বর্তমানে দক্ষিণবঙ্গের জনজীবন কার্যত নাজেহাল অবস্থার মুখোমুখি। একদিকে প্রবল তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে বর্ষার অনুপস্থিতি মিলিয়ে কলকাতা সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গ রীতিমতো শুকিয়ে কাঠ। যেখানে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি প্রবল বৃষ্টি ও বন্যার জেরে দুর্ভোগে রয়েছে, সেখানে দক্ষিণবঙ্গে দিনের পর দিন বাড়ছে তাপমাত্রা। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষের মুখে একটাই প্রশ্ন—বর্ষা কবে ঢুকবে দক্ষিণবঙ্গে (When will Monsoon enter South Bengal)? এই প্রশ্নের উত্তর দিতেই রইল এই বিশদ প্রতিবেদন।
দক্ষিণবঙ্গে আবহাওয়ার বর্তমান চিত্র
কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে গত কয়েকদিন ধরে গরমের তীব্রতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া দফতরের মতে, আগামী ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরও ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে। এরফলে ভ্যাপসা গরমে জনজীবনে চরম অসুবিধা তৈরি হবে। অনেক স্থানে তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছনোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। গরম ও ঘাম একসঙ্গে দুর্বিষহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে শহরাঞ্চল এবং মফস্বলে।
দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢুকবে কবে? (When Will Monsoon Enter South Bengal)
সাধারণভাবে দক্ষিণবঙ্গে প্রতি বছর ১০ জুন নাগাদ মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটে। তবে এবছর সেই নির্ধারিত সময়সীমা নিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার কোনো তাৎক্ষণিক আগমন লক্ষ করা যাচ্ছে না। অর্থাৎ, আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যেও দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা আসার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ফলে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের জন্য গরম আর কিছুদিন সহ্য করাই ভবিতব্য।
অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গে বর্ষা নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১০ দিন আগেই ঢুকে পড়েছে। সিকিম, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার—এইসব অঞ্চলে ইতিমধ্যেই ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে, এবং আরও কয়েকদিন তা চলবে বলেই পূর্বাভাস। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে মৌসুমী বায়ুর প্রবেশ কিছু প্রাকৃতিক কারণে ব্যাহত হচ্ছে।
অবশ্যই দেখবেন: বিদ্যুৎ বিল একেবারে শূন্য! প্রতি মাসে ১২৫ ইউনিট ফ্রি দেবে কেন্দ্র সরকার
মৌসুমি বায়ুর অগ্রগতিতে বাধা কী?
দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার আগমন বিলম্বিত হওয়ার পেছনে একাধিক কারণে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। তা নিচে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো—
১. হরিয়ানা ও আসামের উপর নিম্নচাপের সৃষ্টি
আবহাওয়া দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে হরিয়ানা এবং আসামের ওপর একটি শক্তিশালী নিম্নচাপ বলয় সক্রিয় রয়েছে। যার ফলে বৃষ্টির প্রধান কেন্দ্রস্থল সরে গিয়েছে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারত বরাবর।
২. পাকিস্তান সংলগ্ন অঞ্চলেও নিম্নচাপ
পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে একটি শক্তিশালী নিম্নচাপ বর্তমান, যার প্রভাব বিস্তার করছে পশ্চিম ও উত্তর ভারতের দিকে। এর ফলে দক্ষিণবঙ্গে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ আটকে পড়ছে।
