মা হতে চেয়েছিলেন, হলেন মাসি! কে এই গুণ্ডিচাদেবী? জগন্নাথ কেন থাকেন ৭ দিন তাঁর বাড়িতে?

Rath Yatra 2025: রথযাত্রা মানেই ভক্তি, উন্মাদনা আর আধ্যাত্মিকতার মহোৎসব। তবে এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক রহস্যময় নাম—গুণ্ডিচা দেবী। ওড়িশার পুরীতে অনুষ্ঠিত রথযাত্রার সময়, জগন্নাথদেব, তাঁর দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে নিয়ে সাত দিনের জন্য ‘মাসির বাড়ি’ অর্থাৎ গুণ্ডিচা মন্দিরে যান। সেখানেই তাঁরা অবস্থান করেন এক সপ্তাহ ধরে। কিন্তু ...

Published on:

Rath Yatra 2025

Rath Yatra 2025: রথযাত্রা মানেই ভক্তি, উন্মাদনা আর আধ্যাত্মিকতার মহোৎসব। তবে এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক রহস্যময় নাম—গুণ্ডিচা দেবী। ওড়িশার পুরীতে অনুষ্ঠিত রথযাত্রার সময়, জগন্নাথদেব, তাঁর দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে নিয়ে সাত দিনের জন্য ‘মাসির বাড়ি’ অর্থাৎ গুণ্ডিচা মন্দিরে যান। সেখানেই তাঁরা অবস্থান করেন এক সপ্তাহ ধরে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই গুণ্ডিচা কে? তিনি কি সত্যিই মাসি ছিলেন জগন্নাথের? না কি এর পেছনে রয়েছে এক গভীর, ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক কাহিনি? এই নিবন্ধে আমরা খুঁজে দেখব গুণ্ডিচা দেবীর পরিচয়, তাঁর সঙ্গে জগন্নাথদেবের সম্পর্ক এবং কেন প্রতি বছর প্রভু এই ‘মাসির বাড়ি’ সফর করেন, তার আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ও পুরাণসম্মত ব্যাখ্যা।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

গুণ্ডিচা দেবী কে ছিলেন? ইতিহাসের গোড়ার গল্প

গুণ্ডিচা নামটি জড়িয়ে আছে ওড়িশার রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের রাণীর সঙ্গে। প্রাচীন পুরাণ ও স্থানীয় লোককথা অনুযায়ী, যখন সমুদ্র থেকে দারুব্রহ্ম (দিব্য কাঠ) উদ্ধার করা হয়, তখন শুরু হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহ নির্মাণের প্রস্তুতি। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন তখন এক মহান শিল্পীর খোঁজ করেন, যিনি এই মূর্তিগুলি গড়ে তুলতে পারবেন। কিন্তু তখনও পাওয়া যাচ্ছিল না উপযুক্ত শিল্পী। একদিন একজন বৃদ্ধ রহস্যময় শিল্পী নিজেই রাজসভায় এসে জানান, তিনি এই মূর্তি গড়তে পারেন। তবে তাঁর একটি শর্ত ছিল—মূর্তি নির্মাণ চলাকালে কেউ যেন মন্দিরের দরজা না খোলে। ভিতরে থাকাকালীন দরজা বন্ধ থাকবে এবং তিনি নিজে থেকেই বাইরে এসে জানাবেন কাজ শেষ হয়েছে (Rath Yatra 2025)

বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে Join Now

গুণ্ডিচার উদ্বেগ এবং ঐতিহাসিক ভুল

রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন এই শর্ত মেনে নেন। কাজ শুরু হয়, দরজা বন্ধ করে শিল্পী ভিতরে প্রবেশ করেন। দিনের পর দিন কেটে যায়, কিন্তু ভিতর থেকে কোনও শব্দ, বার্তা কিংবা চিহ্ন পাওয়া যায় না। বাইরে রাজা ধৈর্য ধরলেও রানী গুণ্ডিচা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তার মনে প্রশ্ন—আসলে আদৌ কি ভিতরে কেউ আছে? কাজ হচ্ছে তো? গুণ্ডিচার আশঙ্কা যখন অসহনীয় হয়ে ওঠে, তিনি নিজেই দরজা খুলে দেখতে চান ভিতরে কী হচ্ছে। রাজাকে অনুরোধ করেন দরজা খোলার জন্য। অনেক অনুরোধ-বিনয়ের পর অবশেষে দরজা খোলা হয়। আর তখনই সামনে আসে সেই ইতিহাস গড়া মুহূর্ত—দেখা যায় তিনটি মূর্তি অর্ধসমাপ্ত। তাদের হাত-চোখ পুরোপুরি নির্মিত হয়নি।

গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন Join Now

অবশ্যই দেখবেন: দিঘায় প্রথমবার রথযাত্রা! কী প্রসাদ মিলবে ভক্তদের? দেখে নিন পুরো তালিকা

