদ্যাভ্যাস
• খুব বেশি লবণ খেলে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা সরাসরি রক্তচাপ বাড়ানোর জন্য দায়ী।
• চিপস, প্রক্রিয়াজাত মাংস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস বা ফ্রোজেন খাবারের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবারে লুকিয়ে থাকে অনেক বেশি সোডিয়াম, অতিরিক্ত চর্বি ও চিনি—যা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।
ব্যায়ামের অভাব
যদি আপনি নিয়মিত শরীরচর্চা না করেন, তাহলে রক্তনালিগুলো ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে যায় এবং নমনীয়তা হারায়। এর ফলে হৃদপিন্ডকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয়, আর সেখান থেকেই ধীরে ধীরে রক্তচাপ বেড়ে যায়।
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
যখন আপনি চাপ বা উদ্বেগে থাকেন, তখন শরীর থেকে কর্টিসল আর অ্যাড্রেনালিন নামে দুইটি স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনগুলো হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে তোলে এবং রক্তচাপও বেড়ে যায়। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপ থাকলে রক্তচাপ (High Blood Pressure) বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটাই বাড়ে।
ধূমপান ও মদ্যপান (Smoking and Drinking reason for high blood Pressure)
ধূমপান উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure) বৃদ্ধির এক প্রধান কারণ। সিগারেটের মধ্যে থাকা নিকোটিন ধমনীকে সঙ্কুচিত করে দেয়, যার ফলে রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যায়। যদি কেউ নিয়মিত ধূমপান করেন, তাহলে ধমনীগুলি স্থায়ীভাবে সরু হয়ে যেতে পারে। এর ফলেই ধীরে ধীরে উচ্চ রক্তচাপ স্থায়ী রূপ নিতে পারে, যা পরবর্তীতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
অতিরিক্ত মদ্যপান শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। এটি সরাসরি হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতাকে ব্যাহত করে এবং লিভারের কাজের উপরও প্রভাব ফেলে। এর ফলে শরীরে সোডিয়াম ও তরলের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, যা রক্তচাপ বাড়ার একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নিয়মিত ও অতিরিক্ত মদ্যপান করলে উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure) স্থায়ী সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে। তাই সতর্ক থাকা জরুরি।
Read More: যন্ত্রণা কোমর ব্যথা বা বমি ভাব মানেই হতে পারে ‘কিডনি স্টোন’ (Kidney Stone), চিনে নিন লক্ষণগুলি!
অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা
যখন শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে যায়, তখন হৃদপিণ্ডকে রক্ত পাম্প করতে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। এই অতিরিক্ত চাপ থেকেই রক্তচাপ ধীরে ধীরে বেড়ে যায়। স্থূলতা শুধু উচ্চ রক্তচাপই (High Blood Pressure) নয়, বরং ইনসুলিন রেজিস্টেন্স, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে। এই সবকিছু মিলেই রক্তচাপকে আরও অনিয়ন্ত্রিত করে তোলে। তাই সুস্থ থাকতে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি।
যদি আপনার BMI (Body Mass Index) ২৫-এর বেশি হয়, তাহলে আপনি ওভারওয়েট হিসেবে ধরা পড়েন। আর যদি এই মান ৩০ ছাড়িয়ে যায়, তখন সেটা স্পষ্টভাবে স্থূলতার ইঙ্গিত দেয়। এই ধরনের শরীরের ওজন ভারসাম্য হারালে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই BMI নিয়ন্ত্রণে রাখা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
নিদ্রাহীনতা ও ঘুমের সমস্যা
যদি পর্যাপ্ত ঘুম না হয়, তাহলে শরীরে স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়, যা সরাসরি রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। শুধু তাই নয়, ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ নামের একধরনের ঘুমের সমস্যা থেকেও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
সাধারণভাবে, ঘুমের সময় শরীর নিজে থেকেই রক্তচাপ কমিয়ে দেয়। কিন্তু যারা প্রতিদিন রাতে মাত্র ৫-৬ ঘণ্টা বা তার কম ঘুমান, তাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের প্রবণতা অনেক বেশি দেখা যায়। তাই সুস্থ হৃদয়ের জন্য পর্যাপ্ত ও গুণগত ঘুম অত্যন্ত জরুরি।
হরমোনজনিত সমস্যা
কিছু কিছু হরমোনের ভারসাম্য যদি বিঘ্নিত হয়, তাহলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—
• থাইরয়েডের সমস্যা: শরীরে থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে বা অতিরিক্ত হয়ে গেলে রক্তচাপে প্রভাব পড়ে।
• কুশিং সিনড্রোম: এই অবস্থায় অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি অতিরিক্ত কর্টিসল তৈরি করে, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে।
• অ্যালডোস্টেরনের ভারসাম্য হারানো: কিডনি যদি বেশি পরিমাণে সোডিয়াম ধরে রাখে, তাহলে শরীরে জল জমে যায় এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়।
এই ধরণের হরমোনজনিত সমস্যা থাকলে, নিয়মিত চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণ জরুরি।
Read More: Kidney Stone? জেনে নিন কিডনিতে স্টোনের ৮টি স্পষ্ট লক্ষণ!
