গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই রাজ্যের একাধিক জেলায় স্মার্ট মিটার (Smart Meter) নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। গৃহস্থালির বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানোর পর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল (High Electricity Bill) আসার অভিযোগে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বহু গ্রাহক। বনগাঁ, বারাসাত, হাওড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন, ডেপুটেশন, এবং পথ অবরোধের জেরে বিদ্যুৎ দপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আপাতত স্মার্ট মিটার বসানো বন্ধ রাখা হবে। এই সিদ্ধান্ত সাময়িক স্বস্তি দিলেও বিতর্কের শেষ এখনও হয়নি।
স্মার্ট মিটার নিয়ে বিতর্ক: কোথা থেকে শুরু?
স্মার্ট মিটার প্রকল্পটি (Smart Meter Project in Bengal) রাজ্য সরকারের তরফে আধুনিকীকরণের একটি উদ্যোগ হিসেবে শুরু হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল—
- বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা
- ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে বিলিং প্রক্রিয়া উন্নত করা
- গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার পর্যবেক্ষণের সুবিধা নিশ্চিত করা
তবে বাস্তবে এটি বাস্তবায়িত হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। গৃহস্থ বাড়িগুলিতে স্মার্ট মিটার বসানোর পরে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচের অভিযোগ উঠে এসেছে।
অবশ্যই দেখবেন: মা লক্ষ্মীর কৃপায় টাকা-পয়সায় ভরবে এই ৩ রাশির ঝুলি! আজকের রাশিফল, ১০ জুন
স্মার্ট মিটার কী? কীভাবে কাজ করে?
স্মার্ট মিটার (What is Smart Meter in Bengali) হলো একটি আধুনিক বৈদ্যুতিন যন্ত্র, যা বিদ্যুৎ ব্যবহার, ভোল্টেজ লেভেল এবং খরচের রেকর্ড রাখে। এই মিটারের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য:
- মিটারে থাকে একটি সিম কার্ড, যা তথ্য পাঠায় বিদ্যুৎ দপ্তরের কন্ট্রোল রুমে
- রিয়েল টাইমে বিদ্যুৎ খরচ পর্যবেক্ষণ সম্ভব
- মিটার দূর থেকেই চালু বা বন্ধ করা যায়
- Prepaid system-এর মতো কাজ করে: আগে রিচার্জ, পরে বিদ্যুৎ
- অনলাইন রিচার্জ ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণযোগ্য
তবে এই সুবিধাগুলির মধ্যেই রয়েছে কিছু গুরুতর অভিযোগ।
অবশ্যই দেখবেন: LIC দিচ্ছে মহিলাদের জন্য ২ লক্ষ টাকার সুবিধা! আবেদন করলেই মিলবে টাকা
গ্রাহকদের অভিযোগ: কেন ক্ষুব্ধ মানুষ?
রাজ্যের বহু গ্রাহক অভিযোগ করছেন যে—
- আগের মিটারের তুলনায় স্মার্ট মিটার লাগানোর পর বিদ্যুৎ খরচ দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেড়েছে
- অল্প সময়ের ব্যবধানে বিল হয়ে যাচ্ছে ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা
- রিচার্জ না থাকলে বিদ্যুৎ পরিষেবা কেটে যাচ্ছে, যা জরুরি পরিস্থিতিতে সমস্যা তৈরি করছে
- অনেকের বাড়িতে রাতে আচমকাই বিদ্যুৎ কেটে যাচ্ছে রিচার্জ না থাকায়
- Human error বা সিস্টেম ত্রুটির কারণে ভুল তথ্য উঠে আসছে অ্যাপে
অবশ্যই দেখবেন: চাকরি গেল, এবার টাকা পাওয়ার আশাও শেষ! হাইকোর্টের রায়ে মাথায় হাত গ্রুপ C-D কর্মীদের
বিশেষ অভিযোগ:
- সিনিয়র সিটিজেনরা এই ডিজিটাল ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না
- ইন্টারনেট সমস্যা থাকলে রিচার্জ বা তথ্য যাচাই করা যাচ্ছে না
- কন্ট্রোল রুমের ভুলে অনেক সময় বিল বেড়ে যাচ্ছে
রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ ও আন্দোলন
গত কয়েক সপ্তাহে একাধিক জেলা স্মার্ট মিটার বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে। কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা:
- বনগাঁ (Bongaon): জাতীয় সড়ক অবরোধ করে স্মার্ট মিটার বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ
- বারাসাত (Barasat): বিদ্যুৎ দপ্তরের সামনে সাধারণ মানুষ এবং অল বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি অ্যাসোসিয়েশনের আন্দোলন