গুণ্ডিচার কান্না ও প্রার্থনা

এই দৃশ্য দেখে গুণ্ডিচা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি নিজেকে দোষ দেন—কারণ তাঁর জন্যই কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেল। ঠিক সেই সময় সেখানে উপস্থিত হন নারদমুনি। তিনি জানান, এইসবই প্রভু জগন্নাথের ইচ্ছা। প্রভু চেয়েছিলেন তাঁর মূর্তি যেন থাকে এমন—অসম্পূর্ণ, মানবিক রূপে। কারণ মানুষের জীবনেও সব কিছু পূর্ণতা পায় না। তখন গুণ্ডিচা, করজোড়ে প্রার্থনা করেন—প্রভু যেন একবার তাঁর সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন বা অন্তত তাঁর ঘরে এসে থাকেন। এই গভীর মাতৃসুলভ আবেদনে সাড়া দেন জগন্নাথ। তিনি বলেন, “যদিও আমি তোমার গর্ভে জন্ম নেব না, তবু প্রতি বছর আমি তোমার ঘরে আসব সাত দিনের জন্য। তোমার প্রার্থনার মান রাখব।”

অবশ্যই দেখবেন: জগন্নাথ দেবের কৃপায় ৪ রাশির ভাগ্য আজ থেকে বদলে যাবে! আজকের রাশিফল, ২৭ জুন

গুণ্ডিচা মন্দির: মাসির বাড়ি নাকি মাতৃঘর?

এই কাহিনির উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয় গুণ্ডিচা মন্দির, যা এখন পুরীর রথযাত্রার অন্যতম কেন্দ্র। এই মন্দিরকেই ‘মাসির বাড়ি’ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও, প্রকৃত অর্থে এটি জগন্নাথের মাতৃঘররূপে বিবেচিত। প্রতি বছর রথযাত্রার (Rath Yatra 2025) দিন তিন দেবতা রথে চেপে পৌঁছে যান এই গুণ্ডিচা মন্দিরে এবং সেখানেই তাঁরা থাকেন সাত দিন। এই সাত দিন গুণ্ডিচা মন্দির রূপ পায় এক মাতৃগৃহে, যেখানে প্রভু থাকেন সন্তানের মতো।

রথযাত্রা ও গুণ্ডিচার সম্পর্ক: এক মমতার বাঁধনে আবদ্ধ উৎসব

রথযাত্রা শুধুই এক ধর্মীয় আচার নয়। এটি আধ্যাত্মিক ও পারিবারিক সম্পর্কের গভীর প্রতীক। গুণ্ডিচা যেন মাতৃরূপে প্রতিভাত, যাঁর আহ্বানে প্রতি বছর ফিরে যান জগন্নাথ। এর মধ্যে লুকিয়ে আছে ভক্তি, মমতা ও মাতৃত্বের নিখুঁত সংজ্ঞা। এছাড়া পুরীর রথযাত্রা (Rath Yatra 2025) অনুষ্ঠানে গুণ্ডিচা মন্দিরে পৌঁছেই দেবতাদের রথ থেমে যায়। সাত দিন পর উল্টো রথ-এর মাধ্যমে তাঁরা ফিরে যান মূল মন্দিরে। গুণ্ডিচা দেবী প্রতীক হয়ে থাকেন সেই মায়ের, যিনি সন্তানদের আশ্রয় দেন, স্নেহ দেন, আবার বিদায় দেন যথা সময়ে।

পুরাণ, দর্শন ও মানবিকতা—সব একসাথে

এই কাহিনির মধ্যে শুধু পুরাণ নয়, আছে এক দার্শনিক বার্তা—পরিপূর্ণতাই সব নয়। অর্ধসমাপ্ততা, ত্রুটি এবং অনিশ্চয়তার মধ্যেও ঈশ্বরের বাস। গুণ্ডিচার মতো এক সাধারণ নারীর মধ্যে মাতৃরূপে ঈশ্বরের আবাহন হয়, এ এক অনন্য উপলব্ধি।

গুণ্ডিচা—ঈশ্বরের কাছে এক মায়ের মিনতি

গুণ্ডিচা দেবী আমাদের শেখান কীভাবে এক মায়ের আবেগ ও আস্থার মাধ্যমে ঈশ্বরকে বাঁধা যায় ভালবাসার সুতোয়। জগন্নাথদেবের রথযাত্রা শুধুমাত্র এক শোভাযাত্রা নয়—এ এক দার্শনিক-ধর্মীয় অনুশীলন, যেখানে ঈশ্বর নিজেই তাঁর ভক্তার কাছে যান, সন্তানের মতো আশ্রয় নেন মায়ের ঘরে। আজও যখন পুরীতে রথযাত্রা হয়, হাজার হাজার ভক্ত চোখে জল নিয়ে বলেন—“প্রভু এবারো এসো মাসির বাড়ি।” আর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফিরে আসেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা—গুণ্ডিচার ঘরে, এক মায়ের কোলেই (Rath Yatra 2025)