বয়স ও লিঙ্গভিত্তিক প্রভাব
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রক্তনালির নমনীয়তা বা স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়, ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে শরীরের সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণভাবে দেখা যায়—
• ৪০ বছর পার করার পর রক্তচাপ বাড়ার আশঙ্কা ধীরে ধীরে বেড়ে যায়।
• মহিলাদের ক্ষেত্রে, মেনোপজের পরে শরীরে যে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে, তা রক্তচাপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দেয়।
এই কারণে বয়স বাড়ার সাথে নিয়মিত রক্তচাপ মাপা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা অত্যন্ত জরুরি।
উচ্চ রক্তচাপে ঔষধ ও রাসায়নিক প্রভাব
- কিছু ওষুধ আছে যা অজান্তেই রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমন—
- • জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল (Birth Control Pills): এগুলোর মধ্যে থাকা হরমোন রক্তচাপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ায়।
• স্টেরয়েড (Steroids): দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারে শরীরে জল ও সোডিয়াম ধরে রাখে, যা রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে।
• কনজেশন দূরীকরণ ওষুধ (Decongestants): সর্দি-কাশির সময় নেওয়া কিছু ওষুধে থাকা উপাদান রক্তনালিকে সংকুচিত করে, ফলে রক্তচাপ বাড়তে পারে। - ওজন কমানোর ড্রাগ (Weight Loss Medication): অনেক ওজন কমানোর ওষুধে ক্যাফেইন বা সিম্প্যাথোমিমেটিক উপাদান থাকে, যা হৃদস্পন্দন বাড়ায় এবং রক্তচাপ হঠাৎ করে বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে যাঁরা আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাঁদের জন্য এই ওষুধগুলি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ: যেমন – চা, কফি, এনার্জি ড্রিঙ্ক বা কোল্ড ড্রিঙ্কে থাকা ক্যাফেইন রক্তচাপ সাময়িকভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে যদি আপনি ক্যাফেইনের প্রতি সংবেদনশীল হন, তাহলে এটি আরও বেশি প্রভাব ফেলতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপে মৌসুমি ও পরিবেশগত কারণ
• গরমকালে শরীর ঘেমে প্রচুর পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। এই ডিহাইড্রেশনের ফলে শরীরের রক্তচাপ কখনও কমে যায়, আবার কখনও হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে।
• পরিবেশে দূষণের মাত্রা বেশি থাকলে এবং অতিরিক্ত গরম বা হিট স্ট্রেসের কারণে শরীরের ওপর চাপ বাড়ে, যা সরাসরি রক্তচাপের উপর প্রভাব ফেলে।
• যারা পাহাড়ি অঞ্চলে থাকেন বা যান, তাঁদের ক্ষেত্রে অক্সিজেনের স্বল্পতার কারণে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। কারণ শরীর তখন অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হয় পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে।
নীরব ঘাতক: লক্ষণ ছাড়াও হাই ব্লাড প্রেসার
বেশিরভাগ সময় উচ্চ রক্তচাপ নীরবে শরীরের ক্ষতি করে, কারণ এর তেমন কোনও স্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায় না—যতক্ষণ না তা বড় কোনও সমস্যার রূপ নেয়। তবে কিছু সতর্কবার্তা বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন:
• ঘন ঘন বা তীব্র মাথাব্যথা
• চোখে ঝাপসা দেখা
• হঠাৎ মাথা ঘোরানো বা ভারমুক্ত লাগা
• হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া বা বুক ধড়ফড় করা
এই উপসর্গগুলোর যেকোনো একটি দেখা দিলেই, দেরি না করে রক্তচাপ মেপে নেওয়া ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ দ্রুত শনাক্তকরণই হতে পারে ভবিষ্যতের বড় জটিলতা এড়ানোর চাবিকাঠি।
Read More: গ্রীষ্মে শুষ্ক চোখ প্রতিরোধের ৭টি উপায়, সতর্ক না হলে বিপদ
বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপের চিত্র
সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, বাংলাদেশে প্রতি তিনজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। চিন্তার বিষয় হলো—এদের অনেকেই জানেন না যে তারা এই সমস্যায় আক্রান্ত।