৩. পশ্চিমী ঝঞ্ঝার আগমন
জম্মু ও কাশ্মীর থেকে শুরু করে উত্তর ভারতে প্রবেশ করেছে একটি নতুন পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। এই ঝঞ্ঝার কারণে দক্ষিণবঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে।
আগামী দিনে দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া দফতরের মতে, দক্ষিণবঙ্গে আগামী কিছুদিন বৃষ্টির সম্ভাবনা কার্যত নেই। তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণও তুলনামূলকভাবে বেশি থাকার কারণে হিট ইনডেক্স (Heat Index) বা শরীর অনূভূত তাপমাত্রা আরও বেশি হবে। যা কর্মব্যস্ত মানুষদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করবে।
নিম্নলিখিত শহরগুলি গরমে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হতে পারে—
- কলকাতা
- হাওড়া
- হুগলি
- নদিয়া
- মুর্শিদাবাদ
- পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর
- বাঁকুড়া
- পুরুলিয়া
- বীরভূম
এইসব অঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির আশেপাশে ঘোরাফেরা করবে এবং রাতের তাপমাত্রাও স্বস্তিদায়ক থাকবে না।
উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা বাড়তে পারে
যদিও উত্তরবঙ্গে মাঝেমধ্যে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, তথাপি সেখানেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে রাতের দিকে খুব একটা ঠান্ডা অনুভব করা যাবে না। আবহাওয়াবিদদের মতে, বৃষ্টিপাত সত্ত্বেও তাপমাত্রার এই বৃদ্ধি ‘Climate Anomaly’-র ইঙ্গিত বহন করে।
অবশ্যই দেখবেন: বিদ্যুৎ বিল একেবারে শূন্য! প্রতি মাসে ১২৫ ইউনিট ফ্রি দেবে কেন্দ্র সরকার
বর্ষা কেন দেরিতে আসছে?
বর্ষা ঢোকার জন্য একাধিক অনুকূল আবহাওয়ার শর্ত পূরণ হওয়া দরকার। যেমন—
- বায়ু চাপের হ্রাস
- দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা
- নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হওয়া
- বঙ্গোপসাগরে সঞ্চারিত জলীয়বাষ্প
বর্তমানে এই উপাদানগুলির সামঞ্জস্য না থাকায় বর্ষার অগ্রগতি থমকে গেছে। ফলে দক্ষিণবঙ্গের বাসিন্দাদের এখনও বেশ কিছুদিন গরম সহ্য করতে হবে।
কী করবেন এই অতিরিক্ত গরমে?
- শরীরকে জলযুক্ত রাখতে দিনে অন্তত ৩-৪ লিটার জল পান করুন।
- খাওয়াদাওয়ায় ঠাণ্ডা ও জলীয় উপাদানযুক্ত খাবার রাখুন যেমন—লেবুর জল, ডাবের জল, তরমুজ ইত্যাদি।
- দিনে রোদে বের হলে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করুন এবং হালকা সুতির পোশাক পড়ুন।
- বয়স্ক ও শিশুদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে হিটস্ট্রোক এড়াতে।
দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার অপেক্ষা বাড়ছে
সার্বিকভাবে বলা যায়, দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার আগমন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি দেখে অনুমান করা হচ্ছে যে আগামী ১০-১২ জুনের পর বর্ষার আগমন সম্ভব হতে পারে দক্ষিণবঙ্গে। তার আগে শুধুমাত্র গরম ও ভ্যাপসা আবহাওয়া সামলানো ছাড়া উপায় নেই। আপাতত হাওয়া অফিসের প্রতিদিনের আপডেটের ওপর নজর রাখা এবং সতর্ক থাকা-ই একমাত্র পথ।
অবশ্যই দেখবেন: সেনার মাইনে বাড়ছে? কর্নেল সোফিয়া কুরেশির বেতনের হদিশ মিলল অবশেষে!
📅 বিষয় | 🔗 লিংক/বিবরণ |
---|---|
🌤 আবহাওয়া আপডেট | ✅ প্রতিদিনের আবহাওয়ার খবর জানতে আমাদের ফলো করুন |
🔮 রাশিফল | ✅ দৈনিক রাশিফল ও জ্যোতিষশাস্ত্রভিত্তিক পরামর্শ |
💬 হোয়াটসঅ্যাপ | 👉 WhatsApp গ্রুপে যোগ দিন |
📢 টেলিগ্রাম | 👉 Telegram চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন |
📰 অন্যান্য আপডেট | ✅ View More |