- হাওড়া, নদীয়া, বীরভূম, মালদহ: বিভিন্ন এলাকায় গ্রাহকরা গণভাবে অভিযোগ জমা দিয়েছেন
এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই বিদ্যুৎ দপ্তর বিবৃতি প্রকাশ করে।
বিদ্যুৎ দপ্তরের সিদ্ধান্ত: আপাতত স্থগিত স্মার্ট মিটার বসানো
রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তর (West Bengal Power Department) থেকে একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে—
- বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস ও টেলিকম টাওয়ারে স্মার্ট মিটার বসানো সফল হয়েছে
- কিন্তু গৃহস্থালির ক্ষেত্রে “বিল সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ” আসায় আপাতত মিটার বসানো বন্ধ রাখা হচ্ছে
- সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে
এটা গ্রাহকদের জন্য একটি স্বস্তির খবর হলেও চূড়ান্ত সমাধান নয়।
স্মার্ট মিটারের সুবিধা বনাম বাস্তব চিত্র
স্মার্ট মিটার সুবিধা | বাস্তব সমস্যার চিত্র |
---|---|
রিয়েল টাইমে বিদ্যুৎ ব্যবহার জানা যায় | অতিরিক্ত বিল, হঠাৎ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন |
অনলাইন পেমেন্ট, রিচার্জ সিস্টেম | সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য জটিলতা |
দূর থেকে নিয়ন্ত্রণযোগ্য | ভুল তথ্য প্রদানে বিভ্রান্তি |
ডিজিটালাইজড বিলিং | অতিরিক্ত খরচের অভিযোগ |
রাজনীতির ময়দানে স্মার্ট মিটার বিতর্ক
এই স্মার্ট মিটার বিতর্ক নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতেও তোলপাড় শুরু হয়েছে।
- বিরোধী দলগুলি স্মার্ট মিটার বাতিলের দাবি তুলেছে বিধানসভায়
- ডেপুটেশন জমা দেওয়া হয়েছে জেলার বিভিন্ন বিদ্যুৎ অফিসে
- সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে দাবি তোলা হচ্ছে – “পুরনো মিটার ফিরিয়ে দাও”
বিশেষত ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার চাইছে যেন এই ইস্যু বড় রাজনৈতিক অস্ত্র না হয়ে ওঠে।
স্মার্ট মিটার বিতর্কের ভবিষ্যৎ
বিদ্যুৎ দপ্তর আপাতত স্মার্ট মিটার বসানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও এটি স্থায়ী সমাধান নয়। সরকারি তরফে ইতিমধ্যেই কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে—
- গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা
- টোল ফ্রি হেল্পলাইন চালু করা
- অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন
তবে গ্রাহকদের দাবি— আগের মিটার ফিরিয়ে দিতে হবে এবং অতিরিক্ত বিলের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
স্মার্ট মিটার বিতর্ক থেকে শিক্ষা
এই বিতর্ক থেকে সরকার ও বিদ্যুৎ দপ্তরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নেওয়া উচিত:
- প্রযুক্তিগত হাল পরিবর্তনের আগে পর্যাপ্ত সচেতনতা জরুরি
- গৃহস্থদের জন্য আলাদা সুবিধাজনক ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন
- বিকল্প বিলিং সিস্টেম রাখা উচিত— রিচার্জ ও পোস্টপেইড দুই-ই
- গ্রাহক অভিযোগ দ্রুত সমাধানযোগ্য হেল্পডেস্ক চালু করা দরকার
স্মার্ট মিটার বিতর্ক শুধুই একটি প্রযুক্তিগত সমস্যা নয়, এটি জনসচেতনতা, রাজনৈতিক অবস্থান এবং প্রশাসনিক দায়িত্বের প্রশ্ন। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ জরুরি হলেও তা যেন সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারণ না হয়, সেদিকে প্রশাসনের নজর রাখা জরুরি। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তে আপাতত কিছুটা স্বস্তি মিললেও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান দরকার যাতে ভবিষ্যতে এমন বিতর্ক আর না তৈরি হয়।
📅 বিষয় | 🔗 লিংক/বিবরণ |
---|---|
🌤 আবহাওয়া আপডেট | ✅ প্রতিদিনের আবহাওয়ার খবর জানতে আমাদের ফলো করুন |
🔮 রাশিফল | ✅ দৈনিক রাশিফল ও জ্যোতিষশাস্ত্রভিত্তিক পরামর্শ |
💬 হোয়াটসঅ্যাপ | 👉 WhatsApp গ্রুপে যোগ দিন |
📢 টেলিগ্রাম | 👉 Telegram চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন |
📰 অন্যান্য আপডেট | ✅ View More |