গবেষণা আরও জানাচ্ছে, শুধু শহরের মানুষই নন, গ্রামাঞ্চলেও দ্রুত বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপের প্রভাব। যেভাবে জীবনযাত্রার ধরণ ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে, তাতে শহর-গ্রাম নির্বিশেষে এই সমস্যা এখন বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
📊 তথ্যসূত্র:

উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের কৌশল
খাদ্য ও পানীয়
• লবণ খাওয়া কমান: দৈনিক ৫ গ্রাম বা তার কম নুন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
• বেশি করে ফল ও শাকসবজি খান: বিশেষ করে কলা, বিট আর ব্রকোলি – এগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে দারুন সাহায্য করে।
• পর্যাপ্ত পানি পান করুন: শরীর হাইড্রেটেড থাকলে রক্তচাপও স্বাভাবিক থাকে।
নিয়মিত ব্যায়াম
• প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা সাইক্লিং করার অভ্যাস করুন — এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে দারুন উপকারী।
• নিয়মিত যোগব্যায়াম ও ধ্যান (মেডিটেশন) করলে মন শান্ত থাকে, আর রক্তচাপও স্বাভাবিক থাকে।
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন
• মানসিক চাপ কমাতে প্রতিদিন কিছুক্ষণ ধ্যান (মেডিটেশন) করুন — এতে মন শান্ত থাকে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
• প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমিয়ে এবং ঘুম পূর্ণ করে সঠিক ঘুম নিশ্চিত করুন।
• যদি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগে ভোগেন, তবে দ্বিধা না করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
উচ্চ রক্তচাপে কখন ডাক্তার দেখানো উচিত
- যদি নিয়মিত রক্তচাপ ১৩০/৮০ বা তার বেশি হয়।
- যদি উপসর্গ থাকে যেমন মাথা ঘোরা, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা।
- যদি পরিবারে উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস থাকে।
FAQs (প্রশ্নোত্তর)
১. উচ্চ রক্তচাপ কি নিরাময়যোগ্য?
না, তবে এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। জীবনধারা পরিবর্তন ও ওষুধের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
২. কি পরিমাণ লবণ গ্রহণ নিরাপদ?
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দিনে সর্বোচ্চ ৫ গ্রাম (১ চা চামচ) লবণ গ্রহণ নিরাপদ।
৩. কি ধরণের ব্যায়াম উপকারী?
হাঁটা, সাইক্লিং, যোগব্যায়াম, সাঁতার — সবই রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
৪. কি ধরনের খাদ্য এড়িয়ে চলা উচিত?
প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত লবণ, ফাস্টফুড, চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
৫. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কি ঘরোয়া উপায় আছে?
হ্যাঁ, নিয়মিত রসুন খাওয়া, ধ্যান, পর্যাপ্ত ঘুম এবং কলা খাওয়া উপকারী।
৬. উচ্চ রক্তচাপের জন্য কবে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি?
যদি রক্তচাপ বারবার ১৪০/৯০-এর উপরে থাকে বা উপসর্গ দেখা দেয়।
উপসংহার
উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure) এক ধরনের নীরব ঘাতক, যা চুপচাপই আমাদের শরীরের ক্ষতি করে চলে। কিন্তু সচেতনতা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন আর নিয়মিত রক্তচাপ মাপার মাধ্যমে এই রোগকে মোকাবেলা করা সম্পূর্ণ সম্ভব। তাই ভুলে যাবেন না, নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করানো আর ভালো অভ্যাসই আপনাকে সুস্থ ও দীর্ঘজীবী করে তুলবে।
📅 বিষয় | 🔗 লিংক/বিবরণ |
---|---|
🌤 আবহাওয়া আপডেট | ✅ প্রতিদিনের আবহাওয়ার খবর জানতে আমাদের ফলো করুন |
🔮 রাশিফল | ✅ দৈনিক রাশিফল ও জ্যোতিষশাস্ত্রভিত্তিক পরামর্শ |
💬 হোয়াটসঅ্যাপ | 👉 WhatsApp গ্রুপে যোগ দিন |
📢 টেলিগ্রাম | 👉 Telegram চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন |
📰 অন্যান্য আপডেট | ✅ View More |